বোলপুর, 29 এপ্রিল : বোলপুরে ভোট দিয়ে সোজা চলে আসেন কাকুর (অনুব্রত মণ্ডলের) বাড়ি। সদ্য দল ছেড়ে BJP-তে যোগ দিয়েছেন কেষ্ট কাকুর ভাইপো (অনুপম হাজরা)। কাকুকে চুমু খাওয়া, অভিমান, কাকুর কান ভাঙানো, আড্ডা, অভিযোগ, আবদারে মেতে উঠলেন অনুপম । কম যান না কাকুও। বললেন, "দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ও যদি সাংসদ হতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব। একটু বোকামি করেছে।" রাজনীতি থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক- রাগ, অভিমান সবকিছু উঠে এল সাক্ষাৎকারে।
এতদিন পর দু'জন দুজনের সঙ্গে দেখা করলেন, কেমন লাগল ?
অনুব্রত মণ্ডল : ও বোলপুরের ছেলে। আমিও বোলপুরের। ওর বাবা আমার বন্ধু। খুব ভালো লোক ছিলেন। আর ভাইপোও(অনুপম) ভালো।
এখানে জোড়াফুল-পদ্মফুলের রাজনীতি নেই ?
অনুব্রত মণ্ডল : না ওটা ব্যাপার নয় । রাজনীতি যে যার ইচ্ছে মতো করতে পারে ।
আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্কের জন্যই অনুপম দল ছেড়েছে বলে বলা হয়, এই বিষয়ে কী বলবেন ?
অনুব্রত মণ্ডল : তবে ও একটু বোকামি করেছে। নাহলে কিন্তু ভোটে বাদ দিতাম না। হঠাৎ আমাকে না জিজ্ঞেস করে করল, নাহলে ওকেই প্রার্থী করতাম। আমি মুখ্যমন্ত্রীকেও বলেছিলাম। ও থাকলে আমার আপত্তি নেই। যাক যা হয়েছে হয়েছে, আবার ভোটের পর চলে আসবে। তবে এটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক। দু'জনের বাড়ি বোলপুরে। আমার মা যেদিন মারা যান ও খবর নিয়েছে। স্ত্রীর খবর নেয়।
আপনি বলেছিলেন আজ ভোট মিটলে BJP প্রার্থীরা আপনাকে ফোন করবে?
অনুব্রত মণ্ডল : না না আসলে আমাদের বোলপুরে একটি নিয়ম আছে। যে যার পার্টি করলেও নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা ভালো। যেমন রামবাবু (রামচন্দ্র ডোম) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। কেন যে উনি সরে গেলেন? উনি যদি ভোটে দাঁড়াতেন অনেক ভোট পেতেন।
অনুপম তুমি কী বলবে, এতদিন পর কাকার সঙ্গে দেখা হল?
অনুপম হাজরা : দেখুন, এটি একটি ব্যক্তিগত আবেগের সম্পর্ক। কয়েকদিন আগে জেঠিমা মারা গেলেন। 2014 সালে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে একটা সময় প্রচার শুরু করেছি। তিনি যখন মারা গেলেন, আমি তখন প্রচারে ব্যস্ত। পরে কেষ্টকাকু বলেছিলেন ভোট দিতে এলে দেখা করতে। তিনি না বললেও আমি আসতাম। দিনের শেষে সকলে মানুষ। আমার মনে হয়, রাজনীতির বাইরে একটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে যায়।
তাহলে কি এবার ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে ?
অনুপম হাজরা : দল পালটাবার পর মানে আমি BJP-তে যোগ দেওয়ার পর বরং যেটুকু ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা মিটে গেছে। আগে যখন তৃণমূলে ছিলাম, তখন এখানেই কয়েকজন ছিল যারা আমার সঙ্গে কাকুর সম্পর্ক খারাপ করার চেষ্টা করত। একজনই বরাবর চেষ্টা করত।
কাকুর সঙ্গে বিরোধিতা করতে গিয়ে কি কোথাও অনুশোচনা হয়েছে ?
অনুপম হাজরা : বিরোধিতার কোনও প্রশ্ন নেই। একই দল করতাম। আমার কথা যখন কাকুর কান পর্যন্ত পৌঁছাত তখন তার ভুল ব্যাখ্যা করা হত। আর যেটা অতীত, সেটা অতীত। যেটা হয়েছে সেটা তেল ঝাল মশলা মিশিয়ে কারোর কথা শুনে কাকু আমাকে ভুল বুঝেছে। তবে সেটা কাকু ঠিক করবেন। অনেক সময় হয় কী আমরা আবেগে পড়ে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এ কী বলছে ও কী বলছে সেই কথায় বিশ্বাস করে ফেলি। উনি বাবার বন্ধু। আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ির আট-দশ বছর আগে থেকেই উনি আমাকে চিনতেন।
বীরভূমে অনেক জায়াগায় আপনার লোকজন তৃণমূলের হাত মার খাচ্ছে। সেই বিষয়ে কী বলবেন ?
অনুপম হাজরা : (খানিকটা অস্বস্তি প্রকাশ করে) তো কী হয়েছে? আপনাদের কী সমস্যা বলুন? দেখুন একসময় দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি আমরা। ফলে সৌজন্যবোধ এক জায়গায়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক জায়গায় আর রাজনীতিতে মারপিট এক জায়াগায়।
কাকু বললেন আপনি যদি আগে বলতেন তাহলে আপনাকেই প্রার্থী করতেন। কোথাও কি খামতি থেকে গেল ?
অনুপম হাজরা : না অনুশোচনার কোনও ব্যাপার নেই। তবে বরাবর আমার কথাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই কাজটা করেছে। যাতে আমার সঙ্গে কাকুর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হয়। যেদিন ভোটে জিতি, গলায় রজনীগন্ধার মালা দিয়ে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিল । ওই ছবিটা পোস্ট হওয়ার পর এখানকার কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এইরে কাকু ভাইপোর সম্পর্ক ভালো হলে আমরা ছিটকে যাব। এটাও বলছি, এই বীরভূমে কেষ্টকাকুকে চুমু খেতাম আমি।
বীরভূমের শেষ কথা কেষ্ট মণ্ডল এটা মানবেন তো ?
অনুপম হাজরা : অবশ্যই মানি। কেন মানব না। তিনি বীরভূম জেলার পলিটিকাল গাইড। একজন অভিভাবকের মতো।
আপনার এই মন্তব্যে আপনার দলের কর্মীরা বিরাগভাজন হবেন না ?
অনুপম হাজরা : বিরাগভাজন কেন হবে ? তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। প্রত্যেক দলের কর্মীদের কিছু দায়িত্ব থাকে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এখানে একটা আবেগ ও দীর্ঘদিনের সম্পর্কের তাগিদে এসেছি। বড় ব্যাপার জেঠিমা মারা গেছেন। সেই কারণেও আসা। খবরটা জানতে পেরে আমাদের একটি মধুর দিনের ছবি পোস্ট করি। যদিও এই ফেসবুক পেজ থেকেই এতকিছু। আমি প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাকে ফেসবুক পোস্টের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এখন কি মধুর দিন নেই আর ?
অনুপম হাজরা : না না মাঝখানে একটু সমস্যা ছিল। প্রথমে মধুর দিন ছিল, তারপর একটু সমস্যা হয় আবার মধুর দিনের দিকে এগোচ্ছে।
নজরবন্দী নিয়ে কী বলবেন?
অনুপম হাজরা : সেটা নির্বাচন কমিশন জানে। আমি জানি না। এখানে কে অভিযোগ জানিয়েছে আমি বলতে পারব না। এখন আদর্শ আচরণ বিধি আছে, এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্যই করব না।
এবার প্রশ্ন অনুব্রত মণ্ডলকে।
ভাইপোকে জেতার আশীর্বাদ করলেন না কি ফিরে আসার কথা বললেন?
অনুব্রত মণ্ডল : দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কোনও মানুষ যদি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তাহলে তার মাথায় হাত দেওয়াটা অন্যায় নয়। ও ভোটে দাঁড়িয়েছে জেতার জন্য। ও যাদবপুরে কীভাবে চলবে সেটা ওর পলিসি। যার কপালে রাজযোগ লেখা থাকবে, তাকে কেউ হারাতে পারবে না।
আপনার সামনেই আপনার কান ভাঙানোর অভিযোগ তুলল কী বলবেন?
অনুব্রত মণ্ডল : ও ওর মতো করে বলছে। আমি আমার মতো করে বলছি। নিশ্চয়ই একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। অভিমানে ও তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছে। আমার এলাকার ছেলে আবার ফিরিয়ে নেব।
দলে ফিরিয়ে নেবেন?
অনুব্রত মণ্ডল : হ্যাঁ নিতেই পারি। ও যদি আবার সাংসদ হতে চায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব।
এরপরেই অনুপম বলে ওঠেন সময় বলবে। তবে আজ অন্য কারণে আসা।