বোলপুর, 24 ডিসেম্বর : অমর্ত্য সেন সহ অনেকেই বিশ্বভারতীর জমি দখল করে আছেন ৷ এই অভিযোগে সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ আজ এনিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বাংলার মনীষীদের অপমান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বুদ্ধিজীবীদের কাছে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের সম্মান বাঁচানোর জন্য আবেদন করেন ৷ তাঁর পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন ৷ আজ তিনি বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়রা রবীন্দ্রনাথের ছায়ার তলে, প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত করেছিলেন এই ইউনিভার্সটিকে ৷ খোলা আকাশও থাকবে, আমবনও থাকবে, পৌষ মেলাও থাকবে এবং খোলামেলা পরিবেশে পড়াশোনা হবে ৷ চিন, জাপান, বাংলাদেশ অনেক দেশই ওখানে কিছু না কিছু করেছে ৷ কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, কুকথা, অসত্য, অর্ধনগ্ন ভাষায় মনীষীদের আক্রমণ করা হচ্ছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ আমাকে আঘাত করতে করতে বাংলার মনীষীদেরও আঘাত করেছেন ৷ ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভেঙেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থানও পালটে দিয়েছেন ৷ আপনারা কি ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চান ? বাংলার ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চান ? বাংলাকে বাদ দিয়ে পৃথিবী চলে না ৷ তাই যাঁরা অপমান করেছেন তাঁদের ক্ষমা চাইতে হবে ৷ যদি ক্ষমা না চান, আমি বাংলার বুদ্ধিজীবীদের আবেদন করব, অমর্ত্যদার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে এই অসম্মানের হাত থেকে বাঁচান ৷ সকলে মিলে প্রতিবাদ করুন ৷ আমরাও বলছি, অমর্ত্য সেনকে কেন অসম্মান করা হল ? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান নিয়ে কেন অসম্মান করা হচ্ছে ? পৌষমেলা কেন বন্ধ হল সব জবাব চাই ৷ সব কৈফিয়ত নেব ৷ ’’
প্রসঙ্গত অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষিতিমোহন সেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খুব কাছের মানুষ ছিলেন । কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর তিনিই বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় উপাচার্য হয়েছিলেন । অমর্ত্য সেনের মা অমিতা সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য আশ্রম কন্যা । এমনকী অমর্ত্য নামটিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ । বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই শান্তিনিকেতনে "প্রতীচী" নামে বাড়িটি রয়েছে । এটি অমর্ত্য সেনের বাড়ি । আর এই বাড়ির সামনের দিকের কিছুটা জায়গা বিশ্বভারতীর বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ । আর অমর্ত্য সেন সেই জায়গা জবরদখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ । তবে শুধু অমর্ত্য সেন নন, বিশ্বভারতীর এক ডজনের বেশি প্লট বেআইনিভাবে দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ৷ সেই স্থানে রেঁস্তরা, বেসরকারি স্কুল, ও অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে বিশ্বভারতীর তরফে দাবি করা হয়েছে ৷ এই মর্মে বিশ্বভারতীর সম্পত্তি বিভাগের তরফে রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে ।
বিশ্বভারতীর এই অভিযোগকে ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠেছে শান্তিনিকেতনেই । খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই এর নিন্দা করেছেন । এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন ৷
আরও পড়ুন :- 'নো আমন্ত্রণ, নো নিমন্ত্রণ', বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী
এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি । বিশ্বভারতীর রেক্টর তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও এড়িয়ে গেছেন এই প্রসঙ্গ ৷ তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই ।"