দেউচা পাচামি (বীরভূম), 16 নভেম্বর: "জেলে গিয়ে পদ খুইয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ! জেল হেফাজতে রয়েছেন রাজ্য গ্রামোন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি তথা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ! তাহলে কোন ভরসায় এই সরকারকে কয়লা শিল্পের জন্য জমি দেব ?" প্রশ্ন তুলছেন বীরভূমের দেউচা পাচামির আদিবাসী মানুষজন ৷ বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীর দিন থেকে নতুন করে খনিবিরোধী আন্দোলনে ডাক দিয়েছেন তাঁরা ৷ ফলে আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রস্তাবিত খোলা মুখ কয়লা খনি (Deucha Pachami Coal Block) প্রকল্পের রূপায়ন এখন কার্যত বিশ বাঁও জলে ৷ কারণ, এই অঞ্চলে খোলা মুখ কয়লা খনি করতে হলে কমপক্ষে 21 হাজার মানুষের বসতি সরাতে হবে ৷ ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, চারণক্ষেত্র ও জলাভূমি ৷
যদিও, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমাদের সরকার যা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, তা সারা ভারতের কেউ দিতে পারবে না ৷ মানুষ নিজে থেকেই জমি দিচ্ছেন ৷ এক আধজন মানুষ, যাঁরা এখনও বুঝতে পারেননি, তাঁদের বুঝিয়েই জমি নেব ৷ আমরা নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের মতো জোর করব না ৷"
আরও পড়ুন: 'দেউচা-পাচামিতে কয়লা খনি হতে দিবক লাই', রাজপথে হুঁশিয়ারি আদিবাসীদের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিটেশিয়াস যুগে ভূ-আন্দোলনের ফলে ছোটনাগপুর প্রান্তীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ভূগর্ভে চলে যায় ৷ তাই ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানা-সহ বীরভূমের দেউচা পাচামি এলাকা খনিজ সম্পদে ভরপুর ৷ দেউচা পাচামির কমপক্ষে 3 হাজার 400 একর জমিজুড়ে 1 হাজার 179 মিলিয়ন হেক্টর কয়লা ব্লক রয়েছে ৷ যা উত্তোলিত হলে এটিই হবে আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলা মুখ কয়লা খনি ৷ এছাড়াও, কয়লার স্তরের উপর 1 হাজার 138 মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট শিলাস্তর রয়েছে ৷ তাই এখানে কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য এখনও পর্যন্ত 35 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ৷ যার মধ্যে 10 হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজে খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় 12টিরও বেশি গ্রামে কমপক্ষে 4 হাজার 314টি বাড়িতে 21 হাজারেরও বেশি মানুষের বাস ৷ এই বসত এলাকার অধিকাংশই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম ৷ জমিদাতাদের অন্যত্র জমি, চাকরি-সহ একাধিক ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার ৷ সব মিলিয়ে 4 হাজার 942 জনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে ৷
কিন্তু, দেউচা পাচামির মানুষ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, তাঁরা কোনওভাবেই কয়লা শিল্পের জন্য জমি দেবেন না ৷ তাঁদের বক্তব্য, জল, জমি, জঙ্গলের অধিকার তাঁরা কিছুতেই ছাড়বেন না ৷ বাসিন্দাদের যুক্তি, "এক এক করে রাজ্য়ের মন্ত্রী, নেতারা জেলে যাচ্ছেন ৷ কোন ভরসায় এই সরকারকে শিল্পের জন্য জমি দেব ! তাছাড়া, দিনের পর দিন চাকরির জন্য কলকাতায় ধরনায় বসে রয়েছেন কত যোগ্য প্রার্থী ৷ তাঁদের কেন সরকার এখনও চাকরি দিতে পারেনি ?" তাই আদিবাসীরা বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী থেকেই খনিবিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার ডাক দেন ৷ সাফ জানিয়ে দেন, পূর্বপুরুষের ভিটে, মাটি থেকে এক ইঞ্চিও নড়বেন না তাঁরা ৷
দেউচা পাচামির বাসিন্দা রতন হেমব্রম, হেমবতী মান্ডি, লক্ষ্মীকান্ত হাঁসদা, ধানী হেমব্রমরা বলছেন, "আমরা কয়লা শিল্পের জন্য জমি দিতে চাই না ৷ সব সরকারের ভাঁওতা ৷ মন্ত্রী, নেতারা জেলে যাচ্ছেন ৷ কোন ভরসায় জমি দেব ৷ আমাদের জল, জঙ্গল, জমির অধিকার এক ইঞ্চিও ছাড়ব না ৷ আমরা না হয় জমি দিয়ে চাকরি পাব ৷ আমাদের পরের প্রজন্ম কী দিয়ে চাকরি পাবে ? জমি দিলে আমাদের চাকরি দেবে বলছে সরকার ৷ আর চাকরির যোগ্য প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন ! তাই কোনওভাবেই আমরা জমি দেব না ৷"