বোলপুর, 19 জুলাই: একদা শ্বেত চন্দনের অরণ্য হিসাবে পরিচিত ছিল শান্তিনিকেতন। তবে কয়েক দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চন্দন দস্যুদের দৌরাত্ম্যে বিলুপ্তির পথে বহু মূল্যবান চন্দন গাছ। তবে ফের শান্তিনিকেতনকে চন্দন গাছের ভরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিল বোলপুর বন বিভাগ ৷ সেই মতো 'বনোমহৎসব' বা 'অরণ্য সপ্তাহে' 14 হাজার শ্বেত ও রক্ত চন্দন গাছ বিতরণ করছে বোলপুর বন বিভাগ। জেলার মধ্যে একমাত্র বোলপুর রেঞ্জ থেকেই চন্দন গাছ বিতরণ করা হচ্ছে। তাই মানুষজন খুবই উৎসাহী।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন তখন ছাতিম ও চন্দন গাছে মোহিত হয়েছিলেন। যা একাধিক প্রখ্যাত লেখকের লেখনীতে পাওয়া যায় ৷ এমনকী, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতায় রয়েছে, "ভ্রূ-পল্লবে ডাক দিলে, দেখা হবে চন্দনের বনে।" কারণ একদা শান্তিনিকেতন বহু মূল্যবান চন্দনের অরণ্য হিসাবে পরিচিত ছিল ৷ বিশেষ করে শ্বেত চন্দন গাছের দেখা মেলে শান্তিনিকেতনের আনাচে-কানাচেতে। কিন্তু, গত এক-দুই দশক ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফ্ল্যাট, রিসর্ট, হোটেল, বহুতল প্রভৃতি নির্মাণের ফলে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে শান্তিনিকেতন।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য গাছের সঙ্গে কমেছে চন্দন গাছের সংখ্যাও ৷ এছাড়া, চন্দন দস্যুদের দৌরাত্ন্যে চুরি গিয়েছে বহু মূল্যবান চন্দন গাছ। বিশ্বভারতী ও সংলগ্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক টাকার চন্দন গাছ চুরি যাওয়ার খবর সামনে এসেছে ৷ তবে শান্তিনিকেতনকে পুনরায় চন্দনের অরণ্যে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হল। বনোমহৎসব বা অরণ্য সপ্তাহে বীরভূম জেলার মধ্যে একমাত্র বোলপুর রেঞ্জ অফিস থেকেই বিতরণ করা হচ্ছে রক্ত ও শ্বেত চন্দন গাছ। 14 হাজারের বেশি চন্দনের চারা বিতরণ করা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে।
এছাড়া মূল্যবান মেহগনি, শ্বেতি শাল, মহুল, শিশু, বট, অশ্বত্থ, গামার প্রভৃতি ফল-ফুলের চারা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে শ্বেত ও রক্ত চন্দন গাছের চারা নেওয়ার জন্য মানুষজনের উৎসাহ সব চেয়ে বেশি। বোলপুর বন বিভাগের রেঞ্জার প্রদীপ হালদার বলেন, "14 জুলাই থেকে চারা বিতরণ শুরু করেছি। যা চলবে আগামিকাল পর্যন্ত। মূল্যবান শ্বেত ও রক্ত চন্দন গাছের চারাও তৈরি করেছি। সেগুলোও বিতরণ করছি। আমাদেরকেই এই গাছ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ভাঙল শাল গাছ, তছনছ বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী ছাতিমতলা !