পুরু লাল মাটির দেওয়াল । আর তার গায়ে শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের নিজের হাতে সৃষ্ট ভাষ্কর্য । লালমাটির দেশের তীব্র গরম থেকে বাঁচতে এবাড়ির ছাদটাও মাটির । কবির আমন্ত্রণে এবাড়িতেই সস্ত্রীক এসেছিলেন গান্ধি । কাটিয়েছিলেন গুরুদেবের সঙ্গে বেশকিছুটা সময় । কবিগুরু ও মহাত্মার অনেক আলোচনা ও ইতিহাসের সাক্ষী শান্তিনিকেতনের শ্যামলী গৃহ ।
একে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ । অন্যদিকে জলের তীব্র সংকট । শান্তিনিকেতনে থাকাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠছিল কবিগুরুর কাছে । আচমকাই মাথায় আসে নতুন এক চিন্তা । ডেকে পাঠান শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজকে । খুলে বলেন গোটা পরিকল্পনার কথা । গুরুদেবের কথা মতো কাজ শুরু করে দেন প্রখ্যাত শিল্পী । মোটা মোটা মাটির দেওয়ালে ভর করে তৈরি হয় নতুন বাড়ি । এবাড়ির ছাদও মাটির । তাই বাইরের তীব্র দাবদাহেও ভীতরে বেশ ঠান্ডা । এখানেই শেষ নয়, কবি প্রিয় রামকিঙ্করের হাতে সেজে ওঠে বাড়ির দেওয়াল থেকে ছাদ সর্বত্র । শিল্পীর ভাষ্কর্যে এক নতুন মাত্রা পায় শ্যামলী গৃহ ।
শ্যামলী গৃহ তৈরির পর থেকেই সেখানে মাঝেমধ্যেই থাকতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সালটা 1940 । মহাত্মা গান্ধিকে সস্ত্রীক শ্যামলী গৃহে আমন্ত্রণ জানালেন কবিগুরু । এসেওছিলেন তিনি । স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধিকে সঙ্গে নিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন এবাড়িতেই । ইতিহাস বলে, শুধু আমন্ত্রণই নয়, গান্ধিজির সঙ্গে বহু রাজনৈতিক বিষয় ও দেশের কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন গুরুদেব ।
এবাড়ির স্মৃতির সঙ্গে অনেকেকিছুই সম্পৃক্ত । রামকিঙ্করের ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম । কবিগুরুর সাহিত্যসৃষ্টি । তবু স্বয়ং কবিগুরুর সঙ্গে জাতির জনকের বহু ইতিবাচক আলোচনা আজও ভোলেনি শ্যামলী গৃহ । তার পরতে পরতে যে জড়িয়ে শুধুই ইতিহাস ।