বোলপুর, 8 অগস্ট: 1941 সালের 25 জুলাই অসুস্থ কবিকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় । এটাই ছিল শান্তিনিকেতন থেকে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষযাত্রা । আর ফেরা হয়নি তাঁরই 'প্রাণের আরাম' শান্তিনিকেতনে । রেল কর্তৃপক্ষের তরফে বিশেষ কামরা ব্যবস্থা করা হয়েছিল কবির জন্য । বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশন থেকে যে ট্রেনে শেষবার আশ্রম ছেড়েছিলেন কবি, সেটি আজও পূর্বরেলের গীতাঞ্জলি রেল সংগ্রহশালায় রাখা রয়েছে । রয়েছে, কবির শেষদিনের বহু স্মৃতির ছবি । আজ বাইশে শ্রাবণ, কবির মহাপ্রয়াণে ইটিভি ভারতের বিশেষ প্রতিবেদনে কবির শান্তিনিকেতন থেকে বিদায়বেলার সেই স্মৃতির ঝলক(Etv bharat special report on Rabindranath Tagore on his death anniversary)।
1940 সাল থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । একাধিকবার কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছিলেন । প্রখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকার ও বিধানচন্দ্র রায় তাঁর চিকিৎসা করেছেন । এরপর 1941 সালে জুলাই মাসে গুরুদেবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন ৷ তাই শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । সেইমতো 25 জুলাই শান্তিনিকেতনের 'উদয়ন' বাড়ি থেকে আশ্রমের মোটরগাড়ি করে বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় কবিকে ৷ গুরুদেবের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় তার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ কামরারও ব্যবস্থা করে । সেই রেলে চড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন অসুস্থ কবি । বেলা 3টে 15মিনিট নাগাদ পৌঁছন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ।
আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে স্থায়ী সংগ্রহশালা শান্তিনিকেতন ডাকঘরে
সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তাঁর শান্তিনিকেতনে । তবে শান্তিনিকেতন ছেড়ে যাওয়ার আগে অসুস্থ কবিকে সেবার করার সুযোগ যাঁরা পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সুরেন্দ্রনাথ কর, অনিল চন্দ, বীরেন্দ্রমোহন সেন, বিশ্বরূপ বসু, রানী চন্দ, নন্দিতা কৃপালনী, সুধাকান্ত রায়চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিরা । কলকাতা যাওয়ার 12দিনের দিন অর্থাৎ বাইশে শ্রাবণ সকাল থেকেই কবির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে অক্সিজেন দেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ বেলা 12টা 10মিনিটে শান্ত হয়ে যায় সবকিছু । চিরবিদায় নেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
এই খবর শান্তিনিকেতনে আসতেই রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে আসে । ম্লান হয়ে যায় শান্তিনিকেতনের আকাশ-বাতাস ৷ বিষাদের ছায়া নেমে আসে বোলপুর জুড়ে ৷ তবে স্মৃতি নিয়ে আজও বাইশে শ্রাবণ তাঁকে স্মরণ করে শান্তিনিকেতন ৷ বাইশে শ্রাবণ এলেই শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষজন স্মরণ করেন 1941 সালের 25 জুলাই শেষযাত্রার কথা ।
আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে ভিক্টর, কবিগুরু-ভিক্টোরিয়ার কাহিনি এবার সেলুলয়েডে