লাভপুর, 22 ডিসেম্বর: "বিশু তুই বাইরে যাস না, গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর...৷" বলেছিলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই 95 বছর বয়সে এসেও গ্রামের মানুষের নিরলস চিকিৎসা করে চলেছেন 'বিশু ডাক্তার' ওরফে সুকুমার চন্দ্র । লাভপুরের বাসিন্দা এই বর্ষিয়ান চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন । এমবিবিএস পাশ করার পর বাইরে চাকরি পান ৷ সেই সময় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে গ্রামের মানুষের সেবা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ সেই থেকে আজ 67টি বছর গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তিনি । একদা কথাসাহিত্যিকেরও চিকিৎসা করেছেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করলেন ইটিভি ভারতের কাছে ৷
বীরভূম জেলার লাভপুরের থানা পাড়ার বাসিন্দা সুকুমার চন্দ্র ৷ যিনি এলাকায় 'বিশু ডাক্তার' নামেই খ্যাত । 1953 সালে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন ৷ পরবর্তীতে ডক্টর অফ গাইনোকোলজিস্ট (ডিজিও) পাশ করেন ৷ কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি 'ধাত্রীদেবতা' থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাড়ি সুকুমার চন্দ্রের । তাঁর বাবার বন্ধু ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সময় তিনি কলকাতায় থাকতেন । ডাক্তারি পাশ করার পর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গোপালপুরে চাকরি পান সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, বাক্স-সহ জিনিসপত্র গুছিয়ে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন । সেই সময় কথাসাহিত্যিক তাঁকে বলেছিলেন, "বিশু বাইরে যাস না । গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর । তাতে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে ।"
1957 সালে সেই গ্রামের বাড়ি লাভপুরে ফিরে আসা । তার পর থেকে আজ প্রায় 67টি বছর ধরে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বিশু ডাক্তার'৷ কখনও সাইকেলে চড়ে, কখনও গরুর গাড়ি চড়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে চিকিৎসা করেছেন তিনি । এখন বয়স প্রায় 95 বছর । এখনও থেমে থাকেনি তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা । তবে আর বাইরে যেতে পারেন না । বাড়ির বারান্দায় বসে গ্রিলের ফাঁক দিয়েই চিকিৎসা করেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সকাল ও বিকেল মিলিয়ে দিনে গড়ে 50টি রোগী দেখেন এই বয়সেও । গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ভগবানতুল্য । লাভপুর ছাড়াও আশপাশের বহু গ্রাম থেকে রোগীরা আসেন তাঁর চেম্বারে ।
ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, এক সময় ক্লাস নিতে গিয়ে বিধানচন্দ্র রায় যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শ অনুযায়ীই আজও চিকিৎসা করেন তিনি । বর্ষিয়ান চিকিৎসক বলেন, "তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানের মতো ছিলাম আমি ৷ তিনি পেটের সমস্যায় ভুগতেন ৷ আমি নিয়মিত চিকিৎসা করেছি । তাঁর কথাতেই আর বাইরে চাকরি করতে যাইনি ৷ গ্রামেই চিকিৎসা করি ৷ আর তাঁর কথা শুনেছি বলেই বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে । চাকরি করলে এটা হত না । লাভপুরের এমন কোনও গ্রাম নেই আমার সাইকেলের চাকা পড়েনি ৷"
তিনি আরও বলেন, "ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় আমাদের বলেছিলেন মানুষের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করতে ৷ রোগীকে না ছুঁয়ে দেখেই শুধু খসখস করে ওষুধ লিখতে না ৷ আমি আজও সেই কথা মাথায় রাখি ৷ তাই অযথা ওষুধ দেওয়া বা টেস্ট করতে দিই না রোগীদের ।"
স্থানীয় বাসিন্দা হিরন্ময় দে, রোগীর আত্মীয় উত্তম কুমার মণ্ডল, আসরাফুলনেশা বেগম বলেন, "উনি বীরভূমের ভগবান । আমাদের সকলের ভরসা আছে তাঁর উপর । রোগ নির্ণয়ে সিদ্ধহস্ত । এই বয়সেও প্রখর স্মৃতিশক্তি ডাক্তারবাবুর ৷"
আরও পড়ুন: