ETV Bharat / state

বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র, 95 বছর বয়সেও চিকিৎসা পরিষেবা দেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বিশু ডাক্তার'

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 22, 2023, 5:00 PM IST

Updated : Dec 23, 2023, 11:10 AM IST

Dr BC Roy student: বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন লাভপুরের চিকিৎসক সুকুমার চন্দ্র ৷ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ছিলেন বিশু ডাক্তার ৷ 95 বছর বয়সেও তিনি গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ৷

Dr BC Roy student
বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র বিশু ডাক্তার

বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র বিশু ডাক্তার

লাভপুর, 22 ডিসেম্বর: "বিশু তুই বাইরে যাস না, গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর...৷" বলেছিলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই 95 বছর বয়সে এসেও গ্রামের মানুষের নিরলস চিকিৎসা করে চলেছেন 'বিশু ডাক্তার' ওরফে সুকুমার চন্দ্র । লাভপুরের বাসিন্দা এই বর্ষিয়ান চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন । এমবিবিএস পাশ করার পর বাইরে চাকরি পান ৷ সেই সময় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে গ্রামের মানুষের সেবা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ সেই থেকে আজ 67টি বছর গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তিনি । একদা কথাসাহিত্যিকেরও চিকিৎসা করেছেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করলেন ইটিভি ভারতের কাছে ৷

বীরভূম জেলার লাভপুরের থানা পাড়ার বাসিন্দা সুকুমার চন্দ্র ৷ যিনি এলাকায় 'বিশু ডাক্তার' নামেই খ্যাত । 1953 সালে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন ৷ পরবর্তীতে ডক্টর অফ গাইনোকোলজিস্ট (ডিজিও) পাশ করেন ৷ কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি 'ধাত্রীদেবতা' থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাড়ি সুকুমার চন্দ্রের । তাঁর বাবার বন্ধু ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সময় তিনি কলকাতায় থাকতেন । ডাক্তারি পাশ করার পর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গোপালপুরে চাকরি পান সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, বাক্স-সহ জিনিসপত্র গুছিয়ে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন । সেই সময় কথাসাহিত্যিক তাঁকে বলেছিলেন, "বিশু বাইরে যাস না । গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর । তাতে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে ।"

1957 সালে সেই গ্রামের বাড়ি লাভপুরে ফিরে আসা । তার পর থেকে আজ প্রায় 67টি বছর ধরে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বিশু ডাক্তার'৷ কখনও সাইকেলে চড়ে, কখনও গরুর গাড়ি চড়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে চিকিৎসা করেছেন তিনি । এখন বয়স প্রায় 95 বছর । এখনও থেমে থাকেনি তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা । তবে আর বাইরে যেতে পারেন না । বাড়ির বারান্দায় বসে গ্রিলের ফাঁক দিয়েই চিকিৎসা করেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সকাল ও বিকেল মিলিয়ে দিনে গড়ে 50টি রোগী দেখেন এই বয়সেও । গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ভগবানতুল্য । লাভপুর ছাড়াও আশপাশের বহু গ্রাম থেকে রোগীরা আসেন তাঁর চেম্বারে ।

ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, এক সময় ক্লাস নিতে গিয়ে বিধানচন্দ্র রায় যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শ অনুযায়ীই আজও চিকিৎসা করেন তিনি । বর্ষিয়ান চিকিৎসক বলেন, "তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানের মতো ছিলাম আমি ৷ তিনি পেটের সমস্যায় ভুগতেন ৷ আমি নিয়মিত চিকিৎসা করেছি । তাঁর কথাতেই আর বাইরে চাকরি করতে যাইনি ৷ গ্রামেই চিকিৎসা করি ৷ আর তাঁর কথা শুনেছি বলেই বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে । চাকরি করলে এটা হত না । লাভপুরের এমন কোনও গ্রাম নেই আমার সাইকেলের চাকা পড়েনি ৷"

তিনি আরও বলেন, "ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় আমাদের বলেছিলেন মানুষের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করতে ৷ রোগীকে না ছুঁয়ে দেখেই শুধু খসখস করে ওষুধ লিখতে না ৷ আমি আজও সেই কথা মাথায় রাখি ৷ তাই অযথা ওষুধ দেওয়া বা টেস্ট করতে দিই না রোগীদের ।"

স্থানীয় বাসিন্দা হিরন্ময় দে, রোগীর আত্মীয় উত্তম কুমার মণ্ডল, আসরাফুলনেশা বেগম বলেন, "উনি বীরভূমের ভগবান । আমাদের সকলের ভরসা আছে তাঁর উপর । রোগ নির্ণয়ে সিদ্ধহস্ত । এই বয়সেও প্রখর স্মৃতিশক্তি ডাক্তারবাবুর ৷"

আরও পড়ুন:

  1. মৃণাল সেনকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী নন্দনে, 'দ্য ম্যাভেরিক' দেখতে ভিড় আমজনতার
  2. শেষ চুমুকেও বাড়তি পাওনা, নলেনগুড়ের স্বাদ পেতে শুভজিতের দোকানে ভিড় চা প্রেমীদের
  3. অস্থি দিয়ে শুরু হয়েছিল পুজো, 200 বছর পরে আজও বহাল সেই প্রথা

বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র বিশু ডাক্তার

লাভপুর, 22 ডিসেম্বর: "বিশু তুই বাইরে যাস না, গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর...৷" বলেছিলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই 95 বছর বয়সে এসেও গ্রামের মানুষের নিরলস চিকিৎসা করে চলেছেন 'বিশু ডাক্তার' ওরফে সুকুমার চন্দ্র । লাভপুরের বাসিন্দা এই বর্ষিয়ান চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন । এমবিবিএস পাশ করার পর বাইরে চাকরি পান ৷ সেই সময় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে গ্রামের মানুষের সেবা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ সেই থেকে আজ 67টি বছর গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তিনি । একদা কথাসাহিত্যিকেরও চিকিৎসা করেছেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করলেন ইটিভি ভারতের কাছে ৷

বীরভূম জেলার লাভপুরের থানা পাড়ার বাসিন্দা সুকুমার চন্দ্র ৷ যিনি এলাকায় 'বিশু ডাক্তার' নামেই খ্যাত । 1953 সালে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন ৷ পরবর্তীতে ডক্টর অফ গাইনোকোলজিস্ট (ডিজিও) পাশ করেন ৷ কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি 'ধাত্রীদেবতা' থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাড়ি সুকুমার চন্দ্রের । তাঁর বাবার বন্ধু ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সময় তিনি কলকাতায় থাকতেন । ডাক্তারি পাশ করার পর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গোপালপুরে চাকরি পান সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, বাক্স-সহ জিনিসপত্র গুছিয়ে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন । সেই সময় কথাসাহিত্যিক তাঁকে বলেছিলেন, "বিশু বাইরে যাস না । গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা কর । তাতে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে ।"

1957 সালে সেই গ্রামের বাড়ি লাভপুরে ফিরে আসা । তার পর থেকে আজ প্রায় 67টি বছর ধরে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বিশু ডাক্তার'৷ কখনও সাইকেলে চড়ে, কখনও গরুর গাড়ি চড়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে চিকিৎসা করেছেন তিনি । এখন বয়স প্রায় 95 বছর । এখনও থেমে থাকেনি তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা । তবে আর বাইরে যেতে পারেন না । বাড়ির বারান্দায় বসে গ্রিলের ফাঁক দিয়েই চিকিৎসা করেন সুকুমার চন্দ্র ৷ সকাল ও বিকেল মিলিয়ে দিনে গড়ে 50টি রোগী দেখেন এই বয়সেও । গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ভগবানতুল্য । লাভপুর ছাড়াও আশপাশের বহু গ্রাম থেকে রোগীরা আসেন তাঁর চেম্বারে ।

ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন সুকুমার চন্দ্র । তিনি জানান, এক সময় ক্লাস নিতে গিয়ে বিধানচন্দ্র রায় যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শ অনুযায়ীই আজও চিকিৎসা করেন তিনি । বর্ষিয়ান চিকিৎসক বলেন, "তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানের মতো ছিলাম আমি ৷ তিনি পেটের সমস্যায় ভুগতেন ৷ আমি নিয়মিত চিকিৎসা করেছি । তাঁর কথাতেই আর বাইরে চাকরি করতে যাইনি ৷ গ্রামেই চিকিৎসা করি ৷ আর তাঁর কথা শুনেছি বলেই বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে । চাকরি করলে এটা হত না । লাভপুরের এমন কোনও গ্রাম নেই আমার সাইকেলের চাকা পড়েনি ৷"

তিনি আরও বলেন, "ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় আমাদের বলেছিলেন মানুষের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করতে ৷ রোগীকে না ছুঁয়ে দেখেই শুধু খসখস করে ওষুধ লিখতে না ৷ আমি আজও সেই কথা মাথায় রাখি ৷ তাই অযথা ওষুধ দেওয়া বা টেস্ট করতে দিই না রোগীদের ।"

স্থানীয় বাসিন্দা হিরন্ময় দে, রোগীর আত্মীয় উত্তম কুমার মণ্ডল, আসরাফুলনেশা বেগম বলেন, "উনি বীরভূমের ভগবান । আমাদের সকলের ভরসা আছে তাঁর উপর । রোগ নির্ণয়ে সিদ্ধহস্ত । এই বয়সেও প্রখর স্মৃতিশক্তি ডাক্তারবাবুর ৷"

আরও পড়ুন:

  1. মৃণাল সেনকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী নন্দনে, 'দ্য ম্যাভেরিক' দেখতে ভিড় আমজনতার
  2. শেষ চুমুকেও বাড়তি পাওনা, নলেনগুড়ের স্বাদ পেতে শুভজিতের দোকানে ভিড় চা প্রেমীদের
  3. অস্থি দিয়ে শুরু হয়েছিল পুজো, 200 বছর পরে আজও বহাল সেই প্রথা
Last Updated : Dec 23, 2023, 11:10 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.