বোলপুর, 16 অগস্ট: 'শিল্প না হলে জমি ফেরত' আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেননি অনিচ্ছুক জমিদাতা কৃষকেরা ৷ 'ভয়' ছিল অনুব্রত মণ্ডলের ৷ তাই গরুপাচার মামলায় 'কেষ্ট' গ্রেফতার হতেই বোলপুরের শিবপুরে আন্দোলনকারী চাষিরা বেজায় খুশি ৷ তাঁদের আন্দোলনের পালে ফের হাওয়া লেগেছে ৷ এতদিনে খোলাখুলি এলাকায় অনুব্রতর-আতঙ্কের কথা বলছেন তাঁঁরা ৷ এমনকী, ফের জমি ফেরতের আন্দোলনে নামবেন, তেমন পরিকল্পনাও চলছে (Bolpur Shibpur farmers prepare for mass movement to get back their land in Birbhum) ৷
প্রসঙ্গত, 2002 সালে বাম জমানায় শিল্পনিগমের নামে শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের তত্ত্বাবধানে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় 300 একর চাষের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল ৷ তৃণমূল সরকার এসেছে ৷ অথচ সেই জমিতে শিল্পের ছোঁয়া মাত্র নেই ৷ বাম সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে তখন অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বেই পথে নেমেছিলেন চাষিরা । পরে রাজ্যে পালা বদলের পর এখানে কেমিক্যাল হাব হওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । এই পরিকল্পনারও পালটে যায় । বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'গীতবিতান' নামক আবাসন প্রকল্প তৈরির কথা ঘোষণা করেন । শিল্পের বদলে আবাসন ৷ এতে জমিদাতা কৃষকদের একাংশ বেঁকে বসেন এবং আন্দোলনে নামেন । তাঁদের দাবি ছিল, শিল্প হলে জমি দেব, নইলে জমি ফিরিয়ে দিতে হবে ।
আরও পড়ুন: অনুব্রতর কথায় দেড় বছরে 12 পুলিশ সুপারের বদলি বীরভূমে
দীর্ঘদিন আন্দোলন চলে । তখন আবার সেই আন্দোলন দমিয়ে দিতে মাঠে নামেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । যিনি বাম জমানায় চাষিদের সঙ্গে ছিলেন ৷ তৎকালীন ডিএসপি (ডিএনটি) কাশীনাথ মিশ্রকে একপ্রকার শাসানির সুরে অনুব্রত মণ্ডলকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "উন্নয়ন হচ্ছে, যারা বাধা দিচ্ছে গ্রেফতার করুন ৷ একজনেরও বাড়িঘর রাখব না, জ্বালিয়ে দেব ৷ ভেঙে চুরমার করে দেব ৷ কোনও মান্নান, কোনও সিপিএমের বড় লিডার জানি না ৷ মেরে হাত-পা ভেঙে দেব ৷ সন্ধের মধ্যে অ্যারেস্ট না হলে আমি অন্য ঘটনা ঘটিয়ে দেব ।"
অনুব্রতর এই নিদানে স্বাভাবিক ভাবে থমকে গিয়েছিল চাষিদের আন্দোলন । যে জমিতে আজ ঝাঁ চকচকে আবাসন দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে একসময় তিন ফসলি জমি ছিল ৷ বছরে তিন-তিন বার চাষ করে লাভবান হতেন চাষিরা ৷ সেই জমি শিল্পের নাম করে নিয়ে তাতে আবাসন প্রকল্প ও বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার গড়েছে তৃণমূল সরকার ৷ সম্পূর্ণ জমির অধিকাংশতেই 4 ফুটের বেশি কংক্রিটের ঢালাই ৷ চাষিরা না পেয়েছেন ন্যায্য মূল্য, না চাকরি ৷ আর চাষবাসের প্রশ্ন তো দূরঅস্ত !
আরও পড়ুন: অনুব্রত বীরভূমের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে, বোলপুরে মিছিল মন্ত্রী চন্দ্রনাথের
তাই গরুপাচারে অভিযুক্ত দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই এলাকায় আনন্দের হাওয়া বইছে ৷ অক্সিজেন পেয়েছে এক দশকের পুরনো সেই আন্দোলন, 'শিল্প হলে জমি দেব, না হয় জমি ফিরিয়ে দাও' ৷ অনিচ্ছুক জমিদাতা চাষিদের মধ্যে শেখ ইয়াকুব, মহম্মদ রফিক, শেখ সেলিম আক্ষেপের সুরে বলেন, "এই অনুব্রত মণ্ডলের হুমকির জন্য কিছুই করতে পারিনি ৷ শিল্প হয়নি, জমির দামও ঠিকমতো পাইনি, চাকরিও হয়নি ৷ গ্রামের অনেকেই কাজের খোঁজে কেউ চেন্নাই, কেউ এলাহাবাদ বা অন্য কোথাও বাইরে চলে গিয়েছেন ৷ এখানে শিল্প হলে তো আর কাউকে রাজ্যের বাইরে যেতে হত না ৷" তাঁরা আরও জানান, অনুব্রত এসে হুমকি দিয়েছিলেন ৷ পুলিশ মিথ্যে মামলাও দিয়েছিল ৷ আজ নেতা গ্রেফতার হওয়ায় তাঁরা বলেন, "আমার খুব খুশি ৷ আবারও আন্দোলনে নামব ৷ আমাদের একটা দাবি, শিল্প হোক, না হলে জমি ফিরিয়ে দিক।"