শান্তিনিকেতন, 17 অগাস্ট : পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে বিশ্বভারতীতে উত্তেজনা । বোলপুর-শান্তিনিকেতনের কয়েক হাজার মানুষ আজ শান্তিনিকেতন থানার সামনে জড়ো হয়ে ভেঙে দেয় নির্মাণ সামগ্রী । শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ । বিশ্বভারতীর অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয় । পৌষমেলার গেটও ভেঙে দেওয়া হয় । মাইকে করে প্রচার করা হয় "উপাচার্য গো ব্যাক।'' পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রমিক,পড়ুয়া, রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল । সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আজ । যদিও, ঘটনাস্থানে দেখা যায়নি পুলিশ প্রশাসনের কাউকেই । পুলিশের দাবি, ঘটনায় 8 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ অনেকের প্রশ্ন, পুলিশ ঘটনাস্থানে আসেইনি ৷ তাহলে কাদের, কীভাবে গ্রেপ্তার করা হল ?
ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার মাঠ ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন । ক্ষুব্ধ শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক থেকে শুরু করে পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ । এমনকী, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, স্থানীয় অনেকেরই এবিষয়ে আপত্তি রয়েছে । তাদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর চতুর্দিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে অচলায়তনে পরিণত করা হচ্ছে ৷ বিষয়টি রবীন্দ্র আদর্শের পরিপন্থী ৷ তাদের দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে গড়ে ওঠা বিশ্বভারতীকে অচলায়তনে পরিণত করা যাবে না । এই দাবিতেই আজ পড়ুয়া, রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকে ।
বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির তরফে শনিবার বিশ্বভারতীর ঠিকাদারকে মারধর করা হয় । বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ । গতকাল বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নেতৃত্বে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, কর্মীরা মিছিল করে শান্তিনিকেতন থানার সামনে জড়ো হন । উপাচার্যের নির্দেশে ফের শুরু হয় নির্মাণ কাজ । অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস বানানো হয় । পৌষমেলার মাঠে লাইট লাগিয়ে রাতারাতি চলতে থাকে পাঁচিল তৈরির কাজ । প্রতিবাদ করলে মহিলা আশ্রমিককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে ।
আজ বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দমকল বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল করে । শান্তিনিকেতন থানার সামনে পৌঁছায় মিছিল । তৃণমূল নেতাদের দেখা যায় মিছিলে । ছিলেন দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি, বোলপুর পৌরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর ওমর শেখ, সুকান্ত হাজরাসহ অন্য নেতারাও । JCB মেশিন ট্রাক্টর নিয়ে এসে ভেঙে দেওয়া হয় নির্মাণ কাজের জিনিসপত্র । শান্তিনিকেতন থানা থেকে মাত্র 50 মিটার দূরত্বে এই ঘটনা ঘটলেও কোনও পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি । বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা সংখ্যায় কম হওয়ায় ঘটনাস্থান থেকে পালিয়ে যান । কাজ ছেড়ে পালিয়ে যান শ্রমিকরাও । বন্ধ হয়ে গেছে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তৈরির কাজ । যদিও, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিশ্বভারতীর তরফে কেউ মন্তব্য করেননি ।