রামপুর, 15 মে : টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিশ্বখ্যাত বাঁকুড়া ৷ তবে বাঁকুড়ার পরিচয় শুধু টেরাকোটাই নয়, এখানে তৈরি হয় কাঠের হাতি-ঘোড়াও ৷ যা রাজ্য পেরিয়ে পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যে ৷ তবে লকডাউনের কোপ পড়েছে এই শিল্পেও ৷ বর্তমানে চাহিদা না থাকায় ও উৎপাদন না হওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন কয়েকশো শিল্পী ৷
বাঁকুড়া শহরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত রামপুর । অন্যতম পুরোনো এই জনপদে আজও শতাব্দী প্রাচীন কাঠের হাতি ঘোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় 400 শিল্পী । অতীতে এই সংখ্যাটি ছিল আরও বেশি ৷ প্রায় 2000 শিল্পী কাঠের হাতি ঘোড়া তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন । তবে ধীরে ধীরে চাহিদা কমে যাওয়ায় এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অন্যান্য পেশায় মনোনিবেশ করেছেন ।
তবে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শিল্পের কদরও ফের বেড়েছে ৷ বাঁকুড়া জেলায় যে টেরাকোটার হাতি ঘোড়া তৈরি হয়, তার আদলেই রামপুরে তৈরি করা হয় কাঠের হাতি ঘোড়া । সেগুন, গামার, মিম প্রভৃতি কাঠ থেকে তৈরি করা হয় এই হাতি- ঘোড়াগুলি । প্রধানত উপহার হিসেবে এই হাতি-ঘোড়ার চাহিদা রয়েছে ৷ তাই বিক্রিও হয় দেদার । এছাড়াও শোপিস এবং ঘর সাজানোর আসবাব হিসেবেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়ে থাকে কাঠের শিল্প । বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ভ্রমণকেন্দ্রগুলিতে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা কাঠের তৈরি হাতি-ঘোড়ার । এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শুরু করে বসতবাড়ীর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে এইগুলি ৷
নূন্যতম 100 টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ 18 হাজার টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে কাঠের হাতি-ঘোড়ার ৷ পর্যটকদের মধ্যে চাহিদা থাকায় উৎপাদনের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয় ৷ মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই উত্তরবঙ্গে এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামে প্রচুর সংখ্যক শোপিস পাঠানো হয় এখান থেকে এবং তা বিক্রিও হয় প্রচুর । বছরের এই সময়টাকে লক্ষ্য রেখেই লাখ লাখ টাকা লগ্নি করে দীর্ঘ পরিশ্রম করে শিল্পীরা তৈরি করেন কাঠের হাতি ঘোড়া ।
এমন অনেক শিল্পী রয়েছেন, যারা ইতিমধ্যে প্রচুর মাল তৈরি করে নিজেদের গুদামে অথবা দোকানে মজুত করেছেন ৷ কিন্তু লকডাউনের জেরে তা বাজারে পৌঁছাতে পারেনি ৷ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে উৎপাদনও ৷ কারিগররা, যারা বিভিন্ন ওয়ার্কশপে এই হাতি ঘোড়া তৈরি করেন, তাঁদেরও কাজও বন্ধ ৷ লকডাউনের ফলে কাঠের মিল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না কাঠ ৷ কাঁচামালের অভাবে অনেকেই আপাতত বন্ধ রেখেছেন কাজ । ব্যবসা বন্ধ থাকায় কার্যত পথে বসেছেন তাঁরা ৷ লকডাউন কতদিন চলবে, তা ঠিক নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সরকারের সহযোগিতার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রামপুরের শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা । কোরোনার প্রভাবে হারিয়ে যেতে পারে এই প্রাচীন শিল্প-এমনটাই আশঙ্কা অনেকের ৷