বাঁকুড়া, 1 জুন : ভিজে মাটিকে দক্ষ হাতে পালটে ফেলা হয় হাতি-ঘোড়াতে । তারপর রোদে কিছুটা শুকিয়ে তার উপর আঁকা হয় বিভিন্ন নকশা । করা হয় রং । তারপর তা ভাটিতে পোড়ানো হয় । এইভাবেই টেরাকোটার জিনিস তৈরি করেন শিল্পীরা । বংশপরম্পরায় চলে আসছে বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের বিশ্ব বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্প । শুধু পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়া নয়, বানানো হয় থালা, বাটি, টাইলস বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তিও । যার চাহিদা বিদেশেও ।
দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয় এই সমস্ত পোড়ামাটির সামগ্রী । কলকাতা, বিভিন্ন জেলা, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি এখান থেকেই কিনে নিয়ে যান এই সমস্ত সামগ্রী । চাহিদাও প্রচুর । এই সমস্ত সামগ্রী বানিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন তালডাংরা থানার পাঁচমুড়া গ্রামের প্রায় 400 শিল্পী । তবে, লকডাউন যেন নিমেশের মধ্যে সব কেড়েনিয়েছে । বন্ধ চাকা । দেশজুড়ে দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাব পড়েছে শিল্পীদের ঘরেও ।
লকডাউনের জেরে ব্যবসায়ীরা আসতে পারেন না মালপত্র কিনতে । এছাড়াও জঙ্গলমহলে মনসা পুজো ও ধর্মরাজের পুজোতে স্থানীয়ভাবে পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়া লাগে । সেগুলির ভালো বাজারও রয়েছে । কিন্তু, রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরে পাঠানো যাচ্ছে না কোনও সামগ্রী ।
100 টাকা থেকে শুরু করে 4,000 টাকা পর্যন্ত জোড়া হাতি-ঘোড়া তৈরি হয় এখানে । এছাড়াও মনসা পুজোর জন্য মনসার চাল, দুর্গা প্রতিমা-সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা, ইদানিং পোড়ামাটির থালা, বাটি, গ্লাস এমনকী, সৌখিন বিভিন্ন নকশার টাইলস পর্যন্ত তৈরি করা হয় এখানে । স্থানীয় বাজারে যার কম করে দাম 100 টাকা । তারপর তা 3-4 হাজার টাকা পর্যন্ত দামেও বিক্রি হয় ।
এই সমস্ত সামগ্রী বানাতে কী রকম খরচা হয়ে শিল্পীদের ? তাঁরা জানান, 1,500 টাকা দরে ট্রাক্টার প্রতি মাটি, বিশেষ এক প্রকার রং ও ভাটিতে পোড়ানোর জন্য গাড়ি প্রতি 700 টাকার ঝাটি (গাছের শুকনো ডাল) কিনতে হয় । এছাড়া রয়েছে শারীরিক পরিশ্রম । এই অবস্থায় লকডাউন শুরু হওয়ায় বাড়িতেই পড়ে রয়েছে সামগ্রী । বাজার বন্ধ থাকায় চাহিদা থাকলেও তা বিক্রির উপায় নেই । তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে পাঁচমুড়া টেরাকোটা শিল্পীরা । তাঁরা চাইছেন, এই সংকট থেকে বের হতে সরকার সাহায্য করুক ।