বাঁকুড়া,6 মে: লকডাউনের জেরে গাজন উৎসব বন্ধ ৷ বাজারেও বিক্রি নেই মাটির সরঞ্জামের ৷ এর ফলে বাঁকুড়া জেলার ওন্দা থানার হরিহরপুর গ্রামের কুমোর পরিবারগুলির আর্থিক কষ্টে দিন কাটছে ।
বাঁকুড়া জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি কুমোর পাড়া। এদের মধ্যে সবচাইতে বড় কুমোরদের যে গ্রাম রয়েছে সেটি ওন্দা থানার হরিহরপুর। এই গ্রামের মোট 90 টি কুম্ভকার পরিবার রয়েছেন যারা পোড়ামাটির হাঁড়ি কলসি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।সারা বছর গ্রীষ্মের অপেক্ষায় থাকেন এই কুমোর পরিবারগুলি। কেননা গ্রাম-বাংলার মানুষজন গ্রীষ্মকালে মাটির কলসিতে রেখে পানীয় জল পান করে থাকেন, তাই এই সময়ে গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন ছোট ছোট মেলায় এই কুম্ভকার পরিবারগুলি মাটির পাত্র বিক্রি করেন।
এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি গাজন মেলা হয় গ্রীষ্মকালে। মূলত এক্তেশ্বর শিব মন্দির প্রাঙ্গণে গাজন মেলায় প্রায় হাজার দশেক মানুষের সমাগম হয়। হরিহরপুরেও একটি গাজন উৎসব হয় এই গ্রীষ্মকালে। এছাড়াও নিশ্চিন্তপুর, বাঁকুড়া শহরের হংসেশ্বর সমেত বিভিন্ন জায়গায় চড়ক পুজো বা গাজন উৎসবে বিক্রি হয়ে থাকে মাটির হাঁড়ি কলসি।
গ্রাম থেকে গোরুর গাড়ি বোঝাই করে অথবা ট্রাক্টর বোঝাই করে এই সমস্ত পাত্র নিয়ে সপরিবারে হাজির হন মেলার মাঠে। 50 থেকে 80 টাকা দামে এক একটি কলসি বিক্রি হয় মেলায়। তবে এবছর চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবছর একটিও গাজন উৎসব আয়োজিত হয়নি জেলায়। দীর্ঘ কয়েক মাস প্রাণপাত পরিশ্রম করে তৈরি করা পোড়ামাটির হাঁড়ি কলসি বিক্রি না হওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তাঁরা।
এক ট্রাক্টর মাটি 500 টাকা, এবং মাটির কলসি পড়ানোর জন্য শুকনো ডালপালা এক গাড়ি 400 টাকা ,এছাড়াও 300 টাকার কাঠগুড়ি খরচ করলে প্রায় 120-150টি কলসি তৈরি হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে পরিবারের ছোটো-বড় সকলেরই পরিশ্রম ৷
একদিকে বন্ধ চড়কপূজা পুজো বা গাজন, অন্যদিকে শহরে অথবা অন্যান্য হাটে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না মাটির পাত্র, তাই সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন এই সমস্ত মৃৎশিল্পীরা।