বাঁকুড়া, 16 সেপ্টেম্বর: মল্লগড় বিষ্ণুপুরের ইতিহাস কথিত আছে বহু উপাখ্যানে ৷ কিন্তু কিছু ইতিহাস হয়তো আজও লুকিয়ে আছে মানুষের দৃষ্টির অগোচরে ৷ যেখানে বিষ্ণুপুরের লাল মাটি, টেরাকোটার মন্দির, দলমাদল কামান আর মল্লরাজাদের বৃহৎ সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের কথাই মানুষজন বেশি জানেন ৷ কিন্তু এখানও লুকিয়ে রয়েছে এক সৃষ্টির উৎস ৷ সুর সৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র রামশরণ সংগীত মহাবিদ্যালয় ৷ মহারাজাদের বৃহৎ ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সুর-সৃষ্টির উৎস হিসেবে নিজের অস্বিস্ত টিকিয় রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই সংগীত মহাবিদ্যালয়।
শুধুমাত্র ভারতবর্ষে নয়, এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় বলে গণ্য করা হয় বিষ্ণুপুরের এই সঙ্গীত চর্চার প্রাচীন কেন্দ্রেকে ৷ ১৮৮৫ সালে তৎকালীন মল্লরাজা রামকৃষ্ণ সিংহদেবের অনুপ্রেরণায় কিছু সাংস্কৃতিক সম্পন্ন মানুষের প্রচেষ্টাই গড়ে ওঠেছিল এই প্রতিষ্ঠান ৷ প্রধান অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছিলেন অনন্তলাল বন্দোপাধ্যায় ৷ তার পর শুরু হয় দীর্ঘ পথ চলা। এই প্রতিষ্ঠানে বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদের সঙ্গে সঙ্গে চর্চিত হত বাংলা রাগ-সংগীতের নানা দিক। অবশেষে ১৯৪৫ সালে এই প্রতিষ্ঠান একটি মহাবিদ্যালয়ের রূপ ধারণ করে ৷ এই মহাবিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত বিভাগে স্নাতক হয়েছেন বহু মানুষ ৷
আরও পড়ুন: মল্লগড়ের লালবাঁধ আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে
একই সুর বিষ্ণুপুর পৌরসভার সহ-পৌরপ্রশাসক গৌতম গোস্বামীর গলাতেও ৷ তিনি বলেন, " পৌরসভার আয় থেকে যত সামান্য ভাতা আমরা প্রদান করি অধ্যাপকদের ৷ বিষ্ণুপুর ঘরানার এত প্রাচীন একটা মহাবিদ্যালয় যাতে সরকার অধিগ্রহণ করে তার জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করব ৷"
সারা বিষ্ণুপুরবাসী-সহ জেলাবাসীর কাছে এই মহাবিদ্যালয় একটা আবেগ ৷ কিন্তু পুরোনো থাম, শেওলা ধরা দেওয়াল বিশিষ্ট এশিয়া মহাদেশের সবয়েচে পুরনো সংগীত মহাবিদ্যালয় সরকারের দৃষ্টি গোচরে আসুক ৷ তাহলে সঙ্গীত চর্চার এই আদি কেন্দ্র প্রাণ ফিরে পাবে ৷ এই আশাতেই বুক বাঁধছেন জেলার সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ।