বাঁকুড়া, 6 জুলাই: বিষ্ণুপুর নাম উঠতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে টেরাকোটার অপরূপ শৈলী, বিষ্ণুপুরী ঘরানার রাগসংগীত আর বালুচরী-স্বর্ণচরীর সুনিপুণ কারুকার্যের ছবি ৷ বাঁকুড়া জেলার এই ছোট্ট শহরটি পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ৷ কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো এই সুন্দর ছবির পিছনে রয়েছে অন্য এক ছবি ৷ যার সাক্ষী শুধুমাত্র বিষ্ণুপুর শহরের বাসিন্দারাই ৷
বাঁকুড়ার এই জনপ্রিয় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদীন ধরেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না পাকা ড্রেন ৷ জায়গায় জায়গায় জমে নর্দমার জল ৷ পচা গন্ধ আর মশার উপদ্রবে টেকা দায় ৷ যার ফলে প্রায়ই অসুখে পড়তে হয় শহরের বাসিন্দাদের ৷ বর্ষার আগে শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা বর্ষার আরও ভাবাচ্ছে এখানকার মানুষকে ৷ বাঁকুড়া জেলায় মোট তিনটি পৌরসভা রয়েছে । এরমধ্যে বিষ্ণুপুর পৌরসভার নিকাশি ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল ৷ মন্দিরনগরী বলে পরিচিত এই বিষ্ণুপুর শহর সংকীর্ণ রাস্তা এবং অলি গলিতে ভরতি । এই দীর্ঘদিন ধরে এই পৌরসভার ক্ষমতা ছিল কংগ্রেসের হাতে । পরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেন পৌরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হন । রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন একসময় । অভিযোগ, দীর্ঘদিন পৌরবোর্ড তাদের দখলে থাকলেও শহরের বেশ কিছু এলাকার মানুষ ন্যূনতম পৌর পরিষেবা পাননি ।
![বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-bnk-01-bishunupur-drainage-vis-7203835_26062020102950_2606f_00394_850.jpg)
2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী বিষ্ণুপুর শহরের লোক সংখ্যা ছিল প্রায় 70 হাজার । যা বর্তমানে প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । পৌরসভার অধীনে রয়েছে মোট 19 টি ওয়ার্ড । এই শহরের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের উপর ৷ অথচ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে রয়েছে । যে সমস্ত এলাকায় মোরামের রাস্তা ছিল, সেইসব এলাকায় অবৈজ্ঞানিকভাবে ঢালাই করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ৷ ফলে রাস্তার জল মানুষের বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে । বিষ্ণুপুর শহরের 1 নম্বর ওয়ার্ডের কাটান ধার, তিন নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চ পাড়া এবং 6 নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা তুলনামূলকভাবে নিচু । ফলে নর্দমার জল জমে থাকায় মশার উপদ্রব বাড়ছে ৷ শুধু তাই নয়, যে কটি পাকা ড্রেন রয়েছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষজনের । অবস্থা এতটাই বেহাল যে, কাটান ধারের বাসিন্দা কালিপদ বাউরি বলছেন, "আমরা শহরে বাস করছি নাকি জঙ্গলে তা বুঝতে পারি না । জঙ্গলে বাস করলে নর্দমার সমস্যা ভোগ করতে হত না ।" মালঞ্চ পাড়ার মালা সাঁতরার কথায়, "আমরা চাই সবসময় নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক ৷ কিন্তু তা হয় না । ফলে বিভিন্ন সময় জ্বর এবং পেটের অসুখে ভুগতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের ।"
![নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-bnk-01-bishunupur-drainage-vis-7203835_26062020102950_2606f_00394_315.jpg)
এই বিষয়ে স্থানীয় BJP নেতৃত্বের অভিযোগ, বিষ্ণুপুর পৌর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ভীষণ খারাপ এবং বেশ কিছু ড্রেন বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । CPI(M) নেতৃত্বের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরও শহরের নিকাশি ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারেনি বর্তমান পৌরবোর্ড । যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে আমল দিতে রাজি নন বর্তমান পৌরসভার চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই বিষ্ণুপুর শহরের মানুষের ন্যূনতম চাহিদা ৷ আমরা তার অনেকটাই করতে সফল হয়েছি । কিছু কাজ অবশ্য বাকি রয়েছে যা পরে করা হবে ।"