ETV Bharat / state

ডোকরা শিখে সংসার চালাচ্ছেন বাঁকুড়ার গীতা কর্মকার - Geeta Karmakar

সংসার চালাতে গিয়ে প্রচুর দেনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে । প্রথমদিকে মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ডোকরার কাজ করেছেন এবং নিজেই তা বিক্রি করেছেন । তবে তখন ডোকরার তেমন একটা বাজার তৈরি হয়নি । তাই মহাজনের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন একটা সময়ে ।

Mothers Day
বাঁকুড়ার গীতা কর্মকার
author img

By

Published : May 10, 2020, 10:52 PM IST

বাঁকুড়া, 10 মে : স্বামীর মৃত্যুর পর একদিকে মায়ের ভূমিকা ও অন্যদিকে সংসার চালাতে ডোকরা শিল্পকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়া । এভাবেই সাফল্যের শিখরে হাজির হয়েছেন বাঁকুড়ার গীতা কর্মকার।

1988 সালে বাঁকুড়া শহরের অদূরে 60 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিকনা গ্রাম । এই গ্রামেরই ডোকরা শিল্পী গোপাল কর্মকারের সঙ্গে বিয়ে হয় গীতা কর্মকারের । ডোকরার কাজ করে সংসারটা মোটামুটি চলে যেত তাঁদের । হঠাৎ ছন্দপতন । 2002 সালে মারা গেলেন শিল্পী গোপাল কর্মকার । সংসার বলতে তখন গীতাদেবীর এক মেয়ে ও এক ছেলে । এই প্রতিকূল অবস্থাতেও হার মানেননি তিনি । নিজেই হাল ধরলেন সংসারের । একদিকে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা, অন্যদিকে উপার্জনের তাগিদে স্বামীর কাছে শেখা ডোকরা শিল্পকে অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়া । প্রচুর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছেন গীতা দেবী । বহুকষ্টে মেয়েকে কোনওরকমে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে পেরেছেন । তবে ছেলের ক্ষেত্রে সেটা আর সম্ভব হয়নি । দুজনকে যে পড়াবেন, টাকা কই ! প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে আর এগোতে পারেনি ছেলে ।

সংসার চালাতে গিয়ে প্রচুর দেনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে । প্রথমদিকে মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ডোকরার কাজ করেছেন এবং নিজেই তা বিক্রি করেছেন । তবে তখন ডোকরার তেমন একটা বাজার তৈরি হয়নি । তাই মহাজনের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন একটা সময়ে ।

Mothers Day
গীতা কর্মকার ডোকরা শিল্পের কিছু নমুনা


এরপর তিনি নিজে গিয়ে শিল্প দপ্তরে যোগাযোগ করেন । সেখান থেকে সহযোগিতা নিয়ে, ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র 50 হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফের শুরু করেন ডোকরার কাজ । শিল্পসম্ভার সাজিয়ে অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে পাড়ি দেন দেরাদুনে একটি বিশেষ মেলাতে । ছোটো ছেলেটিকেও সঙ্গে নেন । বিক্রিও ভালই হয় সেখানে । উৎসাহ নিয়ে ফের ব্যাঙ্কের ঋণের দ্বারস্থ হন । এবার 2 লাখ 50 হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুরোদমে শুরু করেন কাজ ।

আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি গীতাদেবীকে । 2008-09 সাল থেকে ডোকরার বাজার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । চাহিদাও বাড়তে থাকে । দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কোথাও ডোকরার কাজ করে এসেছেন, আবার কোথাও ডোকরার শিল্প সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করে এসেছেন । 2012 সালে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডন । সেখানেও তিনি সাফল্য পান ।

মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এই শিল্পকলার কাজ করেই। ছেলেকে পড়াশোনা হয়তো বেশি দূর শেখাতে পারেননি অভাবের কারণে তবে তার ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যেই তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এখন গীতা কর্মকার ডোকরা গ্রামের শুধুমাত্র এক শিল্পী নন, তিনি একজন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন । তার অধীনে কাজ করছে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা । স্বামীহারা হয়েও নিজের মাতৃত্বকে সমাজে আরও পাঁচটা মানুষের কাছে উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলেছেন শিল্পী গীতাদেবী।

বাঁকুড়া, 10 মে : স্বামীর মৃত্যুর পর একদিকে মায়ের ভূমিকা ও অন্যদিকে সংসার চালাতে ডোকরা শিল্পকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়া । এভাবেই সাফল্যের শিখরে হাজির হয়েছেন বাঁকুড়ার গীতা কর্মকার।

1988 সালে বাঁকুড়া শহরের অদূরে 60 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিকনা গ্রাম । এই গ্রামেরই ডোকরা শিল্পী গোপাল কর্মকারের সঙ্গে বিয়ে হয় গীতা কর্মকারের । ডোকরার কাজ করে সংসারটা মোটামুটি চলে যেত তাঁদের । হঠাৎ ছন্দপতন । 2002 সালে মারা গেলেন শিল্পী গোপাল কর্মকার । সংসার বলতে তখন গীতাদেবীর এক মেয়ে ও এক ছেলে । এই প্রতিকূল অবস্থাতেও হার মানেননি তিনি । নিজেই হাল ধরলেন সংসারের । একদিকে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা, অন্যদিকে উপার্জনের তাগিদে স্বামীর কাছে শেখা ডোকরা শিল্পকে অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়া । প্রচুর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছেন গীতা দেবী । বহুকষ্টে মেয়েকে কোনওরকমে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে পেরেছেন । তবে ছেলের ক্ষেত্রে সেটা আর সম্ভব হয়নি । দুজনকে যে পড়াবেন, টাকা কই ! প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে আর এগোতে পারেনি ছেলে ।

সংসার চালাতে গিয়ে প্রচুর দেনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে । প্রথমদিকে মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ডোকরার কাজ করেছেন এবং নিজেই তা বিক্রি করেছেন । তবে তখন ডোকরার তেমন একটা বাজার তৈরি হয়নি । তাই মহাজনের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন একটা সময়ে ।

Mothers Day
গীতা কর্মকার ডোকরা শিল্পের কিছু নমুনা


এরপর তিনি নিজে গিয়ে শিল্প দপ্তরে যোগাযোগ করেন । সেখান থেকে সহযোগিতা নিয়ে, ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র 50 হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফের শুরু করেন ডোকরার কাজ । শিল্পসম্ভার সাজিয়ে অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে পাড়ি দেন দেরাদুনে একটি বিশেষ মেলাতে । ছোটো ছেলেটিকেও সঙ্গে নেন । বিক্রিও ভালই হয় সেখানে । উৎসাহ নিয়ে ফের ব্যাঙ্কের ঋণের দ্বারস্থ হন । এবার 2 লাখ 50 হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুরোদমে শুরু করেন কাজ ।

আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি গীতাদেবীকে । 2008-09 সাল থেকে ডোকরার বাজার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । চাহিদাও বাড়তে থাকে । দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কোথাও ডোকরার কাজ করে এসেছেন, আবার কোথাও ডোকরার শিল্প সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করে এসেছেন । 2012 সালে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডন । সেখানেও তিনি সাফল্য পান ।

মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এই শিল্পকলার কাজ করেই। ছেলেকে পড়াশোনা হয়তো বেশি দূর শেখাতে পারেননি অভাবের কারণে তবে তার ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যেই তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এখন গীতা কর্মকার ডোকরা গ্রামের শুধুমাত্র এক শিল্পী নন, তিনি একজন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন । তার অধীনে কাজ করছে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা । স্বামীহারা হয়েও নিজের মাতৃত্বকে সমাজে আরও পাঁচটা মানুষের কাছে উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলেছেন শিল্পী গীতাদেবী।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.