বাঁকুড়া, 9 মার্চ : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একান্নবর্তী সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়ান তাঁরা । ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি ছেড়ে জায়গা হয় কোনও বৃদ্ধাশ্রমে । তবে ঘর ছাড়ার পর সব রং, সব আনন্দ মুছে যায়নি তাঁদের জীবন থেকে । রক্তের সম্পর্ক না হলেও সামাজিক সম্পর্কের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে তাদের জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস । দোলের দিনে এই ছবিই ধরা পড়ল বাঁকুড়ার এক বৃদ্ধাশ্রমে ।
শহরের উপকণ্ঠে 60 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে রয়েছে ক্ষীরোদপ্রসাদ বৃদ্ধাশ্রম । প্রতিবছর বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আবাসিকদের সঙ্গে রং খেলায় মেতে ওঠে শহরের যুবক-যুবতিরা । সকাল সকাল হাজির হয় তারা । নিজেদের মতো করেই গড়ে নিয়েছে সম্পর্ক । কেউ দাদু-ঠাম্মার পায়ে আবির ছুঁইয়ে আশীর্বাদ নেয় । কোথাও নতুন সম্পর্কের রঙিন মুখগুলো সেলফি নিতে ব্যস্ত । এরপর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । খাওয়া-দাওয়াও হয় । জীবন সায়াহ্নে এসে নতুনদের সঙ্গে বসন্ত আগমনের আনন্দে মেতে ওঠেন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরাও । এক আবাসিক অপর্ণা আচার্য বলেন, "সারাবছর অপেক্ষা করে থাকি এই দিনটার জন্য । আমরা নিজেরা রং খেলি । তবে এরা এলে একটু বেশি আনন্দ পাই । আগের দিনগুলোর কথা মনে করে মন খারাপ করে বসার কোনও কারণ নেই । এখানেও আমরা বেশ আনন্দ করি ।"
বৃদ্ধাশ্রমে রং খেলতে খুশি শহরের যুবক-যুবতিরা । ঋতুপর্ণা কুণ্ডু নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ কিংবা বাড়ি গিয়ে গেট-টুগেদার এগুলো লেগেই আছে । এভাবে দোল কাটানোর অনুভূতিটা আলাদা । তাঁদের আশীর্বাদ ও হাসিমুখগুলোই পাওনা ।" তৃপ্তির হাসি ইতিকা দরিপা নামে এক কিশোরীর মুখে । ইতিকার কথায়, " ছোটোবেলা থেকে দাদু ঠাম্মা নেই । তাই বৃদ্ধাশ্রমে এসে এই দিনটা কাটাই ।"