ETV Bharat / state

মারাংবুরুর মন্ত্র, সাঁওতালি গানে দেবী দুর্গার আরাধনা বাঁকুড়ার আদিবাসী মহিলাদের - দুর্গাপুজো

বাঁকুড়ার একটি গ্রামে দুর্গাপুজো করছেন আদিবাসী মহিলারা ৷ সেজন্য উপেক্ষা করেছেন গ্রামবাসীদের বাধা, মোড়লদের রক্তচক্ষু ৷

দেবী দুর্গা
author img

By

Published : Oct 1, 2019, 5:41 AM IST

Updated : Oct 2, 2019, 11:58 PM IST

বাঁকুড়া : আদিবাসীদের দেবতা তো মারাংবুরু ৷ আর সেই আদিবাসীরাই কি না দুর্গাপুজো করবেন ! মেনে নেননি অনেকেই ৷ রক্তচক্ষু ছিল গ্রামের মোড়লদেরও ৷ ভয় ছিল, গ্রামে একঘরে হওয়ার ৷ তাতে অবশ্য পিছিয়ে আসেননি বাঁকুড়ার দোমোহানি গ্রামের কয়েকজন আদিবাসী মহিলা ৷ বরং আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে স্বতন্ত্র করে তুলেছেন নিজেদের দুর্গাপুজোকে ৷ আর এভাবেই 14 বছর ধরে মারাংবুরুর মন্ত্র পাঠ করে, সাঁওতালি ভাষায় গান গেয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন ওই মহিলারা ৷

বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার দূরে এই দোমোহানি গ্রাম ৷ 50-60 টি আদিবাসী পরিবারের বাস ৷ সেখানেই থাকেন সন্ধ্যা হেমরম ৷ নিজস্ব ছন্দেই চলছিল তাঁর জীবন ৷ কিন্তু, 14 বছর আগে এক স্বপ্নই পালটে জীবনের গতিমুখ ৷ গ্রামেরই এক বাসিন্দা সরস্বতী হাঁসদা শোনালেন সেই কাহিনি ৷ তিনি বলেন, "একদিন মা স্বপ্নে দেখা দেন ৷ এসে বললেন, তাঁর পুজো করতে হবে ৷ কিন্তু, বলা হয় আদিবাসীদের মধ্যে তো দুর্গাপুজো নেই ৷ তাহলে কেউ যদি কিছু বলে ? মা বলেন, না ৷ আমাকে পুজো দিতেই হবে ৷" তারপর আর সাত-পাঁচ ভাবেননি একেবারে সাদাসিধে প্রকৃতির সন্ধ্যা ৷ এক অদ্ভুত জেদ চেপে বসে তাঁর মধ্যে ৷ পাশে পান আরও কয়েকজন মহিলাকে ৷

Durga Puja
দোমোহানি গ্রাম

কিন্তু, মারাংবুরুয়ের পরিবর্তে গ্রামে দুর্গাপুজো হবে ? তাও আবার কি না মহিলারা করবে সেই পুজো ৷ সায় দেননি গ্রামের মোড়ালরা ৷ পুজো আটকানোর জন্য থানাতেও যান তাঁরা ৷ গ্রামেরই এক বাসিন্দা মতিলাল হাঁসদা বলেন, "ওরা বলে, মানুষ কাটা হচ্ছে ৷ তাই বাধা দেওয়া হচ্ছে ৷ যদিও পুলিশ তদন্ত করে দেখে এরকম কিছু হচ্ছে না ৷ তারপর বড়বাবু বলেন, পুজো করার অধিকার সবার রয়েছে ৷ পুজো হবে ৷ কোনও বাধা দিতে পারবে না ৷ "

Durga Puja
দেবী দুর্গার সামনে মহিলারা

পুলিশের বরাভয় যেন আরও সাহস বাড়িয়ে দেয় সন্ধ্যাদের ৷ শুরু হয় পুজো ৷ অবশ্য প্রতিমা নয়, প্রথম বছর ঘট পুজোই করা হয় ৷ তা অবশ্য মেনে নেননি প্রতিবেশীরা ৷ বাঁকা চোখে তাকাতে থাকেন তাঁরা ৷ কিন্তু,অদম্য জেদ চেপে বসে সন্ধ্যাদের মধ্যে ৷ সরস্বতী জানান, এরপর ফের দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান ৷ তাঁর কথায়, "দ্বিতীয় বছরে মা বললেন, আমার মূর্তি পুজো করতে হবে ৷ আমার মূর্তি দেখাতে হবে ৷" এরপর থেকেই শুরু হয় প্রতিমা পুজো ৷ তবে সেখানে সাবেকি মন্ত্র পাঠ বা চন্ডীপাঠ হয় না ৷ সাঁওতালি ভাষায় গান গেয়ে, মারাংবুরুর মন্ত্র পাঠ করে আরাধনা করা হয় দেবী দুর্গার ৷ এভাবেই দুর্গাপুজোর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে আদিবাসী সংস্কৃতি ৷

দেখুন ভিডিয়ো

কিন্তু, পুজোর জন্য অর্থ কীভাবে পান ? নিজেদের সাধ্যমতোই চাঁদা তোলেন ৷ জানেনও না হয়তো সরকার অনেক পুজোকে অনুদান দেয় ৷ সেই সাহায্যের ছিটেফোঁটাও পান না তাঁরা ৷ জানলেও অবশ্য ভ্রূক্ষেপ করতেন না তাঁরা ৷ তাঁদের তো সম্বল বলতে নিষ্ঠা ও ভক্তি ৷ আর তার সামনে বারেবারে হার মেনেছে সব প্রতিকূলতা ৷ আর সফলও হচ্ছে তাঁদের সেই অদম্য ইচ্ছা ৷ ক্রমশ এই পুজোকে গ্রহণ করছেন গ্রামের মানুষরা ৷ অনেকেরই ভাবনাচিন্তাতে পরিবর্তনও এসেছে বলে জানান পুজোর সঙ্গে যুক্ত সরস্বতী ৷ বলেন, "এখন মানুষ নিজে খুশি খুশি পুজো দিতে আসেন ৷ অর্ধেক মানুষ মেনে নিয়েছেন ৷ বাকিরা মানেননি ৷ গ্রামের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন ৷" তাঁর আশা, অচিরেই সবাই মেনে নেবেন এই দেবী দুর্গা ও মারাংবুরুর মেলবন্ধন ৷ সেই স্বপ্ন নিয়েই আরও একটা বছর দেবী দুর্গার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন সন্ধ্যা, সরস্বতীরা ৷

Durga Puja
তাঁদের অদম্য জেদেই পার হয়েছে অনেক প্রতিকূলতা

বাঁকুড়া : আদিবাসীদের দেবতা তো মারাংবুরু ৷ আর সেই আদিবাসীরাই কি না দুর্গাপুজো করবেন ! মেনে নেননি অনেকেই ৷ রক্তচক্ষু ছিল গ্রামের মোড়লদেরও ৷ ভয় ছিল, গ্রামে একঘরে হওয়ার ৷ তাতে অবশ্য পিছিয়ে আসেননি বাঁকুড়ার দোমোহানি গ্রামের কয়েকজন আদিবাসী মহিলা ৷ বরং আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে স্বতন্ত্র করে তুলেছেন নিজেদের দুর্গাপুজোকে ৷ আর এভাবেই 14 বছর ধরে মারাংবুরুর মন্ত্র পাঠ করে, সাঁওতালি ভাষায় গান গেয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন ওই মহিলারা ৷

বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার দূরে এই দোমোহানি গ্রাম ৷ 50-60 টি আদিবাসী পরিবারের বাস ৷ সেখানেই থাকেন সন্ধ্যা হেমরম ৷ নিজস্ব ছন্দেই চলছিল তাঁর জীবন ৷ কিন্তু, 14 বছর আগে এক স্বপ্নই পালটে জীবনের গতিমুখ ৷ গ্রামেরই এক বাসিন্দা সরস্বতী হাঁসদা শোনালেন সেই কাহিনি ৷ তিনি বলেন, "একদিন মা স্বপ্নে দেখা দেন ৷ এসে বললেন, তাঁর পুজো করতে হবে ৷ কিন্তু, বলা হয় আদিবাসীদের মধ্যে তো দুর্গাপুজো নেই ৷ তাহলে কেউ যদি কিছু বলে ? মা বলেন, না ৷ আমাকে পুজো দিতেই হবে ৷" তারপর আর সাত-পাঁচ ভাবেননি একেবারে সাদাসিধে প্রকৃতির সন্ধ্যা ৷ এক অদ্ভুত জেদ চেপে বসে তাঁর মধ্যে ৷ পাশে পান আরও কয়েকজন মহিলাকে ৷

Durga Puja
দোমোহানি গ্রাম

কিন্তু, মারাংবুরুয়ের পরিবর্তে গ্রামে দুর্গাপুজো হবে ? তাও আবার কি না মহিলারা করবে সেই পুজো ৷ সায় দেননি গ্রামের মোড়ালরা ৷ পুজো আটকানোর জন্য থানাতেও যান তাঁরা ৷ গ্রামেরই এক বাসিন্দা মতিলাল হাঁসদা বলেন, "ওরা বলে, মানুষ কাটা হচ্ছে ৷ তাই বাধা দেওয়া হচ্ছে ৷ যদিও পুলিশ তদন্ত করে দেখে এরকম কিছু হচ্ছে না ৷ তারপর বড়বাবু বলেন, পুজো করার অধিকার সবার রয়েছে ৷ পুজো হবে ৷ কোনও বাধা দিতে পারবে না ৷ "

Durga Puja
দেবী দুর্গার সামনে মহিলারা

পুলিশের বরাভয় যেন আরও সাহস বাড়িয়ে দেয় সন্ধ্যাদের ৷ শুরু হয় পুজো ৷ অবশ্য প্রতিমা নয়, প্রথম বছর ঘট পুজোই করা হয় ৷ তা অবশ্য মেনে নেননি প্রতিবেশীরা ৷ বাঁকা চোখে তাকাতে থাকেন তাঁরা ৷ কিন্তু,অদম্য জেদ চেপে বসে সন্ধ্যাদের মধ্যে ৷ সরস্বতী জানান, এরপর ফের দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান ৷ তাঁর কথায়, "দ্বিতীয় বছরে মা বললেন, আমার মূর্তি পুজো করতে হবে ৷ আমার মূর্তি দেখাতে হবে ৷" এরপর থেকেই শুরু হয় প্রতিমা পুজো ৷ তবে সেখানে সাবেকি মন্ত্র পাঠ বা চন্ডীপাঠ হয় না ৷ সাঁওতালি ভাষায় গান গেয়ে, মারাংবুরুর মন্ত্র পাঠ করে আরাধনা করা হয় দেবী দুর্গার ৷ এভাবেই দুর্গাপুজোর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে আদিবাসী সংস্কৃতি ৷

দেখুন ভিডিয়ো

কিন্তু, পুজোর জন্য অর্থ কীভাবে পান ? নিজেদের সাধ্যমতোই চাঁদা তোলেন ৷ জানেনও না হয়তো সরকার অনেক পুজোকে অনুদান দেয় ৷ সেই সাহায্যের ছিটেফোঁটাও পান না তাঁরা ৷ জানলেও অবশ্য ভ্রূক্ষেপ করতেন না তাঁরা ৷ তাঁদের তো সম্বল বলতে নিষ্ঠা ও ভক্তি ৷ আর তার সামনে বারেবারে হার মেনেছে সব প্রতিকূলতা ৷ আর সফলও হচ্ছে তাঁদের সেই অদম্য ইচ্ছা ৷ ক্রমশ এই পুজোকে গ্রহণ করছেন গ্রামের মানুষরা ৷ অনেকেরই ভাবনাচিন্তাতে পরিবর্তনও এসেছে বলে জানান পুজোর সঙ্গে যুক্ত সরস্বতী ৷ বলেন, "এখন মানুষ নিজে খুশি খুশি পুজো দিতে আসেন ৷ অর্ধেক মানুষ মেনে নিয়েছেন ৷ বাকিরা মানেননি ৷ গ্রামের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন ৷" তাঁর আশা, অচিরেই সবাই মেনে নেবেন এই দেবী দুর্গা ও মারাংবুরুর মেলবন্ধন ৷ সেই স্বপ্ন নিয়েই আরও একটা বছর দেবী দুর্গার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন সন্ধ্যা, সরস্বতীরা ৷

Durga Puja
তাঁদের অদম্য জেদেই পার হয়েছে অনেক প্রতিকূলতা
Intro:অপরাধ, গ্রামের মোড়লদের বিরুদ্ধে গিয়ে দুর্গা পুজো করা। তাই আজ ও গ্রামের অনেকেই মেনে নেননি তাদের। আসলে ওরা যে আদিবাসী, তাই দুর্গাপূজা ওদের করতে নেই।


Body:বছর 14 আগে মা দুর্গা নাকি দোমহানি গ্রামের মহিলা সন্ধ্যা হেমরম কে স্বপ্ন দেন তার পুজো করার জন্য। এই দোমোহানি গ্রামটি বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি আদিবাসী গ্রাম। এই গ্রামের 50 থেকে 60 টি আদিবাসী পরিবারের বাস। প্রথা অনুযায়ী আদিবাসীদের দেবতা মারাংবুরু তাই মারাংবুরু বদলে গ্রামে দুর্গা পুজো হবে, তাও আবার মহিলা করবে তাতে সায় দেননি গ্রামের মোড়ল কেউই। এমনকি এই পুজো বন্ধ করার জন্য আইনের দ্বারস্থ হন সেই সময় গ্রামের মোড়লেরা। এদিকে সন্ধ্যা দেবীর বক্তব্য, যেহেতু মা দুর্গা নিজে স্বপ্ন দিয়েছেন তার পুজো করার জন্য তাই তিনি পুজো করবেন। নিজের জেদ নিয়ে প্রথম বছর ঘর দিয়ে পুজো করেন সন্ধ্যা দেবী। এরপর নাকি তাকে ফের বলা হয় মূর্তি পূজা করতে। দ্বিতীয় বছর থেকে তিনি শুরু করেন প্রতিমা পুজো। তবে যেভাবে দুর্গাপুজো হয় মন্ত্রপাঠ চন্ডীপাঠ করে, এখানে পুজো একেবারে অন্যরকম পদ্ধতিতে করা হয়। সাঁওতালি ভাষায় গান গেয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন সন্ধ্যা হেমরম সমেত কয়েকজন মহিলা। আজও সেই একই রীতি মেনে আদিবাসী মহিলারা এই গ্রামে দুর্গাপুজো করে চলেছেন। 14 টা বছর পেরিয়ে গেছে তবুও সম্পূর্ণ গ্রামের মানুষেরা এখনো মেনে নেননি সন্ধ্যা দেবীর এই দুর্গাপূজা করার বিষয়টা। নিজেদের সাধ্যমত এবং বেশ কিছু শীর্ষ সমান্তর উপর ভর করে পুজোর ব্যয়ভার বহন করেন তিনি। এদিকে সরকার বাহাদুর জেলায় জেলায় দুর্গাপূজা কমিটি এবং বেশকিছু বনেদি পুজো কেউ আর্থিক সাহায্য শুরু করেছে। সেই সাহায্যের ছিটেফোঁটা এসে পৌঁছয় নি এই আদিবাসী গ্রামের আদিবাসী দুর্গার পুজোর জন্য।


Conclusion:বাইট: সন্ধ্যা হেমরম বাইট: মতিলাল হাঁসদা
Last Updated : Oct 2, 2019, 11:58 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.