বাঁকুড়া, 15 অগস্ট: বাঁকুড়ার ছেন্দাপাথর গ্রাম ৷ একসময় মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর ছিল এই ছেন্দাপাথর ৷ কিন্তু, এই ছেন্দাপাথরের আরও একটি ইতিহাস রয়েছে ৷ শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর স্বদেশী কার্যকলাপের গুপ্ত আস্তানা ছিল এই ছেন্দাপাথরে ৷ যেখানে মাটির একঘরের পিছনে থাকা গভীর গুহার ভিতর চলত তাঁর বিপ্লবী কার্যকলাপ ৷ ক্ষুদিরাম বসু ছাড়াও, বিপ্লবী বারিন ঘোষ এবং নরেন গোঁসাইরা ছেন্দাপাথরের গোপন গুহায় আস্তানা গেড়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের পরিকল্পনা তৈরি করতে ৷ বর্তমানে সেই গোপন আস্তানাকে সামান্য কিছু সংস্কারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করছে প্রশাসন ৷ 77 তম স্বাধীনতা দিবসে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর সেই গোপন আস্তানা ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷
1908 সালের 29 এপ্রিল মেজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা করার আগে, বর্তমান বাংলা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানার কাছে বাঁকুড়ার ছেন্দাপাথর গ্রামের গভীর জঙ্গলে গোপন আস্তানা তৈরি করেছিলেন বিপ্লবী শহিদ ক্ষুদিরাম বসু ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিপ্লবী বারিন ঘোষ এবং নরেন গোঁসাই ৷ তাঁরা ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য ছেন্দাপাথরের গভীর জঙ্গলে একটি কুঁড়ে ঘরের পিছনে থাকা গুহায় নিজেদের গোপন ডেরা তৈরি করেছিলেন ৷ ব্রিটিশ পুলিশের নজর এড়িয়ে সেখানেই চলত তাঁদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং বোমা তৈরির কাজ ৷ মাটির প্রলেপ দেওয়া বোমা সেই গুহায় বসে তৈরি করতেন ক্ষুদিরাম বসু ৷ আর তা ছড়িয়ে পড়ত বাংলা ও আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৷
ছেন্দাপাথর হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক পরিক্ষিত মাহাতো জানান, তৎকালীন অম্বিকানগরের রাজা ছিলেন রায়চরণ ধবলদেব ৷ তিনি এবং তাঁর সহকারি জমিদাররা বিপ্লবীদের গোপনে আস্তানা দিতেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ৷ ক্ষুদিরাম বসুকে সেই গুহায় গোপন ডেরা তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন অম্বিকানগরের রাজা রায়চরণ ধবলদেব ৷ বাঁকুড়া শহর থেকে 85 কিলোমিটার দূরে শাল ও সেগুনের জঙ্গলের ভিতরে ছেন্দাপাথরের এককোণায় আজ রয়েছে ক্ষুদিরাম বসুর সেই গোপন আস্তানা ৷
আরও পড়ুন: অনাদরে নারকেলবেড়িয়ার বাঁশের কেল্লা নড়বড়ে স্কুল, স্বাধীনতা দিবসে স্মরণে তিতুমীর
তবে, আগের সেই কুঁড়ে ঘরের মাটির দেওয়াল আর নেই ৷ আর না আছে গুহার মুখ ৷ বদলে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে সামান্য সংস্কার করে মাটির দেওয়াল সরিয়ে পাকা দেওয়াল তুলে সেই জায়গাটিকে ঘিরে ফেলা হয়েছে ৷ ফলক তৈরি করে লেখা হয়েছে, ‘বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর গুপ্ত ঘাঁটি’ ৷ আর গুহার মুখে কুঁয়ো তৈরি করে সেটিকে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তবে, তা আরও ভালোভাবে সংরক্ষিত করে পর্যটন ক্ষেত্র তৈরির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা ৷