বাঁকুড়া, 23 মার্চ : বাঁকুড়া শহর থেকে 4 কিলোমিটার দূরে ছোটো গ্রাম বিকনা ৷ শিল্পকলার গ্রাম ৷ শিল্পীদের গ্রাম ৷ আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শিল্পসত্ত্বা ৷ লোকে বলে ডোকরা গ্রাম ৷ গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছোটো ছোটো বাড়ি-ঘর ৷ যেখানে মহিষাসুরমর্দিনী, সরস্বতী, মা লক্ষ্মী, গণেশসহ নানা ধরনের মূর্তিকে পিতলের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা । আর এই ডোকরা দিয়ে নিজেদের ঘর সাজিয়ে তুলছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা ৷
ডোকরা প্রাচীন শিল্প ৷ যার ঐতিহ্য বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে ৷ বাঁকুড়ার এই ডোকরা গ্রাম তার মধ্যে অন্যতম ৷ কিন্তু, কয়েকদিন আগেও গ্রামের শিল্পীদের অবস্থা ততটা ভালো ছিল না ৷ লাভের মুখ তো দূরের কথা, শিল্পীদের একসময় অভাবে দিন কাটাতে হয়েছে ৷ কিন্তু এখন ছবিটা অন্যরকম ৷ রাজনীতির পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ডোকরার চাহিদা বেড়েছে ৷ বাঁকুড়ার এই প্রান্তিক শিল্প তালুকে বেড়েছে পর্যটকদের আনা-গোনাও ৷ গড়ে উঠেছে গেস্ট হাউস ৷ আরও কর্মমুখী হচ্ছে মানুষ ৷
লক্ষ্মী কর্মকার নামে এক ডোকরা শিল্পী জানাচ্ছেন, আগে কাজ ছিল না ৷ এখন আমাদের কাজ ভালো চলছে ৷ বিশ্ব বাংলা থেকে আমরা ভালো অর্ডার পাচ্ছি ৷ নেটেও আমাদের প্রচার হয়েছে ৷ দেশ-বিদেশ থেকে লোক আসছে ৷ সেই কারণে আমাদের অসুবিধা হয়নি ৷ বেশ ভালোই চলছে ৷
তপন সিংহ নামে আর এক ডোকরা শিল্পী জানাচ্ছেন, আগের থেকে ডোকরার অবস্থা ভালো ৷ সরকারি তরফেও প্রচুর অর্ডার আসে ৷ ক্ষুদ্র শিল্পের উপরে আমরা অনেক সাহায্য পাচ্ছি ৷ আগে তো কোনও মেয়ে বাইরে যেতে পারত না ৷ এখন মেয়েরাও বাইরে গিয়ে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করছে ৷ আগের থেকে এখন অনেকটাই ভালো পরিস্থিতি ৷
আরও পড়ুন, এক গুজরাতির হাতে হিন্দি ভাষায় ইস্তাহার প্রকাশ ; কটাক্ষ ডেরেকের
আগে খুব কম মানুষ এই ডোকরা গ্রামের কথা জানতেন ৷ কিন্তু, নেট দুনিয়ায় প্রচারের পর থেকে এখন বহু মানুষ এই গ্রামের ডোকরার কথা জেনেছেন ৷ তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে আসছেন ৷ এমনকি, বিদেশি পর্যটকরাও আসছেন ৷ পছন্দমতো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঘর সাজানোর সুন্দর সুন্দর ডোকরার মূর্তি ৷ সব মিলিয়ে বাঁকুড়ার বিকনার ডোকরা শিল্পীরা ভালো আছেন ৷ তাঁদের চোখে এখন এক আকাশ স্বপ্ন ৷ ডোকরা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ৷ সেই স্বপ্ন নিয়ে শিল্পীরা আরও প্রাণ খুলে বাঁচুক ৷