সিনেমা পাড়া (বাঁকুড়া), 9 জুলাই : স্মৃতি হয়ে গেছে হাউজ়ফুল, ম্যাটিনি-ইভনিং-নাইট শব্দগুলো ৷ সিনেমা হল কেন্দ্রীক আনন্দ-কলরব প্রয়াত ৷ একরাশ মনকেমন নিয়ে একা পড়ে আছে বাঁকুড়ার কয়েক প্রজন্মের বিনোদনের ঠিকানা ৷
চণ্ডীদাস চিত্র মন্দির ৷ বাঁকুড়ার সিনেমা পাড়ার সিনেমা হলটির নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ তাঁর হাতেই 1940-এর 2 মার্চে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় হলটির ৷ তারপর সাদা-কালো থেকে রঙিন ৷ মায়াবী পর্দায় দীর্ঘ সময়ের যাত্রা ৷ সেই চিত্র মন্দির এখন আগাছার ঠিকানা ৷ ভাঙা জানলা-দরজা, হানাবাড়ি প্রায় ৷
হলের প্রতিষ্ঠাতা বাঁকুড়ার বিখ্যাত দত্ত পরিবারের সদস্যদের স্বদেশী আন্দোলনেও ভূমিকা ছিল ৷ 1940 সাল ৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বাঁকুড়ায় । এসেছেন তদানীন্তন বর্ধমান বিভাগের কমিশনার ও বাঁকুড়ার জেলাশাসক সুধীন্দ্রকুমার হালদার মশাইয়ের স্ত্রী শ্রীমতি উষা হালদারের আমন্ত্রণে । বাঁকুড়া শহরে তখন সদ্য নির্মিত হয়েছে একটি মনোরম প্রেক্ষাগৃহ । 1940-এর 2 মার্চ সকালে সেই প্রেক্ষাগৃহে বাঁকুড়াবাসী অভ্যর্থনা জানায় কবিকে ৷ এদিন মধ্যযুগের কবি বড়ু চণ্ডীদাস সম্পর্কে বলেন রবীন্দ্রনাথ । উদ্বোধন করেন চিত্র মন্দিরটির ৷ এর পর আট দশকের ইতিহাস ৷ কত হিন্দি-বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে চণ্ডীদাস চিত্র মন্দিরে ৷ বাঁকুড়ার প্রথম সিনেমা হলের রমরমাতেই এলাকাটি হয়ে ওঠে 'সিনেমা পাড়া' ৷ সেখানেই আজ শ্মশানের স্তব্ধতা ৷ জনতার ঢল নেই ৷ তাই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন দোকানিরাও ৷ যাঁরা টিকে আছেন তাঁদের আয় তলানিতে ৷ মন খারাপ স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷
স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক যশবন্ত সিং বলেন, "এই হলেই ঠাকুমাকে প্রথমবার দেখেন আমার ঠাকুরদা ৷ আমরাও বড় হয়ে এই সিনেমা হলেই সিনেমা দেখেছি ৷ অসংখ্য স্মৃতি ৷ মন খারাপ হয় ৷"
আরও পড়ুন: ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি
তুলনায় তরুণ প্রজন্মের বিমান মিশ্রর কথায়, "আমরা আনন্দ করে কত সিনেমা দেখতে এসেছি এখানে ৷ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও দোকান তুলে দিচ্ছেন ৷ খারাপ তো লাগবেই ৷"
কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসা রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য চণ্ডীদাস চিত্র মন্দিরকে যদি ফের বাঁচানো যায়, তাহলে ভাল হয় ! স্বপ্ন দেখেন চণ্ডীদাস চিত্র মন্দিরের এককালের দর্শকেরা ৷ মাল্টিপ্লেক্স আর স্মার্টফোনের যুগে তা কি আদৌ সম্ভব ? উত্তর দেবে সময় ৷