ETV Bharat / state

আমায় কেটে ফেলো, গাছ কেটো না ; বলছেন 'গাছদাদু' - sarenga's Gachh Dadu

তখন সবে আটে পড়েছেন শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় । বাবা তাঁকে নিয়ে গেলেন বাড়ির কাছে একটি এলাকায় । বললেন, আজ একটা এমন কাজ শেখাবেন যা প্রতিদিন শ্যামাপদ বাবুকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে রাখবে । আট বছরের শ্যামাপদবাবু অবাক হয়ে শুনেছিলেন সেদিন । জীবনের প্রথম গাছটা লাগিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে । সেদিন থেকে রোজ এক-একটা নতুন প্রাণ সঞ্চার করছেন সারেঙ্গায় ।

gachh dadu
গাছদাদু
author img

By

Published : Mar 10, 2020, 8:50 AM IST

Updated : Mar 10, 2020, 9:06 AM IST

সারেঙ্গা, 10 মার্চ : এলাকায় 'গাছদাদু' বলেই খ্যাত তিনি । বয়স যখন সবে আট, সেইসময় থেকেই গাছ লাগাচ্ছেন । তারপর ? বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকে রাস্তার দু'ধারে যে গাছগুলি রয়েছে তার প্রায় সবই শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের । গাছপ্রেমী এই মানুষটিকে এই উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে বলেন, বাবা শিখিয়েছিলেন ।

তখন সবে আটে পা দিয়েছেন শ্যামাপদ বাবু । একদিন বাবা তাঁকে নিয়ে গেলেন বাড়ির কাছে । বলেছিলেন, আজ একটা এমন কাজ শেখাবেন যা প্রতিদিন শ্যামাপদ বাবুকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে রাখবে । আট বছরের শ্যামাপদ অবাক হয়ে শুনেছিলেন সেদিন । তারপর বাবার সঙ্গে জীবনের প্রথম গাছটা লাগিয়েছিলেন । সেই সেদিন থেকে প্রায় রোজ এক-একটা করে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছেন সারেঙ্গায় । তারপর অনেকগুলি বছর কেটে গেছে । বছর 72-র শ্যামাপদ বাবু হয়ে উঠেছেন এলাকার 'গাছদাদু' । কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছেন । তাঁর হাত ধরে সারেঙ্গা এখন সবুজ-রঙিন । বৃক্ষরক্ষায় তাঁর বার্তা, "আমায় কেটে ফেলুক, কিন্তু আমার গাছ যেন না কাটে ।"

এখন সংসার বলতে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তাঁদের পরিবার । সামান্য কিছু জমি-জমা রয়েছে । সেখানেই চাষবাস । সংসার চলে যায় । মূলত বিভিন্ন পুকুরের পাড়, রাস্তার ধার এবং সরকারি জায়গায় তিনি নিরন্তর গাছ লাগিয়ে চলেছেন । অধিকাংশই তালগাছ । কারণ গরু, ছাগল ইত্যাদি তালগাছ খেয়ে নষ্ট করে না । গাছগুলিকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে হয় না । এছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন সারেঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় ।

প্রথমেই গাছদাদুর এই পদক্ষেপে সায় দেয়নি পরিবার । ছিল বিরোধীরাও । উঠেছিল অধিকারের প্রশ্ন । পরিবারের অভিযোগ ছিল, সংসারে সময় দিতে পারেন না । খালি গাছ নিয়েই ব্যস্ত । কিন্তু সেই অভিযোগও একদিন সবাই ভুলে গিয়েছে । বিরোধীরাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । গাছপ্রেমী মানুষটার ইচ্ছে, স্বপ্নকে মেনে নিয়েছে । আজ সকলেই খুশি । তার এই পদক্ষেপ তাঁকে এক নতুন পরিচয় এনে দেবে সে কথা হয়তো শ্যামাপদ বাবু নিজেও কোনদিন ভাবতে পারেননি ।

গাছ লাগাতে খুব ভালবাসেন শ্যামাপদ বাবু । কিন্তু শুধুই কি ভালবাসা না কি অন্য কারণও আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আমি দেখেছি স্বার্থত্যাগ করে যদি আমি এই কাজে জীবন উৎসর্গ করি তবে মানুষের উপকার হবে । মানুষ অক্সিজেন পাবে । ফল পাবে । আমার জন্মভূমিতে আমি ছাপ রেখে যেতে চাই । আমি চলে যাব ৷ কিন্তু আমার স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে যাবে এই গাছগুলি । জলের অপচয় হচ্ছে, পরিবেশদূষণ হচ্ছে । আমার মত আরও চার পাঁচজন যদি এগিয়ে আসত তবে পরিবেশ আরও ভাল হত । "

ইতিমধ্যে শ্যামাপদবাবুকে সম্মানিত করেছে ব্লক প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসন । উদ্বুদ্ধ এলাকার বাসিন্দারাও । স্থানীয় যুবকরা গ্রিন আর্মি নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন শুধু তাঁকে সাহায্য করার জন্য । গ্রিন আর্মি সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা আশিস পাল জানিয়েছেন, ''যেভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে । তার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, গাছ লাগানো । তাই আমরা সবাই শ্যামাপদবাবুর পাশে রয়েছি । তাঁকে সাহায্য করতে চাই । তিনি এখনও পর্যন্ত চার হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন ।''

প্রতিদিনের মতো আজও সকালে উঠে বেরিয়ে পড়েছেন গাছদাদু । হাতে একটা চারাগাছ । অন্যহাতে জল । রাস্তার ধারে মাটি খুঁড়ে চার গাছ লাগিয়েছেন । জল দিচ্ছেন । করছেন আরও একটা প্রাণ সঞ্চার । দুহাতে আগলাচ্ছেন গাছ, পরিবেশের সবুজ । গাছকে আঘাত করতে চাইলে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি । বলছেন, ''আমায় কেটে ফেলো । গাছদের কেটো না ।''

সারেঙ্গা, 10 মার্চ : এলাকায় 'গাছদাদু' বলেই খ্যাত তিনি । বয়স যখন সবে আট, সেইসময় থেকেই গাছ লাগাচ্ছেন । তারপর ? বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকে রাস্তার দু'ধারে যে গাছগুলি রয়েছে তার প্রায় সবই শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের । গাছপ্রেমী এই মানুষটিকে এই উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে বলেন, বাবা শিখিয়েছিলেন ।

তখন সবে আটে পা দিয়েছেন শ্যামাপদ বাবু । একদিন বাবা তাঁকে নিয়ে গেলেন বাড়ির কাছে । বলেছিলেন, আজ একটা এমন কাজ শেখাবেন যা প্রতিদিন শ্যামাপদ বাবুকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে রাখবে । আট বছরের শ্যামাপদ অবাক হয়ে শুনেছিলেন সেদিন । তারপর বাবার সঙ্গে জীবনের প্রথম গাছটা লাগিয়েছিলেন । সেই সেদিন থেকে প্রায় রোজ এক-একটা করে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছেন সারেঙ্গায় । তারপর অনেকগুলি বছর কেটে গেছে । বছর 72-র শ্যামাপদ বাবু হয়ে উঠেছেন এলাকার 'গাছদাদু' । কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছেন । তাঁর হাত ধরে সারেঙ্গা এখন সবুজ-রঙিন । বৃক্ষরক্ষায় তাঁর বার্তা, "আমায় কেটে ফেলুক, কিন্তু আমার গাছ যেন না কাটে ।"

এখন সংসার বলতে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তাঁদের পরিবার । সামান্য কিছু জমি-জমা রয়েছে । সেখানেই চাষবাস । সংসার চলে যায় । মূলত বিভিন্ন পুকুরের পাড়, রাস্তার ধার এবং সরকারি জায়গায় তিনি নিরন্তর গাছ লাগিয়ে চলেছেন । অধিকাংশই তালগাছ । কারণ গরু, ছাগল ইত্যাদি তালগাছ খেয়ে নষ্ট করে না । গাছগুলিকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে হয় না । এছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন সারেঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় ।

প্রথমেই গাছদাদুর এই পদক্ষেপে সায় দেয়নি পরিবার । ছিল বিরোধীরাও । উঠেছিল অধিকারের প্রশ্ন । পরিবারের অভিযোগ ছিল, সংসারে সময় দিতে পারেন না । খালি গাছ নিয়েই ব্যস্ত । কিন্তু সেই অভিযোগও একদিন সবাই ভুলে গিয়েছে । বিরোধীরাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । গাছপ্রেমী মানুষটার ইচ্ছে, স্বপ্নকে মেনে নিয়েছে । আজ সকলেই খুশি । তার এই পদক্ষেপ তাঁকে এক নতুন পরিচয় এনে দেবে সে কথা হয়তো শ্যামাপদ বাবু নিজেও কোনদিন ভাবতে পারেননি ।

গাছ লাগাতে খুব ভালবাসেন শ্যামাপদ বাবু । কিন্তু শুধুই কি ভালবাসা না কি অন্য কারণও আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আমি দেখেছি স্বার্থত্যাগ করে যদি আমি এই কাজে জীবন উৎসর্গ করি তবে মানুষের উপকার হবে । মানুষ অক্সিজেন পাবে । ফল পাবে । আমার জন্মভূমিতে আমি ছাপ রেখে যেতে চাই । আমি চলে যাব ৷ কিন্তু আমার স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে যাবে এই গাছগুলি । জলের অপচয় হচ্ছে, পরিবেশদূষণ হচ্ছে । আমার মত আরও চার পাঁচজন যদি এগিয়ে আসত তবে পরিবেশ আরও ভাল হত । "

ইতিমধ্যে শ্যামাপদবাবুকে সম্মানিত করেছে ব্লক প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসন । উদ্বুদ্ধ এলাকার বাসিন্দারাও । স্থানীয় যুবকরা গ্রিন আর্মি নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন শুধু তাঁকে সাহায্য করার জন্য । গ্রিন আর্মি সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা আশিস পাল জানিয়েছেন, ''যেভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে । তার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, গাছ লাগানো । তাই আমরা সবাই শ্যামাপদবাবুর পাশে রয়েছি । তাঁকে সাহায্য করতে চাই । তিনি এখনও পর্যন্ত চার হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন ।''

প্রতিদিনের মতো আজও সকালে উঠে বেরিয়ে পড়েছেন গাছদাদু । হাতে একটা চারাগাছ । অন্যহাতে জল । রাস্তার ধারে মাটি খুঁড়ে চার গাছ লাগিয়েছেন । জল দিচ্ছেন । করছেন আরও একটা প্রাণ সঞ্চার । দুহাতে আগলাচ্ছেন গাছ, পরিবেশের সবুজ । গাছকে আঘাত করতে চাইলে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি । বলছেন, ''আমায় কেটে ফেলো । গাছদের কেটো না ।''

Last Updated : Mar 10, 2020, 9:06 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.