জলপাইগুড়ি, 22 এপ্রিল : জলকষ্টে ভুগছেন ভারত-ভুটান সংলগ্ন আলিপুরদুয়ার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা (Water Scarcity in the Indo-Bhutan Border Area of Alipurduar) । শুকিয়ে গিয়েছে কুয়ো, নলকূপ থেকেও জল উঠছে না । এমন পরিস্থিতিতে দু-একটি নলকুপ রয়েছে অবশ্য রয়েছে, কিন্তু তার থেকে জল সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয়দের । আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম বিধানসভার তুরতুরী বেলতলা এলাকায় এই জলকষ্টের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানও ।
কিন্তু কেন এই জলকষ্ট ? পরিবেশকর্মী ও ভূগোলের শিক্ষকরা এর জন্য অবৈধভাবে নদী থেকে বালি, পাথর উত্তোলনকেই দায়ী করছেন (Illegal Mining Creating Scarcity of Water) । প্রশাসনিক নজরদারির অভাবেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । যদিও বেশ কয়েকবার জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের থেকে ধরপাকড় করা হয়েছে ৷ কিন্তু পরিস্থিতির হেরফের হয়নি বলেই অভিযোগ ৷ কিন্তু প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন ভূগোলের শিক্ষক বাবুন দাস ৷
কুমারগ্রাম বিধানসভা এলাকায় অবৈধভাবে নদী থেকে বালি পাথর তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের । ইতিমধ্যেই কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ ওঁরাও এই বিষয়ে সরব হয়েছেন (Kumargram MLA Raised this Issue) । রায়ডাক নদীতে অবৈধভাবে নদী বাঁধ তোলার অভিযোগও উঠেছে । একটা সময় ওই এলাকায় জল শুকিয়ে যেত । কিন্তু বিগত দশ বছর ধরে সেটা অনেকটা কম ছিল । সাম্প্রতিককালে যেভাবে নদীতে খনন হচ্ছে, প্রকৃতির ওপর অত্যাচার হচ্ছে, তাতে সেই জলকষ্টের সমস্যা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষজন ।
তুরতুরী বেলতলা এলাকায় বাসিন্দা তথা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অলোকা বোস বলেন, ‘‘প্রায় দু’মাস ধরে জলকষ্টে ভুগছি আমরা । জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে বারবার বলা সত্ত্বেও জলের কোনও সমস্যার সমাধান হল না ।’’ দুলালি দেবদাস, পাখি দেবদাস বলেন, ‘‘দুইমাস ধরেই জল নেই । দূরের থেকে জল নিয়ে আসতে হয় । আমরা খুব জলের কষ্টে ভুগছি । জলের সমস্যার সমাধান হলে ভালো হয় ।’’ এলাকার যুবক রোহিত সোম বলেন, ‘‘পাহাড়ের পাদদেশে বলে আমাদের এখানে জলস্তর নিচে । তবে এলাকা এবার জলের খুব কষ্ট জল নেই । খনন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য এটা হতে পারে ।’’
জলপাইগুড়ির পরিবেশ প্রেমী স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘ভুটান পাহাড়ে যথেচ্ছে ভাবে ডলোমাইট উত্তোলন-সহ সেখান থেকে নেমে আসা নদীতে অবৈধভাবে খনন করানো হচ্ছে ৷ ফলে প্রকৃতির ওপর একটা চাপ বাড়ছে ৷ যার ফলেই এই সমস্যাগুলো চরমে উঠেছে । তাছাড়া নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে । নদীর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ এতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে ।’’
তুরতুরী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীনা মঙ্গর ইয়োলমো বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় জলের সমস্যা আছে । প্রচুর জায়গায় কুয়োতে জল শুকিয়ে গিয়েছে । আমরা কিছু কিছু জায়গায় নলকূপ ও কুয়োর ব্যবস্থা করছি । তবে আমাদের এখানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মাধ্যমে জলের কোনও ব্যবস্থা নেই । তবে আমাদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বৈঠক হয়েছে জল স্বপ্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা জল পৌঁছে দেবে ।’’
আরও পড়ুন : Bhutia Basti Relocation : বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে সরছে ভুটিয়া বস্তি