জলপাইগুড়ি, 8 অক্টোবর: ভুটান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদীর হড়পা বানে (Harpa Ban) নিশ্চিন্ন হয় ভারতের ভিটেমাটি । ভুটানে কত বৃষ্টি হচ্ছে তা জানতে পারে না ভারত ৷ ফলে ভুটান থেকে নেমে আসা ভারতের নদীতে হড়পা বানে বিপদে পড়ে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার ডুয়ার্সের বিস্তৃর্ণ এলাকার মানুষজন । হড়পা বানের আগাম সতর্কতা না থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের উদ্ধার করতে বা সরিয়ে নিতে হিমসিম খায় জেলা প্রশাসন । একইভাবে ভুটানের জলের হড়পা বানে মালবাজারের বিসর্জন ঘাটে 8 জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । ইতিমধ্যে হড়পা বানে মালবাজারের ঘটনা প্রশাসন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এখনই ভুটানের সঙ্গে কথা না-বলা হলে ভবিষ্যতে বিপদ আরও বাড়তে পারে ।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বর্ডার কো-অর্ডিনেশন (Border Co-ordination) মিটিংয়ে হড়পা বানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে । যাতে বৃষ্টির আগাম সতর্কতা পাওয়া যায় । তারা ভুটানের সঙ্গে কথা বলে ভারত-ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকায় রেইনগেজ সিস্টেম বসানোর বিষয়ে আলোচনা করবে । যার ফলে উদ্ধার কাজ করতে অসুবিধা না হয় । কারণ হঠাৎ করে নদীতে জল বেড়ে যাবার ফলে উদ্ধার করতে বা নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে অনেক সময় লাগে এবং হঠাৎ জল বেড়ে গেলে প্রশাসনের সরিয়ে নেবার কাজটা চ্যালেঞ্জ হয়ে পরে । তাই আমরা চাইছি ভুটানের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি কথা বলে আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা নেবার ।
আরও পড়ুন: কৃত্রিমভাবে নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণেই এই বিপত্তি, থানায় অভিযোগ
প্রতি বছরই ভুটানের জলে প্লাবিত হয় ভারত । ভুটান থেকে বৃষ্টির আগাম সতর্কবার্তা ভারতকে দিতে না পারার দরুন ভুটান পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির জেরে প্রায়শই প্লাবিত হয় আলিপুরদুয়ার জেলার বাসরা, কালজানি, সংকোশ, বিরবিটি, হাউরি, রেতি, সুকৃতি-সহ জলপাইগুড়ি জেলার জলঢাকা, ডায়না, বানারহাট, নাগরাকাটা, বিন্নাগুড়ি, চামুর্চি-সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা । অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার জেলার জঁয়গা, কালচিনি, বীরপাড়া, মাদারিহাট ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় ।
মালবাজারের মালনদীতে বিসর্জনের দিনে হড়পা বানের বা পাহাড়ে কত বৃষ্টি হচ্ছে তা জানতে পারার দরুণ ঘাটের কাউকেই আগাম সতর্ক করা যায়নি। ফলে মালবাজারের মাল নদীতে বিসর্জন চলাকালীন হড়পা বানে মৃত্যু হয় 8 জনের । শুধু মালবাজারের ঘটনা প্রথম নয়, চলতি বছরই 30 জুন হড়পা বানে আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী নদী পারাপারের সময় এক বিজেন্দার কুমার সিং (25) নামে এক এসএসবি জওয়ান তলিয়ে যান । জানা যায়, এসএসবি জওয়ানদের একটি দল বক্সার ভুটিয়া বস্তির দিক থেকে রেশন নিতে জয়ন্তী এসএসবি ক্যাম্পে যাচ্ছিলেন, নদীতে নেমে জয়ন্তী ক্যাম্পের দিকে আসার সময় হঠাৎই নদীর জল বেড়ে যায় । পাহাড়ি জয়ন্তী নদীর হড়পা বান চলে আসে । জলের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় জওয়ানকে ।
চলতি বছর 29 মে নদীতে নেমে হড়পা বানে তলিয়ে যায় নাগরাকাটা গাঠিয়া বাগানের সিনিয়র ফ্যাক্টরি ম্যানেজার রূপক বিশ্বাসের স্ত্রী ও কন্যা ৷ মৃতদের নাম ক্যামেলিয়া বিশ্বাস (38) ও রজনীয়া বিশ্বাস (13) ৷ নদীতে নেমে জলোচ্ছ্বাসের মুখে পড়েছিলেন আরও 6 জন ।
আরও পড়ুন: বিসর্জনের মৌন যাত্রা, মালবাজারের ঘটনায় মৃতদের শ্রদ্ধা জানাল জলপাইগুড়ি
আলিপুরদুয়ার জেলার ফাঁসখাওয়া চা-বাগানের বাসিন্দা প্রয়োজিত সরকার বলেন, "আমরা ভুটান থেকে নেমে আসা ফাঁসখাওয়া নদীতে হড়পা বানে মাঝে মধ্যেই পরি । এমনও দিন গেছে নদীর মাঝে ইলেক্ট্রিক খুঁটিতে বাইক বেঁধে বাইকের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম । আমরা চাই দুই দেশের সরকার যেন আমাদের হড়পা বান নিয়ে সতর্কতা জারি করে । যাতে করে এমন হড়পা বানের সম্মুখীন না-হতে হয় ।"