ETV Bharat / state

ইতিহাস বুকে নিয়ে জঙ্গলের ঘেরাটোপে নল রাজার গড়

আলিপুরদুয়ারের নল রাজার গড় । ইতিহাসেই এই নামেই পরিচিত ধ্বংসপ্রায় দুর্গটি । দুর্গটি কবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে বহু মত । তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে এই দুর্গটি ।

aa
নল রাজার গড়
author img

By

Published : Jun 16, 2020, 7:32 AM IST

Updated : Jun 20, 2020, 10:36 PM IST

আলিপুরদুয়ার, 15 জুন: আলিপুরদুয়ার জেলা শহর থেকে মাত্র 20 কিলোমিটার দূরে চিলাপাতার গভীর জঙ্গল । সেখানে কোনও মতে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছে ভগ্নপ্রায় এক দুর্গ । চিলাপাতার নল রাজার গড় বা দুর্গের প্রাচীনত্ব নিয়ে রয়েছে বহু মত । কারও মতে এই দুর্গ তৈরি হয়েছে গুপ্ত যুগে । কারও মতে আবার এই দুর্গ কোচ রাজা প্রাণনারায়ণ তৈরি করেছিলেন । মতভেদ যাই হোক না কেন এই দুর্গ আজ অস্তিত্ব সংকটে । নেই কোনও সংরক্ষণ । দুর্গকে আজ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে বুনো গুল্ম ,লতাপাতা ।

এই দুর্গকে জড়িয়ে রয়েছে নানা রূপকথা । গল্প কথা প্রচলিত স্থানীয় আদিবাসী সমাজে । তবে এই দুর্গের ইতিহাসের সঠিক তথ্য নিয়ে বির্তক রয়েছে । চিলাপাতা রেঞ্জ অফিস থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গভীর জঙ্গলে এই নলরাজার গড় । গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক । ক্রমশ বাড়তে থাকে জঙ্গলের গভীরতা । সূর্যের আলো প্রবেশ করে না । বাতাসে ভেসে বেড়ায় বুনো পশুদের গন্ধ । সবুজের পাকদণ্ডীর প্রতিপদে ধূসর রাস্তা যেন মিলিয়ে যায় । জঙ্গলের নির্জনতা আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মিলেমিশে যায় এক সঙ্গে । কাছেই নল রাজার দুর্গ । বয়সের ভারে ন্যুব্জ সেই গড়ের গোটা দেহই আজ ভগ্নপ্রায় । পোড়া মাটির ইটের তৈরি সেই দুর্গের খাঁজে খাঁজে বিষাক্ত মাকড়শা । সাপেদের নির্জন ডেরা । ঘাসে ঘাসে জোঁকের ছড়াছড়ি । গড়ের আশপাশ ঘুরলেই স্পষ্ট অনুভব করা যাবে কোনও এককালে এখানে অনেক মানুষের বসবাস ছিল । পোড়ামাটির ইট দিয়ে জঙ্গলের এক বিরাট অংশ সুরক্ষিতভাবে ঘেরা ছিল । ধারণা, শত্রু এবং বুনো পশুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পোড়া মাটির ইট দিয়ে এই দেওয়াল নির্মাণ হয়েছিল । স্নানের জন্য একটি পুকুরও খনন করা হয়েছিল সেইকালে । জঙ্গলের মধ্যে যা আজও বর্তমান । তবে তা আজ একবারেই পরিত্যক্ত । এই নল রাজার গড়ের টানে প্রতিবছর হাজারে হাজারে পর্যটক ভিড় জমান চিলাপাতার জঙ্গলে । যদিও এই গড়ের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে বির্তক থাকলেও পর্যটকদের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ।

aa
আগাছায় ঢেকেছে ভগ্নপ্রায় দুর্গ

তবে নল রাজার গড় নিয়ে অনেক ইতিহাসই লোকমুখে ঘোরাফেরা করে । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা শোনা যায় তা হল গুপ্তযুগে নল রাজার আদেশে এই দুর্গ তৈরি হয় । তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর বীর চিলা রায় গভীর এই জঙ্গলে ভুটান সেনাদের আগ্রাসন রুখতে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন । এই দুর্গ থেকে ভুটান সৈনিকদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ করা হত । এই দুর্গে হাজার হাজার স্বশস্ত্র সৈনিক রাখা হত । চিলা রায়ের নামেই চিলা পাতার জঙ্গল নাম হয় । দুর্গটি নল রাজার নামে নামকরণ হয়ে যায় । আবার অন্য একটি মতে মহাভারতের নল দময়ন্তীর উপাখ্যানের নল রাজা আর এই নল রাজা একই ব্যক্তি । যদিও এই মতবাদের পক্ষে কোনও যুক্তি নেই বলেই মনে করা হয়ে থাকে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই দুর্গটি আজ পুরোপুরিভাবে ধ্বংসের মুখে । বন বিভাগ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সমন্বয়ের অভাবে আজ এই ঐতিহাসিক দুর্গটি গভীর অরণ্যের নির্জনতায় বিলীন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ।

হারিয়ে যেতে বসেছে নল রাজার গড়

এই বিষয় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ প্রমোদ নাথ । তিনি বলেন, "আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে নির্দশন হিসেবে উল্লেখযোগ্য তিনটি স্থান । সেগুলি হল বক্সার দুর্গ, মেন্দাবাড়ির গড় বা নল রাজার গড়, মসিদখানার মসজিদ । নল রাজার গড় সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় তা হল আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক জে সি সেনগুপ্ত এবং জলপাইগুড়ির জেলাশাসক কোরোনাকেতন সেন 1951 সালে প্রথম সরকারি নজরে আনেন চিলাপাতার গভীর জঙ্গলের এই ভগ্নপ্রায় দুর্গকে । এর প্রায় 10-12 বছর পর 1966-1967 সালে তৎকালীন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশক পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত এই গড়টি পরিদর্শনে আসেন । তিনমাস ব্যাপী এখানে খনন কার্য চালান । পরে বর্ষা এসে যাওয়ার খনন কার্য স্থগিত হয়ে যায় । পরবর্তীকে এই নলরাজার গড় সম্বন্ধে আর তেমন কোনও অনুসন্ধান হয়নি । তবে লোকমুখে এই গড় সম্বন্ধে নানাবিধ কথা শোনা যায় ।" পরেশ দাশগুপ্ত অরণ্য ছায়ায় দুর্গ নামে একটি বইয়ে এই নল রাজার গড় নিয়ে লিখেছেন । বইয়ের লেখা কিছু অংশ পাঠ করেন প্রমোদবাবু । সেই লেখা দেখে তিনি পড়েন, "মূল উদিচ্চ রেখা থেকে প্রায় 300 ডিগ্রি পূর্ব কোণে প্রসারিত এই গড় । গড়ের ধ্বংসাবশেষটি অবস্থিত 89.22 অক্ষরেখা এবং 23.23 দ্রাঘিমায় অবস্থিত । কিছুটা লম্বাকৃতি ও চতুষ্কোণে দুর্গটি উত্তর পূর্ব অংশে একটি ক্ষুদ্রতর চতুষ্কোণের মতো বিচ্ছিন্ন । মধ্যের অধুনা পরিখাটি পূর্ব দিকে গভীর অরণ্যের মধ্যে এঁকেবেঁকে মিলিত হয়েছে বানিয়া নদীর সঙ্গে । এই পরিখার অপর অংশটি মিলিত হয়েছে সুগঠিত প্রাকারের ওপারে দুর্গের বিস্তার পথ অনুসারে পরিখাতে অথবা কৃত্রিম জলখাতে । স্থানে স্থানে সিঁড়িযুক্ত এই সমকোণ বাহু বিশিষ্ট L আকৃতির পরিখাটি চওড়ায় 13.20 মিটার । এর দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গের অংশটি 113.80 মিটার । প্রস্থে 41.40 মিটার । নলরাজার গড়ের সুদৃশ্য প্রাচীর অথবা প্রকার এই অঞ্চলের এক বিশিষ্ট পুরাকীর্তি ।"

তিনি আরও জানান, "পশ্চিমবঙ্গ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই স্থাপত্বকে গুপ্ত যুগের স্থাপত্য বলে মনে করে । দুর্গের বাইরে একটি বেলে পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও বিদ্যমান । বৃন্দাবাড়ির এই ধ্বংশাবশেষ আলিপুরদুয়ার জেলার প্রাচীন নির্দশন । এই গড় সম্বন্ধে কোচবিহার বনবিভাগ যে তথ্য সরবরাহ করে থাকে সেই অনুযায়ী বলা যায় নলরাজার গড় গবেষকদের কাছে অপার বিস্ময়ের বিষয় । এই গড় কারা তৈরি করেছিলেন তা বিতর্কিত বিষয় । এই গড়টি ইট দিয়ে তৈরি । গবেষক শোভেন সান্য়ালের মতে এই দুর্গ কোচ রাজা প্রাণনারায়ণ তৈরি করেছিলেন । সম্ভবত 1655 থেকে 1662-র মধ্যে । তবে তিনি হয়তো তা শেষ করে যেতে পারেননি । নল রাজার গড়ের ইটের প্রাকারের বাইরে পাথরের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় । এই গড়ের চারিদিকে ইটের চওড়া প্রাচীর আছে । তবে স্থানে স্থানে তা ভগ্ন ও জঙ্গলাকীর্ণ । তবে নলরাজার গড় বা চিলাপাতার গড় আজও রহস্যের অবগুণ্ঠনে আবৃত । এর স্রষ্টা কারা ও সৃষ্টির কারণ নিয়ে গবেষণা এখনও অব্যাহত । সঠিক খনন কার্য ও তথ্য প্রণালীর বিশ্লেষণই পারবে নলরাজার গড়ের সঠিক পরিচয় তুলে ধরতে ।"

অভিযোগ, চিলাপাতার নল রাজার গড়ের সংরক্ষণ নিয়ে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে । সেই কারণেই এই গড় আজ ধ্বংসের মুখে । তবে কেন এই গড় রক্ষণাবেক্ষণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও বন বিভাগের তরফে ? এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কোনও আধিকারিকই ।

আলিপুরদুয়ার, 15 জুন: আলিপুরদুয়ার জেলা শহর থেকে মাত্র 20 কিলোমিটার দূরে চিলাপাতার গভীর জঙ্গল । সেখানে কোনও মতে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছে ভগ্নপ্রায় এক দুর্গ । চিলাপাতার নল রাজার গড় বা দুর্গের প্রাচীনত্ব নিয়ে রয়েছে বহু মত । কারও মতে এই দুর্গ তৈরি হয়েছে গুপ্ত যুগে । কারও মতে আবার এই দুর্গ কোচ রাজা প্রাণনারায়ণ তৈরি করেছিলেন । মতভেদ যাই হোক না কেন এই দুর্গ আজ অস্তিত্ব সংকটে । নেই কোনও সংরক্ষণ । দুর্গকে আজ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে বুনো গুল্ম ,লতাপাতা ।

এই দুর্গকে জড়িয়ে রয়েছে নানা রূপকথা । গল্প কথা প্রচলিত স্থানীয় আদিবাসী সমাজে । তবে এই দুর্গের ইতিহাসের সঠিক তথ্য নিয়ে বির্তক রয়েছে । চিলাপাতা রেঞ্জ অফিস থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গভীর জঙ্গলে এই নলরাজার গড় । গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক । ক্রমশ বাড়তে থাকে জঙ্গলের গভীরতা । সূর্যের আলো প্রবেশ করে না । বাতাসে ভেসে বেড়ায় বুনো পশুদের গন্ধ । সবুজের পাকদণ্ডীর প্রতিপদে ধূসর রাস্তা যেন মিলিয়ে যায় । জঙ্গলের নির্জনতা আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মিলেমিশে যায় এক সঙ্গে । কাছেই নল রাজার দুর্গ । বয়সের ভারে ন্যুব্জ সেই গড়ের গোটা দেহই আজ ভগ্নপ্রায় । পোড়া মাটির ইটের তৈরি সেই দুর্গের খাঁজে খাঁজে বিষাক্ত মাকড়শা । সাপেদের নির্জন ডেরা । ঘাসে ঘাসে জোঁকের ছড়াছড়ি । গড়ের আশপাশ ঘুরলেই স্পষ্ট অনুভব করা যাবে কোনও এককালে এখানে অনেক মানুষের বসবাস ছিল । পোড়ামাটির ইট দিয়ে জঙ্গলের এক বিরাট অংশ সুরক্ষিতভাবে ঘেরা ছিল । ধারণা, শত্রু এবং বুনো পশুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পোড়া মাটির ইট দিয়ে এই দেওয়াল নির্মাণ হয়েছিল । স্নানের জন্য একটি পুকুরও খনন করা হয়েছিল সেইকালে । জঙ্গলের মধ্যে যা আজও বর্তমান । তবে তা আজ একবারেই পরিত্যক্ত । এই নল রাজার গড়ের টানে প্রতিবছর হাজারে হাজারে পর্যটক ভিড় জমান চিলাপাতার জঙ্গলে । যদিও এই গড়ের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে বির্তক থাকলেও পর্যটকদের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ।

aa
আগাছায় ঢেকেছে ভগ্নপ্রায় দুর্গ

তবে নল রাজার গড় নিয়ে অনেক ইতিহাসই লোকমুখে ঘোরাফেরা করে । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা শোনা যায় তা হল গুপ্তযুগে নল রাজার আদেশে এই দুর্গ তৈরি হয় । তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর বীর চিলা রায় গভীর এই জঙ্গলে ভুটান সেনাদের আগ্রাসন রুখতে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন । এই দুর্গ থেকে ভুটান সৈনিকদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ করা হত । এই দুর্গে হাজার হাজার স্বশস্ত্র সৈনিক রাখা হত । চিলা রায়ের নামেই চিলা পাতার জঙ্গল নাম হয় । দুর্গটি নল রাজার নামে নামকরণ হয়ে যায় । আবার অন্য একটি মতে মহাভারতের নল দময়ন্তীর উপাখ্যানের নল রাজা আর এই নল রাজা একই ব্যক্তি । যদিও এই মতবাদের পক্ষে কোনও যুক্তি নেই বলেই মনে করা হয়ে থাকে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই দুর্গটি আজ পুরোপুরিভাবে ধ্বংসের মুখে । বন বিভাগ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সমন্বয়ের অভাবে আজ এই ঐতিহাসিক দুর্গটি গভীর অরণ্যের নির্জনতায় বিলীন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ।

হারিয়ে যেতে বসেছে নল রাজার গড়

এই বিষয় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ প্রমোদ নাথ । তিনি বলেন, "আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে নির্দশন হিসেবে উল্লেখযোগ্য তিনটি স্থান । সেগুলি হল বক্সার দুর্গ, মেন্দাবাড়ির গড় বা নল রাজার গড়, মসিদখানার মসজিদ । নল রাজার গড় সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় তা হল আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক জে সি সেনগুপ্ত এবং জলপাইগুড়ির জেলাশাসক কোরোনাকেতন সেন 1951 সালে প্রথম সরকারি নজরে আনেন চিলাপাতার গভীর জঙ্গলের এই ভগ্নপ্রায় দুর্গকে । এর প্রায় 10-12 বছর পর 1966-1967 সালে তৎকালীন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশক পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত এই গড়টি পরিদর্শনে আসেন । তিনমাস ব্যাপী এখানে খনন কার্য চালান । পরে বর্ষা এসে যাওয়ার খনন কার্য স্থগিত হয়ে যায় । পরবর্তীকে এই নলরাজার গড় সম্বন্ধে আর তেমন কোনও অনুসন্ধান হয়নি । তবে লোকমুখে এই গড় সম্বন্ধে নানাবিধ কথা শোনা যায় ।" পরেশ দাশগুপ্ত অরণ্য ছায়ায় দুর্গ নামে একটি বইয়ে এই নল রাজার গড় নিয়ে লিখেছেন । বইয়ের লেখা কিছু অংশ পাঠ করেন প্রমোদবাবু । সেই লেখা দেখে তিনি পড়েন, "মূল উদিচ্চ রেখা থেকে প্রায় 300 ডিগ্রি পূর্ব কোণে প্রসারিত এই গড় । গড়ের ধ্বংসাবশেষটি অবস্থিত 89.22 অক্ষরেখা এবং 23.23 দ্রাঘিমায় অবস্থিত । কিছুটা লম্বাকৃতি ও চতুষ্কোণে দুর্গটি উত্তর পূর্ব অংশে একটি ক্ষুদ্রতর চতুষ্কোণের মতো বিচ্ছিন্ন । মধ্যের অধুনা পরিখাটি পূর্ব দিকে গভীর অরণ্যের মধ্যে এঁকেবেঁকে মিলিত হয়েছে বানিয়া নদীর সঙ্গে । এই পরিখার অপর অংশটি মিলিত হয়েছে সুগঠিত প্রাকারের ওপারে দুর্গের বিস্তার পথ অনুসারে পরিখাতে অথবা কৃত্রিম জলখাতে । স্থানে স্থানে সিঁড়িযুক্ত এই সমকোণ বাহু বিশিষ্ট L আকৃতির পরিখাটি চওড়ায় 13.20 মিটার । এর দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গের অংশটি 113.80 মিটার । প্রস্থে 41.40 মিটার । নলরাজার গড়ের সুদৃশ্য প্রাচীর অথবা প্রকার এই অঞ্চলের এক বিশিষ্ট পুরাকীর্তি ।"

তিনি আরও জানান, "পশ্চিমবঙ্গ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই স্থাপত্বকে গুপ্ত যুগের স্থাপত্য বলে মনে করে । দুর্গের বাইরে একটি বেলে পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও বিদ্যমান । বৃন্দাবাড়ির এই ধ্বংশাবশেষ আলিপুরদুয়ার জেলার প্রাচীন নির্দশন । এই গড় সম্বন্ধে কোচবিহার বনবিভাগ যে তথ্য সরবরাহ করে থাকে সেই অনুযায়ী বলা যায় নলরাজার গড় গবেষকদের কাছে অপার বিস্ময়ের বিষয় । এই গড় কারা তৈরি করেছিলেন তা বিতর্কিত বিষয় । এই গড়টি ইট দিয়ে তৈরি । গবেষক শোভেন সান্য়ালের মতে এই দুর্গ কোচ রাজা প্রাণনারায়ণ তৈরি করেছিলেন । সম্ভবত 1655 থেকে 1662-র মধ্যে । তবে তিনি হয়তো তা শেষ করে যেতে পারেননি । নল রাজার গড়ের ইটের প্রাকারের বাইরে পাথরের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় । এই গড়ের চারিদিকে ইটের চওড়া প্রাচীর আছে । তবে স্থানে স্থানে তা ভগ্ন ও জঙ্গলাকীর্ণ । তবে নলরাজার গড় বা চিলাপাতার গড় আজও রহস্যের অবগুণ্ঠনে আবৃত । এর স্রষ্টা কারা ও সৃষ্টির কারণ নিয়ে গবেষণা এখনও অব্যাহত । সঠিক খনন কার্য ও তথ্য প্রণালীর বিশ্লেষণই পারবে নলরাজার গড়ের সঠিক পরিচয় তুলে ধরতে ।"

অভিযোগ, চিলাপাতার নল রাজার গড়ের সংরক্ষণ নিয়ে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে । সেই কারণেই এই গড় আজ ধ্বংসের মুখে । তবে কেন এই গড় রক্ষণাবেক্ষণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও বন বিভাগের তরফে ? এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কোনও আধিকারিকই ।

Last Updated : Jun 20, 2020, 10:36 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.