আলিপুরদুয়ার, 28 জুন : পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ আর কীর্তনের শব্দে এলাকার বাতাসটা আজ ভারী ভারী ৷ মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছে সদ্য বিধবা স্ত্রী রুম্পা ৷ বছর ছয়ের শিশুকন্যা তমান্নাও কেঁদে চলেছে ৷ ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ মা তখন বিছানায় জ্ঞানহারা । বৃদ্ধ পিতা নীরেনবাবু সকাল থেকে উপোস । মাঝে মাঝে সুগার-প্রেসারের ওষুধ খেয়ে পুত্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ করছেন ৷ আজ বীর শহিদ বিপুল রায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ৷
আলিপুরদুয়ার থেকে ভাটিবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় গদাধর ব্রিজ পার হলেই বিন্দিপাড়া গ্রাম । বিন্দিপাড়া প্রাইমারি স্কুলের ঠিক উলটো দিকের বাড়িটাই শহিদ জওয়ান বিপুল রায়ের ৷ সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশকে রক্ষা করতে সীমান্তে শহিদ হয়েছে ছেলে ৷ আজ 13 দিনে রাজবংশী রীতিনীতি মেনে চলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান । বিপুলের স্ত্রী, আত্মীয়দের কান্না অনেক সময় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মন্ত্রপাঠকেও ছাপিয়ে যায় ৷ সবুজ, সাদা , নীল কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেলজুড়ে যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা ৷ শহিদের ভাই বকুল সেই সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় ছুটে বেড়াল গ্রামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত । মাঝে মধ্যেই ডাক পড়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ৷
আরও পড়ুন : বৃষ্টি আর চোখের জলে ভিজল শহিদ বিপুল রায়ের শেষযাত্রা
তবে দিন দশেক আগের ছবি আজ উধাও ৷ সেদিন শহিদকে শেষবারের জন্য দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন গোটা জেলার মানুষ ৷ মাঝে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কর্মীরা এসেছিলেন ৷ তবে আজ কাউকে দেখা যায়নি ৷ সকাল 11 টা থেকে বৃদ্ধ পিতা ও ভাই সামলান সমস্ত কাজ ৷ পাশের স্কুলমাঠে খাবারের আয়োজনও করা হয় ৷ বাবা নীরেন রায় বলেন, "ছেলে শহিদ হয়েছে ৷ সেই উপলক্ষে আজ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ৷ খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছি ৷ ওর মা এখনও অসুস্থ ৷ তবে বিপুলের মেয়েটা ভালো আছে ৷ এর আগে অনেকে এসেছেন ৷ ছেলের খবর নিয়েছেন ৷ তবে আজ এখনও কেউ আসেননি ৷ "