আলিপুরদুয়ার, 18 অক্টোবর : বন দপ্তর বিভিন্ন জঙ্গলে অবস্থিত পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে মাথাপিছু প্রবেশমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ায় ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে মুখ ফিরিয়েছেন পর্যটকরা । পর্যটকের অভাবে ধুঁকছে আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী পর্যটনকেন্দ্র ৷
জয়ন্তী, গোরুমারা, জলদাপাড়া সব জায়গাতেই ছবিটা একই । ডুয়ার্সের জঙ্গল ছেড়ে পর্যটকরা এখন পাহাড়মুখী । ডুয়ার্স জঙ্গলের পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে বাঁচাতে রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের মুখ্যসচিব অত্রি ভট্টাচার্যের কাছে দরবার করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা । শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডুয়ার্সের পর্যটন পরিস্থিতি জানাবেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা ৷
বেশিরভাগ পর্যটকই জয়ন্তীর পাহাড়, জঙ্গল, নদী, বন্য প্রাণের হাতছানিকে উপেক্ষা করে পাহাড়মুখী । কারও গন্তব্য সিকিমের বরফ ঢাকা পাহাড়, কেউ আবার ছুটছেন মোহময়ী দার্জিলিঙে ৷ জয়ন্তীর স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী, গাইড, গাড়ি চালকরা পর্যটক না আসার একাধিক কারণ দেখতে পাচ্ছেন । কারও মতে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের করা গ্রিন ট্রাইবুনাল মামলার জন্য পর্যটকরা মুখ ফিরিয়েছেন জয়ন্তী থেকে । কেউ আবার বলছেন, জয়ন্তী প্রবেশের রাজাভাত খাওয়া গেটে পর্যটকদের থেকে বন দপ্তর অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য নেওয়ায় মুখ ফিরিয়েছেন পর্যটকরা ।
ইতিমধ্যেই গ্রিন ট্রাইবুনালের চাপে পড়ে গোটা বক্সায় 59 টি হোম স্টে বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে একাধিক সমস্যার মুখে পড়েছে জয়ন্তী পর্যটনকেন্দ্র । জয়ন্তীর পর্যটন ব্যবসায়ী হিমেল ছেত্রী বলেন, সুভাষ দত্তের দায়ের করা গ্রিন ট্রাইবুনাল মামলার জন্য অনেক পর্যটক ঝামেলা এড়াতে এখন জয়ন্তীকে উপেক্ষা করছেন ।
জয়ন্তীর গ্রিন হোম স্টে-র মালিক কালু মাহাত জানান, রাজাভাত খাওয়া গেটের প্রবেশদ্বারে বন দপ্তর পর্যটকদের মাথাপিছু প্রবেশমূল্য প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে । সেকারণেই অনেক পর্যটক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন । আগে মাথা পিছু প্রবেশ মূল্য ছিল 60 টাকা । এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 100 টাকা । গাড়ি প্রতি আগে নেওয়া হত 150 টাকা । এখন নেওয়া হয় 300 টাকা । এ সব কারণেই পর্যটকরা এখন পাহাড়মুখী । জয়ন্তীতে পর্যটকদের জঙ্গল সাফারি করার জন্য মোট 30 টি গাড়ি রয়েছে । প্রশিক্ষিত গাইড রয়েছে 31 জন । এ ছাড়াও সরকারি ,বেসরকারি হোম স্টে এবং লজ, হোটেল রয়েছে 50 টি । গ্রিন ট্রাইবুনালের চাপে গোটা বক্সা এলাকায় বন্ধ হয়েছে 59 টি হোম স্টে । বেঁচে থাকা 50 টি-র মধ্যেও অধিকাংশ বর্তমানে ফাঁকাই পড়ে থাকছে । ফলে মাথায় হাত পড়েছে জয়ন্তীবাসীর । তবে বিভিন্ন সমস্যাকে উপেক্ষা করে যে সমস্ত পর্যটক জয়ন্তীতে আসছেন তাঁদের বেশিরভাগই জয়ন্তীর জঙ্গল সাফারি কিংবা জঙ্গলের নিস্তব্ধতার মজা চেটেপুটে নিচ্ছেন । প্রতি সাফারিতেই আগত পর্যটকদের চোখে পড়ছে হাতি, হরিণ ,বাইসন, বুনো শুয়োর, ময়ূরের ঝাঁক । কখনও আবার নজরে পড়ছে চিতা বাঘ ।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "আমরা এ বিষয়ে পর্যটন দপ্তরের মুখ্যসচিব অত্রি ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি । তিনি বন দপ্তরের সঙ্গে প্রবেশমূল্য নিয়ে কথা বলবেন । এছাড়া শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এই বিষয়ে আমারা স্মারকলিপি তুলে দেব ।"