আলিপুরদুয়ার, 27 জানুয়ারি: তিনি মাটির মানুষ ৷ হয়তো সেই কারণেই পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য নির্বাচিত হয়েও বিশেষ তাপ-উত্তাপ নেই তাঁর ৷ থাকেন 'দোতলা' কুঁড়ে ঘরে ৷ সেই ঘরেই সাদর আমন্ত্রণ জানালেন সাংবাদিককে ৷ কথা হল, নানা বিষয় নিয়ে ৷ বিশেষ করে টোটোদের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধানসূত্র নিয়েই কথা বললেন ধনীরাম টোটো ৷ টোটো সমাজে শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং টোটোদের ভাষার জন্য নিজস্ব হরফ তৈরি করায় তাঁকে এবছর পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার (Dhaniram Toto to be Given Padma Shri Award) ৷
আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট বীরপাড়ার বাসিন্দা ধনীরাম টোটো ৷ স্থানীয় বল্লালগুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের টোটো কল্যাণ সমিতির সভাপতিও তিনি ৷ কথায় কথায় বললেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী জনজাতিদের নিজস্ব ভাষা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নিজস্ব লিপি ও হরফ ৷ তাহলে টোটোদের কেন নিজস্ব ভাষা লেখার আকারে প্রকাশ করার জন্য আলাদা লিপি বা হরফ থাকবে না ? ধনীরাম জানান, তাঁর মনে দীর্ঘকাল ধরে এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল ৷ সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই নতুন হরফ তৈরি করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: সারিঞ্জাকে আপন করে 'পদ্মশ্রী' শতায়ু মংলা গোসাইয়ের
হরফ তৈরির কাজে নেমে অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তির সাহায্য পান ধনীরাম ৷ তেরি করেন 37টি অক্ষরের বর্ণমালা ৷ সেইসঙ্গে টোটোদের নিজস্ব ভাষায় প্রচুর কবিতা, উপন্যাস ও রম্যরচনাও লিখেছেন ধনীরাম ৷ কিন্তু, এখন তাঁর বয়স হয়েছে ৷ তাই অতীতের কথা বলতে গিয়ে মাঝেমধ্যে খেই হারিয়ে ফেলেন ৷ তবে, কেন্দ্রীয় সরকার যে তাঁর কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এর জন্য খুশি ধনীরাম ৷
পদ্মশ্রীপ্রাপক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ধনীরাম টোটো বলেন, "আমাকে পদ্মশ্রী দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে ৷ সেটাই বড় কথা ৷ পদ্মশ্রী আমার কাছে সমগ্র টোটো জনজাতির জন্য পাওয়া উপহার ৷ সরকারের কাছে আমরা শুধু একটাই কথা বলার রয়েছে ৷ আমি চাই, টোটোদের একটি স্বশাসিত পর্ষদ দেওয়া হোক ৷ এই পর্ষদের মাধ্যমে টোটোরা যাতে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উন্নতি সাধন করতে পারে, সেটাই আমার প্রধান চাওয়া ৷"
সরকারিস্তরে এমন নাগরিক সম্মান পেয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন ধনীরাম টোটো ৷ তিনি বলেন, "আজ শিশুর মতো হাউহাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে আমার ৷ আমি কখনও কোনও পুরস্কার বা শিরোপা চাইনি ৷ আমি শুধু চেয়েছি, টোটো সমাজ স্বীকৃতি পাক ৷ জীবনের শেষবেলায় এসে আমার এই পুরস্কার প্রাপ্তি আদতে টোটো সমাজেরই জয় ৷"