আলিপুরদুয়ার, 17 জানুয়ারি : প্রয়াত বিপ্লবী প্রফুল্ল ভৌমিকের স্মৃতিটুকুই সম্বল সাহেবপোতার 94 বছরের রেনুকণা দেবীর । যদিও স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী হিসাবে যে পেনশন পেতেন, 2011 সালেই কোনও অজ্ঞাত কারণে রাজ্য সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছে ! বিভিন্ন যায়গায় দরবার করেও সুরাহা হয়নি ৷ উলটে মিলেছে অপমান, লাঞ্ছনা । প্রতিবাদে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাহেবপোতার স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার ।
1919 সালে অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার পাতুয়ার গ্রামে জন্ম বিপ্লবী প্রফুল্ল ভৌমিকের । ছাত্রাবস্থায় ষোলো বছর বয়সে যুগান্তর দলে যোগ দেন তিনি । প্রায় দুই বছর আত্মগোপন করে দলের জন্য কাজ করেন । অবশেষে 1932 সালে 'টাঙ্গাইল অ্যাকশন'-এ থাকার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে তৎকালীন ইংরেজ সরকার । বিচারে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে আন্দামানের সেলুলার জেলে নির্বাসিত করা হয় বিপ্লবীকে । সেলুলার জেলে তাঁর স্থায়ী নির্বাসন ক্রমিক সংখ্যা ছিল 174 । সেখানে 1937 সালে জুলাই মাসে 37 দিনের দ্বিতীয় অনশন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন তিনি । সাজা শেষে 1937-38 সালে তাঁকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে এনে মুক্তি দেওয়া হয় । 1938 সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গান্ধিজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন প্রফুল্ল ভৌমিক । দেশ ভাগের পর সপরিবারে আলিপুরদুয়ার জেলার পাতলা খাওয়া গ্রামপঞ্চায়েতের সাহেবপোতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন । 1991 সালে 3 মার্চে এই মহান বিপ্লবীর জীবনাবসান হয়। জীবিত স্ত্রী রেনুকণা ভৌমিক ৷ ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি-নাতনি ।
আরও খবর : জেলবন্দী অবস্থায় শেষ অপারেশন, 20-তে ফাঁসির মঞ্চে অনন্তহরি মিত্র
এমনিতে স্বাধীনতার পর থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্যের সাম্মানিক ভাতা পেয়ে আসছিলেন বিপ্লবী প্রফুল্ল ভৌমিক ৷ বিপ্লবীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী রেনুকণা দেবী সেই পেনশন পেতেন । কিন্তু আচমকাই 2011 সালের জানুয়ারি মাস থেকে রাজ্য সরকার ভাতা বন্ধ করে দেয় । কিন্তু কেন ? অর্থদপ্তর জানায়, প্রফুল্ল ভৌমিক স্বাধিনতা সংগ্রামী ছিলেন না, তিনি ছিলেন পলিটিকাল সাফারার । তাই রাজ্য সরকার আর ভাতা দেবে না । এরপর নেতা-মন্ত্রীদের কাছে আবেদন করে পরিবার ৷ কিন্তু ফল মেলেনি ৷ এই অবস্থায় অপমানে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপ্লবীর পরিবার ।
প্রশ্ন উঠছে, যেখানে সেলুলার জেল নিয়ে লেখা গবেষণাগ্রন্থগুলিতে জ্বলজ্বল করছে প্রফুল্ল ভৌমিকের নাম ও ছবি । স্বাধিনতা সংগ্রামীদের সরকারি তালিকাতেও রয়েছে নাম, সেখানে কীভাবে 'পলিটিকাল সাফারার' বলে দেগে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হল বিপ্লীবর স্ত্রী রেনুকনা ভৌমিকের সান্মানিক ভাতা ? আরও প্রশ্ন, প্রফুল্ল ভৌমিক যদি পলিটিকাল সাফারারই হন, তাহলে কীসের ভিত্তিতে গত 65 বছর ধরে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে ভাতা দিয়ে আসছিল সরকার ?