আলিপুরদুয়ার, 11 মে : পুলিশ নির্মম নয় । এই যেন সাক্ষাৎ মায়েরই রূপ । বিশ্ব মাতৃদিবসে একথা প্রমাণ করল আলিপুরদুয়ারের অন্তর্গত বীরপাড়া থানার পুলিশ । গতকাল, পুলিশের সাহায্যে এক যুবতি জন্ম দিলেন সন্তানের । তখন কোরোনা,কোয়ারানটিন, আইসোলেশন, এই শব্দ গুলো যেন পুলিশের খাতায় ছিলো নিতান্তই গৌণ ।
লকডাউনের জেরে চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন পঞ্জাবে কাজ করতে যাওয়া অসমের বাসিন্দা মহম্মদ আতোয়ার রহমান ও তাঁর 9 মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অকলিমা বিবি । সেই কারণে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান তিনি । তাই পঞ্জাবের একটি লরিতে 120 জন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে উঠেও পড়েন আতোয়ার ও অকলিমা বিবি । বিনা বাধায় টানা দু'দিন লরিতে চড়ে গতকাল দুপুর 12 টায় সেই গাড়ি এসে পৌঁছায় গ্রিন জো়ন আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার সীমানায় । সেখানে এথেলবাড়ি নাকা চেকিং এ আটকে দেওয়া হয় 122 জন পরিযায়ী শ্রমিককে ।
এদিকে, টানা ধকলে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন প্রসূতি । তাঁর এই অবস্থা দেখে বীরপাড়া থানার পুলিশের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায় । একদিকে ভিন রাজ্য থেকে আসা 122 জন শ্রমিকের কারণে মাথায় রয়েছে পাহাড় প্রমাণ চাপ । অন্যদিকে, এক প্রসূতির সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা । এই পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে খবর দেন জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতিকে ।এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে মহিলা পুলিশের একটি দল সহ অন্য পুলিশ কর্মীরা মিলে দ্রুত অকলিমাকে ভরতি করে দেয় বীরপাড়া স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে । একই লরিতে আসা অন্য শ্রমিকদের চা, জলপান, দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ । দুপুর 2.10 মিনিটে অকলিমা বিবি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন । বর্তমানে মা ও সদ্যজাত 2 জনেই সুস্থ । তাঁদের দেখভাল করছেন হাসপাতালের নার্স ও মহিলা পুলিশ কর্মীরা ।
এই 122 জন শ্রমিককে অসমে পাঠানোর জন্য কোকড়াঝাড় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি । বিশ্ব মাতৃ দিবসে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়ে অনন্দে দিশেহারা অকলিনা, আতোয়ার। তাঁদের পুত্র সন্তানের নামকরণ করুক জেলা পুলিশ এই তাঁদের আশা । জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান, " আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের প্রধান কাজ ছিলো ওই মহিলার পাশে দাঁড়ানো । বীরপাড়া থানার পুলিশরা যে ভাবে কোরোনা সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করে ওই দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । পরে ওই মহিলা সুস্থ হলে জেলা পুলিশ বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স করে অসমে পৌঁছে দেবে তাঁদের ।"