কলকাতা, 25 জুলাই : টোকিয়ো অলিম্পিকসে প্রণতি নায়েকের পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন কোচ মিনারা বেগম ৷ আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসের ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি প্রণতি ৷ প্রাক্তন ছাত্রীর পারফরম্যান্স দেখতে টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন ৷ কিন্তু একরাশ হতাশা নিয়ে টিভি বন্ধ করেছেন ৷ প্রণতির গা ছাড়া পারফরম্যান্স দেখে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন কোচের প্রশ্ন, অলিম্পিকস কি ছেলেখেলা করার জায়গা ?
প্রিয় ছাত্রীর আত্মসমর্পণ দেখে ভেঙে পড়লেন মিনারা বেগম । 18 বছর ধরে ধীরে ধীরে প্রণতি নায়েককে তৈরি করেছেন তিনি । প্রণতির অলিম্পিকসে সুযোগ পাওয়ার খবরে স্বপ্নপূরণের তৃপ্তি পেয়েছিলেন । আশা করেছিলেন অলিম্পিকসে নিজেকে নিংড়ে দেবেন প্রণতি । কিন্তু টোকিয়োতে পা দেওয়ার পরই বাঙালি জিমন্যাস্টের মানসিকতা দেখে বিস্মিত হয়েছেন মিনারা বেগম । বলছেন, এত ছবি পোস্ট করার আগ্রহ দেখেই মনে হয়েছিল মনোসংযোগের ঘাটতি রয়েছে । কেন প্রণতিকে অনুশাসনে বাধা গেল না তা বুঝতে পারছেন না ।
অথচ প্রণতি তাঁর কোচিংয়ে থাকার সময় অন্যদিকে মন দেওয়ার সুযোগ পেত না । বলা থাকত, প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে যাবতীয় ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া যাবে । তিরিশ জন প্রতিযোগীর মধ্যে 29 নম্বরে শেষ করেছে পিংলার মেয়ে । মিনারা বেগমের প্রণতিকে ক্লান্ত মনে হয়েছে ৷ কেন এই ক্লান্তি তার উত্তর মিনারা বেগমের কাছে নেই । তিনি বললেন, "আমি ওঁকে দেখে হতাশ । অত্যন্ত খারাপ পারফরম্যান্স । বিমে হতাশ করল ৷ অনলাইন বারে পা ঠেকে গেল । তাহলে এতদিন ধরে কি অনুশীলন করল ?"
প্রায় একই সঙ্গে যোগ করলেন, "দু‘টো ভল্ট না দিতে দেখে আমার অবাক লেগেছে । একটা ভল্ট করার পরে থেমে গেল । দু‘টো ভল্ট না করলে পদক জয় বা পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেওয়া যায় না । প্রণতি সব জায়গাতেই দু‘টো ভল্ট করে এসেছে । কেন একটা ভল্ট করল বুঝতে পারছি না । যদিও আমি খবর পেয়েছিলাম অলিম্পিকসে দু‘টো ভল্ট দেবে না ।"
প্রণতি নিজে বলেছিলেন, মাত্র দুমাসের প্রস্তুতি নিয়ে টোকিয়ো যাচ্ছেন । তবে নিজেকে নিংড়ে দেবেন । অথচ নিংড়ে দেওয়ার কথা তো দূরে থাক ক্লান্ত দেখিয়েছে প্রণতিকে । প্রত্যাশিত চনমনে ভাবটা উধাও । মিনারা বেগম বলছেন, "অলিম্পিকস কি ছেলেখেলা করার জায়গা । এটা একটা স্বপ্নপূরণের মঞ্চ । ওখানে গিয়ে নতুন করে শেখার কিছু নেই । নিজেকে নিংড়ে দিতে হয় । যা জানে সেটাই বারবার অনুশীলন করে যেতে হয় । এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার আগে সেভাবেই তৈরি হয়েছিল ৷ যাতে নির্দিষ্ট দিনে ভাল পারফর্ম করে আসতে পারে । প্রতিটা বিভাগে ব্যর্থ হল ।"
আরও পড়ুন : Tokyo Olympics : আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকের ফাইনালের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ প্রণতি
বর্ষীয়ান এই কোচের আঙুল তুলেছেন ভারতীয় দলের কোচ লক্ষণ মনোহর সিংয়ের দিকে । বললেন, "এই সময় প্র্যাকটিস করানোটা জরুরি । এই দায়িত্বটা কোচের । অলিম্পিকসে যোগ্যতা অর্জন মানেই খেলোয়াড়ের কথায় চলতে হবে এমন কোনও মানে নেই । ফ্রন্ট ভল্টে 360 করেছে । ব্যাক ভল্টটা করল না কেন । দু‘টো ভল্টে 720 করলে আশা থাকে । আমাকে সাইতে ঢুকতে দেওয়া হল না কোভিড বিধিনিষেধের কারণে । ফেডারেশন টোকিয়োতে যাওয়ার অনুমতি দিল না । একটা চক্রান্ত চলছে ৷" হতাশ শোনায় মিনারা বেগমের গলা ।
ছোট থেকে একজনকে তৈরি করে অলিম্পিকসের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরিশ্রম সার্থকতা পায় শিক্ষার্থীর সাফল্যে । প্রণতির এই গা ছাড়া পারফরম্যান্স মিনারা বেগমকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় জর্জরিত করেছে ।