কলকাতা, 11 জানুয়ারি : ভিড়ে আলাদা করে নজরকাড়া চেহারা নয় । শান্ত, ধীর-স্থির, নিচু স্বরে কথা বলা বছর ছাব্বিশের তরুণকে দেখে আপনার মনে হতেই পারে কোনও বহুজাতিক আইটি সেক্টরের এগজ়িকিউটিভ । কিন্তু মলাট দেখে যেমন বইয়ের মান বোঝা যায় না তেমনই চেহারা দেখে কাউকে ঠাওর করে নেওয়াটাও ভুল ।
ঋদ্ধি দত্ত । মাঝারি উচ্চতার, গৌরবর্ণের ছেলেটি পেশায় একজন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক । পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা ক্যারাটে ক্লাসের মতো মোটেও নয় । এখানে ঋদ্ধির হাতে প্রশিক্ষিত হন পুলিশ এবং সেনা অফিসাররা । দমদম বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের বিপরীত দিকের গলি ধরে কিছুটা হাঁটলেই "আমাদের বাড়ি"র একতলায় ঋদ্ধি দত্তর মার্শাল আর্টের স্টুডিও । মূলত স্পেশাল ফোর্সকে প্রোজেক্ট ভিত্তিক ট্রেনিং দিলেও ঋদ্ধির গুরুকুলে এখন সাধারণের জন্যও দরজা খোলা । ধৈর্য ধরে কড়া অনুশীলন এবং কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই মিলবে সাম্মানিক বেল্ট ।
মার্শাল আর্টের কোন ঘরানার ব্যাটন বহন করছেন ঋদ্ধি দত্ত ?
এই প্রশ্নেই সবচেয়ে বড় টুইস্ট লুকিয়ে আছে । আমজনতার কাছে মার্শাল আর্ট মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ব্রুস লি এবং জ্যাকি চ্যানের ছবি । ঋদ্ধি সেই ব্রুস লি-র স্কুল থেকে মার্শাল আর্টের প্যাঁচপয়জার শিখেছেন । হংকংয়ে ব্রুস লি যাঁর কাছ থেকে মার্শাল আর্টের শিক্ষা নিয়েছিলেন সেই গ্র্যান্ডমাস্টার ওং শন লিয়াংয়ের ছেলের কাছে দিনের পর দিন পড়ে থেকে নিজেকে পারদর্শী করে তুলেছেন এই বাঙালি তরুণ । প্রয়াত শিফু কেইথ অ্যালানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ব্রুস লির "জিৎ কুন ডো" বা "জুয়ান ফান গুং ফু" ঘরানা শিখেছেন । ফিলিপিনো মার্শাল আর্টসের অন্তর্ভুক্ত কালি বক্সিং শিলাট, এতে অস্ত্রের ব্যবহার হয় । সেই কৌশল অস্ট্রেলিয়ার ম্যানি ডে ম্যাতোসের কাছ থেকে রপ্ত করেছেন ঋদ্ধি । শাওলিন কুং ফু এবং উইং চাং মার্শাল আর্ট আমেরিকার স্টিফেন ম্যাকডোনাল্ডের কাছে শিখেছেন তিনি ।
কাকাকে মার্শাল আর্টের চর্চা করতে দেখেছিলেন ঋদ্ধি । সেদিক থেকে কাকাই তাঁর প্রথম গুরু । বাবা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও ঋদ্ধির নেশা এবং পেশা এখন মার্শাল আর্ট । ছোটোবেলায় ভীতু প্রকৃতির ছেলে হিসেবে পরিচিত হলেও এখন ঋদ্ধি দত্ত একজন শারীরিক এবং মানসিকভাবে বলিষ্ঠ যুবা । মার্শাল আর্টে দক্ষ বলে মারপিট করে বেড়ান, তা কিন্তু নয় । বরং ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে চলেন । নিতান্তই জড়িয়ে গেলে প্রথমে তা শান্তভাবে মেটানোর চেষ্টা করেন । তবে উপায় না থাকলে জবাব দিতে পিছপাও হন না ।
অসম পুলিশের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে দিয়ে স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে ঋদ্ধির কাজ শুরু । অসমের এসপির আমন্ত্রণে সেটা হয়েছিল । পরে ফিলিপিন্সে গিয়ে সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন । বাংলাদেশেও ফিলিপিনো মার্শাল আর্টস নিয়ে কাজ করেছেন । বিধাননগর পুলিশের হয়েও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব সামলেছেন । তবে লালবাজারে এখনও ডাক পাননি ।
যে ঘরানার মার্শাল আর্টের ব্যাটন বহন করে চলেছেন তা ক্রীড়া দুনিয়ায় যুক্ত হোক চান না ঋদ্ধি । একইভাবে প্রত্যাঘাতের সময় পুরুষ মহিলার বিভেদ দেখেন না । কারণ, বাঁচার তাগিদে প্রত্যাঘাতে উনিশ বিশ করা যায় না ।
বিপদে পড়লে প্রত্যাঘাত জরুরি । তাই নিজের কম্পানি "ব্রহ্মাস্ত্র"-র মাধ্যমে বেসরকারিভাবে কাউন্টার অ্যাটাকের কৌশল শেখান ঋদ্ধি । সেই কৌশল রপ্ত করতে দেশ বিদেশের সরকারি নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরাও এই বাঙালি যুবকের শরাণাপন্ন হচ্ছেন ।