কলকাতা, 13 নভেম্বর: হারিয়ে যাওয়া উচ্ছ্বাস ফিরে এসেছে ইস্টবেঙ্গলে। লেসলি ক্লডিয়াস সরণির শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব তিন মরশুম আইএসএলে খেললেও তথাকথিত বড় জয় অধরা রয়ে গিয়েছিল। সেদিক থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার জয় স্বস্তি দিল বলাই যায়। যা থেকে নতুনভাবে ঘুরে দাড়ানোর পথ খোঁজার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ক্লাব এবং বিনিয়োগ সংস্থার দফতরের। বিশেষ করে জয়ের পরে গ্যালারিতে সমর্থকদের অশ্রুসজল ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে। গত এক দশক কোনও সর্বভারতীয় ট্রফি নেই। প্রতিপক্ষ সবুজ-মেরুনের বিরুদ্ধে টানা সাত ম্যাচ হারের লজ্জার রেকর্ড। তবুও কিছু সমর্থক ঠিক চলে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে। সমর্থক বলা ভুল পাগল সমর্থক,যাদের শয়নে স্বপনে শুধুই ইস্টবেঙ্গল।
শুক্রবারের ম্যাচ দেখতে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ছুটে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সমর্থক। বেঙ্গালুরুতে কাজের জন্য বিভিন্ন অফিসে ব্যস্ত থাকা লাল হলুদ সমর্থকরা ভিড় জমিয়ে ছিলেন কান্তিরাভায়। এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফেরার পথে কান্তিরাভায় উপস্থিত হয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা ।
সুনীল ছেত্রীদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তারা। এতদিনের দুঃখ ভোলার অবকাশ পেল লক্ষ লক্ষ ইস্টবেঙ্গল জনতা । সায়ন, অভিজিৎদের কান্নার ছবি টেলিভিশনে ভেসে উঠতেই তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় । এই কান্না সমস্ত ফুটবল সমর্থকদেরই আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছে। দলের খারাপ সময় পাশে থাকা এই সমস্ত সমর্থকদের কুর্নিশ জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সিইও নম্রতা পারেখ । জানতে চেয়েছেন ছবিতে দেখতে পাওয়া এই দুই যুবকের পরিচয়।
আরও পড়ুন: দুই নম্বরে পৌঁছে নতুন স্ট্রাইকার, ডিফেন্ডারে চোখ জুয়ান ফেরান্দোর
শুক্রবারের ম্যাচে 69 মিনিটে জয়সূচক গোল করেন ক্লেইটন সিলভা । যদিও তাতে নিশ্চিত হতে পারেননি সমর্থকরা। আবার যদি গোল খেয়ে যায় দল? তবে শেষ বাঁশি বাজতেই আবেগ বাঁধ মানেনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সায়ন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, 'ধন্যবাদ নাওরেম মহেশ, এমন রাত উপহার দেওয়ার জন্য।' গোল করলেন ক্লেইটন তবে মহেশকে কেন ধন্যবাদ দিচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থক?
আসলে ক্লেইটন ফাঁকা গোলে বলটা ঠেলে দিয়েছেন। তবে গোলটা ফাঁকা করার ক্ষেত্রে পুরো কৃতিত্বই ছিল নাওরেম মহেশের। বেঙ্গালুরুর সুরেশ সিংকে দারুণ দক্ষতায় প্রেস করেন নাওরেম মহেশ সিং। বল কেড়ে নিয়ে বাঁ দিকের প্রান্ত ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন ইস্টবেঙ্গলের এই ফুটবলার। খেলা শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় করে লাল-হলুদ পতাকা নিয়ে হোটেলের দিকে যাত্রা করা টিমবাসকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। রংমশাল জ্বালিয়ে স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনের দলকে অভিবাদন জানান।
বলা যায় কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুললেন স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন (Stephen Constantine)। বেঙ্গালুরু এফসিতে খেলে যাওয়া ক্লেইটনের গোলেই বাজিমাত করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। হতাশ হতে হল প্রবীর দাস, রয় কৃষ্ণদের।
আরও পড়ুন: 92‘র ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ? ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে উত্তেজিত বাবর
এবারের আইএসএল-এ এটা ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় জয়। এই জয়ের ফলে আট নম্বরে উঠে এল লাল-হলুদ। কোচ জানান, দল সঠিক পথে এগোচ্ছে। ইভান গঞ্জালেসের পারফরম্যান্সেরও খুশি ব্রিটিশ কোচ। বলছেন বেঙ্গালুরুতে গিয়ে তাঁরা পুরো পয়েন্ট নিয়ে ফিরবে তা কেউ ভাবেনি। এই জয়ের পরে সমর্থকরা শান্তি পাবে। এখান থেকেই পরের ম্যাচগুলিতে উত্তরণের পথ খুঁজবেন স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন ও তাঁর ছেলেরা। পাশাপাশি ভালো মানের স্ট্রাইকারেরও খোঁজ শুরু হয়ে গেল।