কলকাতা, 19 জুলাই : অন্ধকার যত গাঢ় হয় ততই আলোর সন্ধান নিকটতর হয় । পূর্ব মেদিনীপুরের হেড়িয়ার বুদ্ধদেব জানার সাম্প্রতিক সাফল্য বোধ হয় এই প্রবচনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । দারিদ্র এবং দৃষ্টিহীনতার বাধা উপেক্ষা করে বছর কুড়ির বুদ্ধদেব এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে চমকে দিয়েছেন ।
কৃতী শিক্ষার্থীদের ভিড়ে বুদ্ধদেবের নব্বই শতাংশ নম্বর বড় দাগ কাটে না । কিন্তু যখন জানতে পারা যায়, এই ছেলেটি দৃষ্টিহীনদের জুডোয় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তখন চমক লাগে বইকি । যাঁর মুকুটে সাউথ এশিয়ান গেমসের চ্যাম্পিয়নের শিরোপা রয়েছে । দৃষ্টিহীনদের কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া বুদ্ধদেব জুডোয় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন । যাঁর মুকুটে সাফল্যের একাধিক পালক রয়েছে, তাঁর প্রতি সম্ভ্রম জেগে ওঠা স্বাভাবিক ।
এই ছেলেটি পড়াশোনাতেও যখন প্রতিকূলতাকে সরিয়ে 452 নম্বর অর্জন করেন তখন কুর্নিশ জানাতেই হয় । প্রতিবন্ধকতা শব্দটি বুদ্ধদেব জানার কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম । নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির ছাত্রটি বাংলায় 92, ইংরেজিতে 83, ইতিহাসে 91, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে 96 পেয়েছেন । কোরোনা ভাইরাসের কারণে পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছিল । তার জেরে সংস্কৃত পরীক্ষা দেওয়া হয়নি বুদ্ধদেবের ।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মতো একই সিলেবাস এবং একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হয় দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের । বাড়তি হিসেবে তাদের অতিরিক্ত পনেরো মিনিট দেওয়া হয় । পরীক্ষার দিন একজন লেখক দেওয়া হয় ।
আরও পড়ুন :- কম্পানি অ্যাফেয়ার্সে নথিভুক্ত ইস্টবেঙ্গলের নাম
ফোনের ওপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শোনাচ্ছিল বুদ্ধদেবের গলা । ‘‘আমার রাইটার হিসেবে ক্লাস টেনের একজন ছাত্রকে দেওয়া হয়েছিল’’, বলছিলেন সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করা ছেলেটি । অভাবকে জয় করে এগিয়ে চলার পাঠ শিখেছেন তিনি ৷ কৃষক পরিবারের সন্তান এবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চান । আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেটির চিন্তা, অর্থের অভাব । ‘‘আমার পরিবারের পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয় । রামকৃষ্ণ মিশন আমাকে সাহায্য করেছে । আশা করি, আবার সাহায্য পাব’’ চিন্তিত শোনায় বুদ্ধদেবের গলা ।
বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশনে ভরতি হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছেও রয়েছে । পড়াশোনার ক্ষেত্রে নব্বই শতাংশ নম্বর পাওয়ার পরে জুডো নিয়ে পরিকল্পনা কী বুদ্ধদেবের ? ‘‘বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার জন্য প্রচুর টাকা লাগে । অবস্থা স্বাভাবিক হলে, অংশগ্রহণ করার বিষয়টি কী হবে জানি না’’ জানিয়েছেন বুদ্ধদেব । লকডাউনের মধ্যে জুডোর অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন তিনি৷ অনলাইনে কোচের নির্দেশ অনুসরণ করেছেন ।
চোখে না দেখে অনুশীলন কীভাবে চলছে ? প্রশ্নটা শুনে বুদ্ধদেবের উত্তর, ‘‘স্যারের নির্দেশ কানে শুনে অনুশীলন চলছে আমার । স্যার আমাকে দেখতে পাচ্ছেন । সেভাবেই ভুল শুধরে দিছেন ।’’ জুডো এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার শপথ বছর কুড়ির যুবকের গলায় ।