ETV Bharat / sports

সিনিয়র জাতীয় দলে জায়গা পাকা করাই পাখির চোখ বিশ্বের এক নম্বর প্যাডলারের

Table Tennis: গত দু'দশকে ভারতীয় টেবিল টেনিসের মহিলা তারকার সংখ্যা একেবারে কম নয়। সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম দাবিদার বলা হচ্ছে হরিয়ানার সুহানিকে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই হরিয়ানার সুহানা অনূর্ধ্ব-19 পর্যায়ে ডাবলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলার মেয়ে পৃথকী চক্রবর্তীকে সঙ্গী করে। তবে সেই খেতাবও বিশেষ খুশি করতে পারেনি তাকে। তার পাখির চোখ সিনিয়র জাতীয় দলে জায়গা পাকা করা ৷

হরিয়ানার সুহানি
Table Tennis
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 13, 2024, 3:38 PM IST

পাখির চোখ বিশ্বের এক নম্বর প্যাডলারের

কলকাতা, 13 জানুয়ারি: 'অর্থোডক্স' সুহানায় ভবিষ্যৎ দেখছে ভারতীয় টেবিল টেনিস। কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলছে জাতীয় জুনিয়র অ্যান্ড ইয়ুথ টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। দেশের ভবিষ্যৎ তারকাদের বেড়ে ওঠা দেখার সুযোগ। এমনই এক প্রতিভাবান টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সুহানি সাহানা। পৌলমী ঘটক, মৌমা দাস থেকে মণিকা বাত্রা, সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় টেনিসে নিয়মিত আর্ন্তজাতিক টেবিল টেনিস প্রতিভার অভাব নেই। সেই ধারা সবসময় অব্যাহত। তাই গত দু'দশকে ভারতীয় টেবিল টেনিসের মহিলা তারকার সংখ্যা একেবারে কম নয়। সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম দাবিদার বলা হচ্ছে সুহানিকে।

তাঁর আদর্শ প্যাডলার শরথ কমল। তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় শামিনী কুমারেসান। হরিয়ানার রোহতকের সুহানা সাইনি, কয়েকদিন আগেও অষ্টাদশী এই প্যাডলার ডাবলসে ছিলেন যুব পর্যায়ে বিশ্বের এক নম্বর প্যাডলার। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই হরিয়ানার সুহানা অনূর্ধ্ব-19 পর্যায়ে ডাবলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলার মেয়ে পৃথকী চক্রবর্তীকে সঙ্গী করে। তবে সেই খেতাবও বিশেষ খুশি করতে পারেনি তাকে। কারণ, সিঙ্গলসে সামান্য ভুলের মাশুল দিয়ে পদকের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন যে!

দলগত বিভাগে রানার্স হওয়ার পর ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন। অথচ দ্বিমুকুট পাওয়া লক্ষ্য ছিল সুহানার। কলকাতায় তাঁর লক্ষ্য পুরোপুরি পূরণ না-হলেও আগামী দু'বছরের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছে। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা, তারপর লক্ষ্যটাকে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। নেতাজি ইন্ডোরে ম্যাচের শেষে সুহানা বলেন, "আমি কয়েকদিন আগেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেললাম। শেষ আটে পৌঁছে হেরে গিয়েছি। প্রথমবারের নিরিখে এটা খারাপ ফল না। তবে আমি কমনওয়েলথ গেমসের মধ্যে জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য হতে চাই। তারপর 2028-এ অলিম্পিক খেলাই আমার লক্ষ্য।"

রোহতকে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িয়ে। ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাবা, মা সকলেই খেলেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ফলে বাড়িতে খেলার পরিবেশ রয়েছে। সুহানির টেবিল টেনিসে হাতেখড়ি মায়ের কাছে। মায়ের কোচিংয়েই রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তারপর চেন্নাইতে টেবিল টেনিসের পাঠ নিচ্ছেন। ডাবলসে প্রথম থেকেই খেলেন সুজয় ঘোড়পাড়ের মেয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেন সুহানি। তবে বর্তমান সময়ের নয় তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় শামিনী। আদর্শ শরথ কমল।

কিন্তু কেন শামিনীকে অনুসরণ করে সুহানা? আসলে বিশ্ব টেবিল টেনিসের বর্তমান সময়ে তিনি যে একেবারেই প্রাচীন ঘরানার। প্রথম সারির অন্য প্যাডলাররা যেখানে প্রতিপক্ষের সুইং সামলাতে ব্যাটে পিম্পল রাবার ব্যবহার করেন, সেখানে সুহানার এখনও ভরসা সফট রাবার। ফলে প্রতিপক্ষের প্রতিটা শটে অতিরিক্ত স্পিন সামলাতে হয় তাকে। তারপরও কেন সফট রাবার ব্যবহার করেন? সুহানার জবাব, সফট রাবারে খেলার মজা পিম্পল রাবারে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিপক্ষ অ্যাডভান্টেজ পাবে জেনেও আমি সফট রাবার ব্যবহার করি। আসলে আমার কাছে জেতাটাই সব নয়। বরং খেলে তৃপ্তি পাওয়াটাই আসল।"

মণিকা বাত্রা, সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, ঐহিকা মুখোপাধ্যায়ে বিরুদ্ধে খেললেও জিততে পারেনি। তবে সামলাতে সমস্যায় পড়েছেন ঐহিকাকে। কারণ ওকে বোঝা যায় না সহজে। খেলার বাইরেও 'প্রাচীনপন্থী' সুহানা। তাই এখনও সময় পেলেই সোশাল মিডিয়া নয়, বসে পড়ে বই নিয়ে। নয়তো শোনে কিশোর কুমার, আরডি বর্মনের গান। এই অভ্যাস সে পেয়েছে বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে। কলকাতার সঙ্গে যোগ রয়েছে সুহানির। মায়ের দিকের পূর্বপুরুষ ছিলেন ভট্টাচার্য। তাই কলকাতাকে ঘিরে একটা ভালোলাগা রয়েছে। পার্কস্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানের কফি শপে বসে চা বা কফি খেতে খেতে বই পড়ার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে পায়। বয়সে ওয়াই প্রজন্ম হলেও তাড়াহুড়ো করতে চায় না। এই প্রাচীন 'অর্থোডক্স' মানসিকতাই সুহানার ভালো খেলার নেপথ্যে। সেই অর্থোডক্স মানসিকতাতেই ভারতীয় টেবিল টেনিসের ভবিষ্যতের আশা লুকিয়ে ৷

আরও পড়ুন:

  1. টেবিল টেনিস বোর্ডে মুখোমুখি অরূপ-সুজিত, বিধানসভার বাইরে দুই মন্ত্রীর জমজমাট লড়াই
  2. জাতীয় টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়নশিপে জোড়া সোনা হুগলির পয়মন্তীর, লক্ষ্য জাতীয় দল
  3. অনূর্ধ্ব-17 জাতীয় ইয়ুথ ও জুনিয়র টেবল টেনিস ফাইনালে বাংলার সিন্ড্রেলা

পাখির চোখ বিশ্বের এক নম্বর প্যাডলারের

কলকাতা, 13 জানুয়ারি: 'অর্থোডক্স' সুহানায় ভবিষ্যৎ দেখছে ভারতীয় টেবিল টেনিস। কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলছে জাতীয় জুনিয়র অ্যান্ড ইয়ুথ টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। দেশের ভবিষ্যৎ তারকাদের বেড়ে ওঠা দেখার সুযোগ। এমনই এক প্রতিভাবান টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সুহানি সাহানা। পৌলমী ঘটক, মৌমা দাস থেকে মণিকা বাত্রা, সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় টেনিসে নিয়মিত আর্ন্তজাতিক টেবিল টেনিস প্রতিভার অভাব নেই। সেই ধারা সবসময় অব্যাহত। তাই গত দু'দশকে ভারতীয় টেবিল টেনিসের মহিলা তারকার সংখ্যা একেবারে কম নয়। সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম দাবিদার বলা হচ্ছে সুহানিকে।

তাঁর আদর্শ প্যাডলার শরথ কমল। তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় শামিনী কুমারেসান। হরিয়ানার রোহতকের সুহানা সাইনি, কয়েকদিন আগেও অষ্টাদশী এই প্যাডলার ডাবলসে ছিলেন যুব পর্যায়ে বিশ্বের এক নম্বর প্যাডলার। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই হরিয়ানার সুহানা অনূর্ধ্ব-19 পর্যায়ে ডাবলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলার মেয়ে পৃথকী চক্রবর্তীকে সঙ্গী করে। তবে সেই খেতাবও বিশেষ খুশি করতে পারেনি তাকে। কারণ, সিঙ্গলসে সামান্য ভুলের মাশুল দিয়ে পদকের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন যে!

দলগত বিভাগে রানার্স হওয়ার পর ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন। অথচ দ্বিমুকুট পাওয়া লক্ষ্য ছিল সুহানার। কলকাতায় তাঁর লক্ষ্য পুরোপুরি পূরণ না-হলেও আগামী দু'বছরের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছে। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা, তারপর লক্ষ্যটাকে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। নেতাজি ইন্ডোরে ম্যাচের শেষে সুহানা বলেন, "আমি কয়েকদিন আগেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেললাম। শেষ আটে পৌঁছে হেরে গিয়েছি। প্রথমবারের নিরিখে এটা খারাপ ফল না। তবে আমি কমনওয়েলথ গেমসের মধ্যে জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য হতে চাই। তারপর 2028-এ অলিম্পিক খেলাই আমার লক্ষ্য।"

রোহতকে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িয়ে। ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাবা, মা সকলেই খেলেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ফলে বাড়িতে খেলার পরিবেশ রয়েছে। সুহানির টেবিল টেনিসে হাতেখড়ি মায়ের কাছে। মায়ের কোচিংয়েই রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তারপর চেন্নাইতে টেবিল টেনিসের পাঠ নিচ্ছেন। ডাবলসে প্রথম থেকেই খেলেন সুজয় ঘোড়পাড়ের মেয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেন সুহানি। তবে বর্তমান সময়ের নয় তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় শামিনী। আদর্শ শরথ কমল।

কিন্তু কেন শামিনীকে অনুসরণ করে সুহানা? আসলে বিশ্ব টেবিল টেনিসের বর্তমান সময়ে তিনি যে একেবারেই প্রাচীন ঘরানার। প্রথম সারির অন্য প্যাডলাররা যেখানে প্রতিপক্ষের সুইং সামলাতে ব্যাটে পিম্পল রাবার ব্যবহার করেন, সেখানে সুহানার এখনও ভরসা সফট রাবার। ফলে প্রতিপক্ষের প্রতিটা শটে অতিরিক্ত স্পিন সামলাতে হয় তাকে। তারপরও কেন সফট রাবার ব্যবহার করেন? সুহানার জবাব, সফট রাবারে খেলার মজা পিম্পল রাবারে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিপক্ষ অ্যাডভান্টেজ পাবে জেনেও আমি সফট রাবার ব্যবহার করি। আসলে আমার কাছে জেতাটাই সব নয়। বরং খেলে তৃপ্তি পাওয়াটাই আসল।"

মণিকা বাত্রা, সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, ঐহিকা মুখোপাধ্যায়ে বিরুদ্ধে খেললেও জিততে পারেনি। তবে সামলাতে সমস্যায় পড়েছেন ঐহিকাকে। কারণ ওকে বোঝা যায় না সহজে। খেলার বাইরেও 'প্রাচীনপন্থী' সুহানা। তাই এখনও সময় পেলেই সোশাল মিডিয়া নয়, বসে পড়ে বই নিয়ে। নয়তো শোনে কিশোর কুমার, আরডি বর্মনের গান। এই অভ্যাস সে পেয়েছে বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে। কলকাতার সঙ্গে যোগ রয়েছে সুহানির। মায়ের দিকের পূর্বপুরুষ ছিলেন ভট্টাচার্য। তাই কলকাতাকে ঘিরে একটা ভালোলাগা রয়েছে। পার্কস্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানের কফি শপে বসে চা বা কফি খেতে খেতে বই পড়ার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে পায়। বয়সে ওয়াই প্রজন্ম হলেও তাড়াহুড়ো করতে চায় না। এই প্রাচীন 'অর্থোডক্স' মানসিকতাই সুহানার ভালো খেলার নেপথ্যে। সেই অর্থোডক্স মানসিকতাতেই ভারতীয় টেবিল টেনিসের ভবিষ্যতের আশা লুকিয়ে ৷

আরও পড়ুন:

  1. টেবিল টেনিস বোর্ডে মুখোমুখি অরূপ-সুজিত, বিধানসভার বাইরে দুই মন্ত্রীর জমজমাট লড়াই
  2. জাতীয় টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়নশিপে জোড়া সোনা হুগলির পয়মন্তীর, লক্ষ্য জাতীয় দল
  3. অনূর্ধ্ব-17 জাতীয় ইয়ুথ ও জুনিয়র টেবল টেনিস ফাইনালে বাংলার সিন্ড্রেলা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.