কলকাতা, 4 জুলাই : বিরল সমস্যার যুদ্ধজয়ী মানুষ চিরকালই বিরল ব্যক্তিত্ব ।তাদের লড়াই, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প সাধারনের অনুপ্রেরণা । কুর্নিশের যোগ্য । কঠিনসময়ে এদের জীবন গাথা নিউ নর্মাল লাইফ স্টাইলের সংঞ্জা বদলে দেয় । ঋতিকা কর্মকারসেই রকমই এক বিরল চরিত্রের শুটার । ক্যানসার জয়ী শুটার ফের বন্দুক তুলে নিয়েছেন ।লক্ষ্য ফের শুটিং রেঞ্জে বুলস আই করা ৷
কিশোরীসুলভ চঞ্চলতা দেখে বোঝার উপায় নেই জীবন যুদ্ধের জয়ের মুকুটওর মাথায় । কিশোরীসুলভ সরল হাসিতে লুকিয়ে থাকে মুন্সিয়ানার কোলাজ । প্রতিশ্রুতিমানশুটার হিসেবে খ্যাতি পেলেও ঋতিকা কর্মকার একজন থার্ড ডান ব্ল্যাকবেল্ট ক্যারাটেকা, পোলো খেলোয়াড় এবং দুরন্ত ঘোড়সওয়ার ।ঘোড়ায় চড়ায় সে এতটাই পারদর্শী যে দুই হাত ছেড়েও ঘোড়াকে দৌঁড় করাতে পটু । চিরকালেরডানপিটে স্বভাবের মেয়েটি যে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ভক্ত হবে তাতে আশ্চর্য কী?
ক্যারাটে শিক্ষা দিয়ে খেলাধুলার জগতে পা রেখেছিল ঋতিকা । দ্রুতথার্ড ডান ব্ল্যাকবেল্ট সম্পূর্ণ করে থমকে যেতে হয়েছে শুধুমাত্র বয়েসের নিয়মসংক্রান্ত জাঁতাকলে । ক্যারাটের পাশাপাশি পোলো খেলায় হাত পাকিয়েছে সে । ঘোড়ায় চড়াওশিখেছে । প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো কর্মকার পরিবারের চারটে ঘোড়া রয়েছে যারা নিয়মিতকলকাতা রেসকোর্সে ঘৌড়দৌড়ে অংশ নিয়ে থাকে । অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের আগ্রহ থেকেইরাইফেল শুটিংকে বেছে নিয়েছিল ঋতিকা । দশ মিটার এয়ার রাইফেলে হাতেখড়ি হওয়ার সময়তাঁর বয়স ছিল মাত্র 14 । ছটফটে সাহসী মন টার্গেটে চোখ রাখতে গিয়ে নিজেকে অন্যভাবেআবিষ্কার করে ঋতিকা । লক্ষ্যপূরণের নেশায় একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যেতে থাকে । জেল, রাজ্য পর্যায়ে ভালো পারফরম্যান্সেরহাত ধরে সবার নজরে পড়তে থাকে । এরই পাশাপাশি তার স্কুল আদিত্য অ্যাকাডেমির হয়েশুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঋতিকা । এবং সেখানেও সফল হয় সে ।
আঞ্চলিক পর্যায়ের সাফল্যের পরে বিদ্যালয়ের জাতীয় স্তরে পদকের আশাএকাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্রী । কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন । গত বছরের শেষদিকেসামান্য জ্বর এবং ত্বকের সমস্যা হয় ঋতিকার ৷ পরীক্ষার পর তাঁর কর্কট রোগের কথাজানা যায় ৷ "সেই সময়টা ভাবলে আজও শিউড়ে উঠি । পায়ের তলা থেকে মাটি সরেগিয়েছিল । সন্তান হারানোর আশঙ্কায় ভেঙে পড়েছিলাম । কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে নিয়েএসেছিল ঋতিকার মনের জোর, চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টা," চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন ঋতিকারমা সুমনা কর্মকার ।
ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন বাবা গোপাল কর্মকার । মেয়ের ব্লাডক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি বিশ্বাস করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল তাঁর । তবেভেঙে না পড়ে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে জীবন বাচানোর লড়াইয়ে সাহায্য করেছিলেন । তবে জীবনযুদ্ধে জয়ের কৃতিত্ব মেয়েকে দিতে চান গোপালবাবু । বিরল ধরনের ব্লাড ক্যানসারেআক্রান্ত হয়েছিল ঋতিকা । চিকিৎসক যখন আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন তখন ঋতিকার সটানউত্তর ছিল,"আমি তো বিরল তাই আমার রোগটাও বিরল ।" দ্রুত এবং উন্নতচিকিৎসার হাত ধরে ঋতিকা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । কেমোর কারণে মাথার চুল হারিয়েছে সে ।তবে তা ফিরে আসবে জেনেই আক্ষেপ নেই । বরং বাড়িতে ফিটনেস গড়ে তুলতে শরীরচর্চা শুরুকরেছে রিতিকা । যেহেতু রেঞ্জে যাওয়া শুরু করা যায়নি, তাই "ড্রাই প্র্যাকটিস"শুরুকরেছে ঋতিকা । বন্দুকের ওজন সাড়ে পাঁচ কেজি । তা হাতে তুলতে আরও একটু সময় নিতে চায় । ইতিমধ্যে হাসপাতালের বেড থেকেঅনলাইন শুটিংয়ের অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছে ঋতিকা । তার হার না মানা মনোভাবে খুশিকোচ জয়দীপ কর্মকার । তার মুখেও প্রত্যয়ী প্রতিভাবান শুটারের সম্বন্ধে প্রশংসা ।নতুন ভোরের আশায় ক্যানসার জয়ী শুটার ঋতিকা কর্মকার ।