কলকাতা, 10 জুলাই: আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বাংলার কয়েকশো যোজনের দূরত্বটা বেশ খানিকটা মুছে দিয়েছিলেন ময়দানের এক ফুটবল সন্ন্যাসী । অমল দত্ত । অমলের বদলে ডায়মন্ড দত্ত বললে অত্যুক্তি হয় না । একগুঁয়ে, নিজের বিশ্বাসে অবিচল, ময়দানে বদনামও কম ছিল না । ময়দানী ফুটবল বোদ্ধারা বলেন, তিনিই প্রথম ভারতীয় ফুটবলকে হাতে ধরে আধুনিকতার রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করেছেন (Amal Dutta was one of the greatest Football coaches in Kolkata Maidan) ।
সাতানব্বইয়ে তাঁর আমদানি করা সেই ডায়মন্ড সিস্টেমই ফেল করে । ফেডারেশন কাপে কার্যত উড়তে থাকা মোহনবাগানকে মাটি ধরিয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পিকের ইস্টবেঙ্গল । কিন্তু ওই পর্যন্তই । অমল দত্তকে মাটি ধরাতে পারেননি ময়দানের কোনও 'প্রতিদ্বন্দ্বী'ই ।
এক লাখ তিরিশ হাজার দর্শক এসেছিলেন ওই ম্যাচ দেখতে । সেই ম্যাচে অমল দত্তের দলকে তিন গোল দিয়েছিলেন সদ্য জেসিটি থেকে ফের লাল-হলুদে ফেরা বাইচুং ভুটিয়া । তাতেও দমেননি ময়দানের 'বিদেশী' কোচ । ভাইচুংকে ‘চুং-চুং’ বলতেও কসুর করেননি । শুধু কী তাই, কোনও দিন সোসোকে ‘শশা’, ওমোলোকে ‘অমলেট’ । কারণ একটাই, যেনতেন প্রকারেণ প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দেওয়া । ইস্টবেঙ্গলের ওমোলোর মতো ডিফেন্ডার মোহনবাগানে আছেন কি না, প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "আমার বাঘাকে (সত্যব্রত ভৌমিক) আলকাতরা মাখিয়ে নামিয়ে দিলেই ওমোলো হয়ে যাবে ।”
আরও পড়ুন : ফুটবল মক্কায় ‘বাদশা’ হয়ে ওঠার কাহিনি, ইটিভি ভারতকে শোনালেন আকবর
যাত্রা শুরু হাওড়ার বালির কোচিং ক্যাম্পে । তার পরে সন্তোষ ট্রফিতে রেলওয়েজকে কোচিং দিয়ে শুরু। 1963 তে ইস্টবেঙ্গলই কোচ অমল দত্তর প্রথম বড় ক্লাব । সেখান থেকে ওড়িশা । একেবারে আনকোরা একটা রাজ্যকে গোল বলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন তিনি । 1969 সালে কলকাতায় ফেরেন মোহনবাগানের হাত ধরে । এসে বদলে দিলেন ময়দানি চাল-চলনই । বাগানের সবুজ গালিচায় ছোঁয়া দিয়েছিলেন এক টুকরো ইউরোপীয় ঘরানার । নতুন সিস্টেম, 4-2-4 । কলকাতা শুধু নতুন ফুটবলই দেখল না, গোটা মরশুম জুড়ে রীতিমতো রাজ করল মোহনবাগান । অমল দত্তের হাত ধরে লিগ, শিল্ড-ই গঙ্গাপাড়ে আসেনি । শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে 3-0 গোলে পর্যদুস্ত করে বাগান ।
আরও পড়ুন : কসমসের জালে প্রায় বল জড়িয়ে ফেলেছিলাম, স্মৃতিচারণায় ছোটে মিয়াঁ
অমল দত্ত মানে গোল বল ঘিরে শুরু স্বপ্ন দেখা বা দেখানোই নয়, অন্যের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়াও । দেশের সমসাময়িক কোচেরা যখন জোর দিয়েছেন দামি খেলোয়াড়ে, অমল দত্ত তখন চোখ রেখেছেন বিশ্ব ফুটবলে । তথাকথিত ছোট দল থেকে খেলোয়াড় তুলে এনে শুধু তাঁদের তারকা বানানোই নয়, পরিণত করেছেন আদন্ত টিমম্যানেও ।
ভারতীয় ফুটবলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হাবাস, ফেরান্দো, ভিকুনারা । শুধু কী তাই, কর্পোরেটে পরিণত হওয়া ভারতীয় ফুটবলও রীতিমতো জৌলুশহীন । সবুজ গালিচায় আলপনা নয়, অদ্ভুদ আকিবুকি কাটছেন দেশের তামাম বেনিয়ারা, তখন সেই ফুটবল পাগল কোচকে ভীষণ দরকার ভারতীয় ফুটবলের।