কলকাতা, 13 মার্চ : মধুর নাম কলকাতার তিন প্রধান । ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান । এই তিন ক্লাবের সদস্যপদ চিরকালীন সম্মানের । পদাধিকারী হলে তো বাড়তি পালক যোগ হয়। শনিবারের বিকেলে রক্তাক্ত মোহনবাগান । আসন্ন ক্লাব নির্বাচন ঘিরে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ ঘণ্টায় কেন রক্তাক্ত হল ক্লাব প্রাঙ্গণ ? তা কেউ বুঝতে পারছেন না ৷ অন্তত ক্লাব কর্তারা তাই দাবি করেছেন ৷ রবিবার ময়দান থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে (Police File A Suo Moto Case in Mohun Bagan Club Violence) ৷ তদন্তে নেমে 4 জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ (Police Arrests 4 Persons in Mohun Bagan Club Violence) । তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ জমায়েত, ক্লাব সম্পত্তি ভাঙচুরের মামলা দায়ের হয়েছে ৷ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷
15 এবং 16 মার্চ মনোনয়নপত্রগুলির পরীক্ষা হবে । তার পরেই নির্বাচন হবে কি না তা স্পষ্ট হবে ৷ আপাতত সচিব পদপ্রার্থী দেবাশিস দত্তের একটি মাত্র প্যানেলের মনোনয়ন জমা পড়েছে । ফলে বিদায়ী কমিটির অর্থসচিবের নয়া সচিব পদে বসা সময়ের অপেক্ষা । কিন্তু, সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ ঘণ্টার রক্তাক্ত উত্তেজনা । ঘটনাটি যখন ঘটেছিল তখন কর্তারা ক্লাবেই বৈঠকে ছিলেন ৷ তাঁরা বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে ক্লাবের কোনও সম্পর্ক নেই । বহিরাগতদের মধ্যে ঘটা উষ্মার প্রতিফলন । তাঁদের এই মামুলি মন্তব্যে বিতর্ক থামছে না ।
অভিযোগ স্বপন বন্দোপাধ্যায়ের লোকেরা ভিড় করেছিলেন ক্লাবের বাইরে ৷ উল্টোদিকে ছিল প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের লোকজন ৷ তাঁদের মধ্যেই এই মারামারি । রাজনৈতিক চাপানউতোর ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে । সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘নির্বাচন হলেই অশান্তি এখন এই রাজ্যের নিয়ম হয়ে গিয়েছে । খেলার মাঠের নির্বাচনে এই ঘটনা দেখাচ্ছে, আমাদের রাজ্য কোন দিকে যাচ্ছে । লজ্জার কোনও শেষ নেই ৷’’
আরও পড়ুন : Mohun Bagan Election : ক্লাব নির্বাচনের মনোনয়নকে ঘিরে মোহনবাগানে ধুন্ধুমার, আহত বেশ কয়েকজন
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এখন এই রাজ্যের নির্বাচন মানেই ছাপ্পা, মারামারি । চিকিৎসকদের নির্বাচনে রাস্তায় নেমে মারামারি হয়েছে । ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে । এবার খেলার মাঠের নির্বাচনে একই ছবি । সব জায়গায় নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করার চেষ্টার জন্যই এই হাল ৷’’ তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই বলে দাবি করা হয়েছে ৷ একটি মাত্র প্যানেল মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচন হবে না । তাই সবকিছু শান্তিপূর্ণ হবে বলে দাবি করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে ৷
আরও পড়ুন : ATK Mohun Bagan vs Hyderabad FC : হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে থেকেও তিন গোল হজম, হারল এটিকে মোহনবাগান
সমালোচনার ঝড় উঠেছে সবুজ মেরুনের প্রাক্তনীদের মধ্যেও ৷ সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কী হচ্ছে ? কারা করল এটা ? তা কর্তাদের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ শুনলাম 4 জন গ্রেফতার হয়েছেন । আরও কতজন আছেন এই ঘটনার পেছনে সেটাও দেখা দরকার ৷ মোহনবাগানের ঐতিহ্য সম্বন্ধে এই ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিরা অবগত নন ৷’’
আরেক প্রাক্তনী প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তিনবছর অন্তর নির্বাচন হয় ৷ সেখানে এই ঝামেলা মানা যায় না ৷ ক্লাব গেটের সামনে একদল লোক বাঁশ লাঠি নিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ৷ তা মানা যায় না ৷’’ মোহনবাগানের কার্যকরী সমিতিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি নতুন নয় ৷ প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন ৷ ছিলেন বর্তমানে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও ৷ মন্ত্রী অরূপ রায় সহ-সভাপতি রয়েছেন ৷ নির্বাচনে এবার বড় প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফুটবল সচিব এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে আভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁর সমর্থন এখন অর্থসচিব দেবাশিস দত্তের দিকে ৷
আরও পড়ুন : German Open Super 300 : বিশ্বের 1 নম্বর-কে হারিয়ে জার্মান ওপেন ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে লক্ষ্য সেন
যে ক্লাবে ফুটবল বিভাগ দেখে গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী। ক্রিকেট ছাড়া ক্লাবের স্থায়ী দল নেই। হকি এবং টেনিস খেলা হয় না। সেই বিভাগের সচিব আদতে দফতরহীন মন্ত্রীর মত। অ্যাথলেটিক্স দল তৈরি করা হয় প্রয়োজন মাফিক। ক্লাবের কার্যক্রম বলতে মোহনবাগান দিবস আয়োজন, বারপূজো ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। তবুও তাই নিয়ে গন্ডগোল। যা মোহনবাগানকে ঘিরে গড়ে ওঠা ক্ষমতার লোভটাই বড় ৷