কলকাতা, 30 ডিসেম্বর: মুক্তোহারা ব্রাজিল । ফুটবল সম্রাট দীর্ঘরোগভোগের পরে পরলোকে । 82 বছরের মানুষটির সঙ্গে ফুটবলের শহর কলকাতার যোগ রয়েছে । দু'বার এই শহরে এসেছিলেন । প্রথমবার কসমস ক্লাবের হয়ে মোহনবাগান ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে । দ্বিতীয়বার বছর পাঁচেক আগে শুভেচ্ছা সফরে । পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ইডেনে হওয়া সেই ম্যাচে পেলের স্মৃতিতে আজও বুঁদ সবুজ মেরুনের তিন প্রাক্তন ।
"মাঝরাতে খবরটা সত্যিই মর্মান্তিক । দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন । সংকটজনক পরিস্থিতি ছিল । ফিরবে না মনে হলেও একটা আশা ক্ষীন হলেও ছিল । খবরটা ফুটবলের জন্য দুঃখের । সেরা দূতকে হারালাম । পয়তাল্লিশ বছর আগে একবার খেলার সুযোগ হয়েছিল । তার খেলার পরিমাপ করার ধৃষ্ঠতা আমার নেই । তবে মানুষ কত বড়, সাধারণকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা সেদিন দেখেছিলাম । ম্যাচের পরে পার্টি । গ্র্যান্ড হোটেলে পেলের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়েছিল আমাদের । আমাকে দেখেই বলেছিলেন জার্সি নম্বর ফোর্টিন আমাকে খেলতে দেয়নি । সস্নেহে জড়িয়ে ধরেছিলেন । সেই স্নেহের উত্তাপ আজও অনুভব করি । রাতে এই খবর সত্যিই বেদনার । তিনি যেখানেই থাকুন আত্মার চিরশান্তি কামনা করি," এক নিশ্বাসে স্মৃতিচারণ প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারের (Goutam Sarkar)।
আরও পড়ুন: পেলের পায়ের ইনস্যুরেন্স, কাদা মাঠে নামা যাবে না ! ভেস্তেই যাচ্ছিল মোহনবাগান-কসমস ম্যাচ
"মর্মান্তিক খবর । বৃষ্টিভেজা ইডেনে খেলা হয়েছিল । গ্যালারি ঠাসা । প্রথমবার ফুটবল সম্রাট কলকাতায় খেলতে এসেছিল । উন্মাদনা তুঙ্গে । আমরাও তেতে ছিলাম । কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন ঘাবড়ে না গিয়ে দেশের মান রাখার চেষ্টা কর । তারকাখচিত দল ছিল কসমস । আকর্ষনের কেন্দ্রে ছিলেন ফুটবল সম্রাট । কোনও সন্দেহ নেই মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম । অসুস্থ ছিলেন । অবস্থা সংকটজনক হচ্ছিল । সবাইকেই থামতে হয় । পেলেকেও হল আত্মার চিরশান্তি কামনা করি ৷" স্মৃতিচারণায় প্রদীপ চৌধুরী ।
"ধীরেন দা যখন ড্রেসিংরুমে ওই ম্যাচে পেলের বিরুদ্ধে খেলার কথা বলেছিলেন তখন বিশ্বাস হয়নি । সেবার আমি ছিলাম মোহনবাগানের অধিনায়ক । কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । মরশুমটা ভালো যাচ্ছিল না । এই অবস্থায় অতবড় ম্যাচ খেলার সুযোগ তা ঘরের মাঠে বিশ্বাস হয়নি শুরুতে । ধাতস্থ হয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম । প্রদীপদা তাতিয়ে যাচ্ছিল । খেলার দিন বৃষ্টি হয়েছিল । খেলার পরে পার্টিতে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল । অমায়িক ব্যবহার । প্রয়াত হয়েছেন বলে বলছি না । সেদিন তাঁর আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা মন ছুঁয়েছিল । খারাপ খবরটা যে আসবে তা জানতাম । বলার কিছু নেই । তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি ।" স্মৃতি কথায় সুব্রত ভট্টাচার্য ।
আরও পড়ুন: বিদায় মহাজীবন ! মুকুট পড়ে আছে রাজাই শুধু নেই, প্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে