নয়াদিল্লি, 15 অক্টোবর: "আমি এশিয়ান গেমসের আগে খেলাধূলাকে বিদায় নিতে চেয়েছিলাম ৷" সদ্য সমাপ্ত হওয়া হ্যাংঝাউ এশিয়ান গেমসে মরশুমের সেরা থ্রো'য়ে সোনা জয়ের পর এমনটাই জানালেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার অন্নু রানি ৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই'কে ভারতীয় জ্যাভলিন থ্রোয়ার এর কারণ উল্লেখ করে জানিয়েছেন, চলতি বছরে খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে এতটাই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি যে এশিয়ান গেমসের ঠিক আগে অবসর নিতে চেয়েছিলেন ৷
উত্তরপ্রদেশের মেরঠের 31 বছর বয়সি বর্শাবাহক হ্যাংঝাউ এশিয়ান গেমসে 62.92 মিটার বর্শা নিক্ষেপ করেন ৷ আর এই সংখ্যাটাই সিজন-সেরা ছিল তাঁর ৷ প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এশিয়াডে জ্যাভলিন থ্রো'য়ে সোনা জিতে নজির গড়েছেন ৷ পিটিআই'কে সোনার মেয়ে বলেন, "আমি এই বছর অনেক পরিশ্রম করেছি ৷ প্র্যাকটিস করতে বিদেশে গিয়েছিলাম ৷ সেখানে এক কোচের থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিই ৷ কিন্তু আমার পারফরম্যান্স তেমন হচ্ছিল না ৷ পুরো বছরটা প্রায় নষ্ট হতে বসেছিল। প্রতিটা প্রতিযোগিতায় একের পর এক খারাপ পারফরম্যান্স আসছিল ৷"
এরপর তিনি বলেন, "আমি এশিয়ান গেমসের আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে খেলা ছেড়ে দেব। এত চেষ্টা করেও আমি কিছুই জিততে পারিনি। সরকার এবং সাই (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) আমার জন্য এত টাকা বিনিয়োগ করেছিল কিন্তু আমি পারফর্ম করতে পারিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর বুদাপেস্টে, আমি খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম।" অগস্টে বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি অন্নু ৷ জ্যাভলিন থ্রোয়ার 57.05 মিটার থ্রো করে 11তম স্থানে শেষ করেন ৷ এরপর সেপ্টেম্বরে ব্রাসেলসে ডায়মন্ড লিগে 57.74 মিটার থ্রো করে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। পুরো মরশুমে 60 মিটারের কাছে যেতে পারেননি তিনি। তবে এশিয়ান গেমসে তিনি 62.92 মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেন ৷
খেলাধূলা থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে অন্নু বলেন, "এটা আমার মাথায় এসেছিল যে আমি অনেক স্ট্রাগল করে এখানে এসেছি, তাই এশিয়ান গেমসে শেষ সুযোগ নেব। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে এটাতে ভালো ফল হবে ৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী এবং অলিম্পিক পদকজয়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতাটি কঠিন ছিল। আমি যখন এশিয়াডে নামি, আমার মাথায় এটাই চলছিল যে অনেক কিছু দেখেছি, তাই সামনে এটাই শেষ সুযোগ ৷ আমি কেবল সোনা চেয়েছিলাম, রুপো বা ব্রোঞ্জ নয়।"
অন্নুর এই জায়গার আসার আগে তাঁর শৈশব নিয়ে বলেন, "ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রম তাঁকে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করেছিল ৷ আমি আমার পরিবারের পরিস্থিতি এবং কোথা থেকে শুরু করেছি তা মনে করে নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছি। আমি আরও ভেবেছিলাম যে আমি একা নই। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়। আমি এমন এক সমাজ থেকে এসেছি যেখানে টি-শার্ট পরলেও লোকেরা আমায় বাধা দিত। পরিবারে খেলাধূলা সম্পর্কে কারও ধারণা ছিল না। প্রথমবার যখন টি-শার্ট পরি তখন বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ৷ প্রতিযোগিতায় নামতে জুতোর প্রয়োজন ছিল ৷ বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম। এটাই ভাবতাম, পরাজয় মেনে নেব না।"
ভারতীয় বর্শাবাহকের এখন পাখির চোখ 2024 প্যারিস অলিম্পিক্স ৷ এ নিয়ে অ্যাথলিট বলেন, "আমার মতো খেলোয়াড়দের বলতে চাই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, নিজেদের জন্য লড়াই করা উচিত ৷ কারণ মেয়েরা সবকিছু করতে পারে। এখন আমরা সরকার, সাই এবং ফেডারেশন থেকে সবকিছু সমর্থন পাচ্ছি।" এশিয়ান গেমসে পুরুষদের জ্যাভলিন থ্রো'য়ে, অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী নীরজ চোপড়া স্বর্ণপদক জিতেছেন এবং কিশোর জেনা রুপো জিতেছেন। অন্নু বিশ্বাস করেন যে, ভারতে জ্যাভলিনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ৷ এই পারফরম্যান্স নয়া খেলোয়াড়দের আরও অনুপ্রাণিত করবে।
আরও পড়ুন: মেরঠের দুই কন্যের পরপর সোনা! জ্যাভলিনে পদক আনলেন অন্নু; 'সোনার মেয়ে' দেখালেন নীরজের ঝলক