কলকাতা, 6 মে : ফুটবল তাঁদের জীবন ৷ ফুটবলকে আকড়েই জীবনের রাজপথে তাঁরা দৌড়তে চান ৷ কিন্তু, দৌড়তে হলে প্রয়োজনীয় রসদটা তো দরকার ৷ টাইব্রেকারে হাতছাড়া হয়েছে সন্তোষ ট্রফি ৷ কেরালার কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থেকেও হেরেছে বাংলা ৷ দলের পারফরম্যান্স প্রশংসিত হচ্ছে ৷ কিন্তু, শুকনো প্রশংসায় যে পেট ভরবে না, তা জানেন মনোতোষ চাকলাদার এবং দিলীপ ওঁরাও ৷ এ বার তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াল রাজ্য সরকার ৷ নবান্ন থেকে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মনোতোষ চাকলাদার এবং দিলীপ ওঁরাওকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে (Government Job for Two Bengal Footballers Monotosh Chakladar and Dilip Oraon) ৷
সন্তোষ ট্রফিতে খেলার সময়ই মনোতোষ খবর পেয়েছিলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে তাঁর বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে ৷ দিলীপের বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই ৷ দমদমের মতো জায়গায় একটি বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই এটা ভাবাও কঠিন ৷ অথচ এই কঠিন অবস্থা নিয়ে তাঁরা কোনও অভিযোগ করেনি। সংকল্প করেছিলেন ফুটবলকে আকড়েই পাকা বাড়িতে ঘুমোবেন ৷ বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করবে বাড়ি ৷ বাংলা দলের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছেন অধিনায়ক মনোতোষ চাকলাদার এবং দিলীপ ওঁরাও ৷ তাঁদের লড়াই এবং ভাল ফুটবলের কথা শুনেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ৷ সেই খবর পেয়ে মনোতোষ এবং দিলীপের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। উদ্দেশ্য প্রতিভাবান ফুবলারদ্বয় যাতে হারিয়ে না যান ৷
সাংবাদিক সম্মেলনে অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুই ফুটবলারেরই আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ৷ মুখ্যমন্ত্রী, সংবাদমাধ্যমে ওদের সম্পর্কে শোনেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি নিজের কোটা থেকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন ৷ দিলীপের বাবা পৌরসভার সাফাইকর্মী ৷ মা অন্যের বাড়িতে রান্না করেন ৷ মনোতোষও অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ৷ আগামী 9 তারিখ ওদের কাছে চাকরির নিয়োগপত্র পৌঁছে যাবে ৷’’
সন্তোষ ট্রফির প্রথম ম্যাচে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পান মনোতোষ ৷ তার পরেও সেই অবস্থাতেই তিনি খেলে যান ৷ তাঁর সাহসিকতা প্রশংসিত হয়েছিল সেই সময় ৷ এ ছাড়াও পিয়ারলেস এফসি-র হয়ে কলকাতা লিগ জিতেছিলেন বাংলার এই ফুটবলার ৷
আরও পড়ুন : Prasun Banerjee : ক্লাব প্রশাসনে রাজনীতিকদের প্রবেশ অনুচিত, মত তৃণমূল সাংসদ প্রসূনের
মনোতোষের বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি ৷ অপরদিকে নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় থাকেন দিলীপ ৷ ফাইনালে কেরালার বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, দিলীপের বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ নেই ৷ বাবা দক্ষিণ দমদম পৌরসভার সাফাইকর্মী ৷ অভাবের মধ্যে দিয়েই লড়াই করে বড় হয়ে উঠেছেন দিলীপ ৷ সরকারি চাকরি পাওয়া মানেই নিশ্চয়তা ৷ তবে, স্বপ্নকে ছুড়ে ফেলা নয় ৷
আরও পড়ুন : Santosh Trophy 2022 : সন্তোষে লড়াকু পারফরম্যান্সে প্রাপ্তি শুধু সান্ত্বনা, শহরে ফিরল বাংলা দল
মনোতোষ বলছেন, কঠিন অবস্থা সামলে ফুটবল খেলেছেন ৷ এত দূর এসেছেন ৷ সন্তোষ ট্রফি জিততে না পারার দুঃখ রয়েছে ৷ তবে, হাল না ছেড়ে নতুন মরসুমে আরও খাটতে চান ৷ যাতে আইএসএল এর দলে জায়গা হয় ৷ সরকারি চাকরির খবর পেয়ে খুশি দিলীপ ওঁরাও ৷ ম্যাচে নিয়মিত গোল করার স্বপ্ন ওর চোখে ৷ বাবার কষ্ট তাঁকে বিধলেও, কিছু করার ছিল না ৷ এ বার বাবাকে কাজ করতে না দিয়ে, সংসারের ভার কাঁধে তুলে নেওয়ার কথা বলছেন দিলীপ ৷ একই সুর মনোতোষের গলাতেও ৷ চাকরি পাওয়ার পর এ বার ফুটবলে ঘিরে স্বপ্নের পরিধি আরও বড় করতে চান বাংলার দুই ফুটবলার ৷