কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: প্রয়াত হলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার পরিমল দে। 1970 সালে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের নায়ক তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 76 (Former Footballer Passes Away) ৷ তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ফুটবল মহল ।
দু'মিনিটে বাজিমাত! আর তাতেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছিলেন পরিমল দে। ময়দানে পরিচিত ছিলেন জংলা নামে। তবে খেলাটি ছিল ছবির মতো। স্বাধীন ভারতে বিদেশি ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রথম সবচেয়ে বড় সাফল্য ইরানের পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের জয়। ম্যাচের শেষভাগে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নেমেছিলেন। স্বপন সেনগুপ্তর বাড়ানো বল ধরেই গোল এবং তাতেই নায়ক পরিমল দে। সেইসময় ক্লাব ফুটবলে কোচের ধারণা আসেনি। দলের সিনিয়র ফুটবলাররাই দল পরিচালনা করতেন।
পাস ক্লাবের ম্যাচে রণকৌশল সাজিয়ে ছিলেন শান্ত মিত্র এবং প্রশান্ত সিনহা। প্রথম একাদশে পরিমল দে'কে না-রাখলেও শঙ্কর মালিকে জার্সিটি নিয়ে যেতে বলেছিলেন শান্ত মিত্র। ম্যাচের দুই মিনিট আগে নামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শান্ত মিত্র। দলের সিনিয়র ফুটবলারের আস্থা রেখেছিলেন দুরন্ত গোলে। ইস্টবেঙ্গলের সোনার ইতিহাস রচনায় স্থায়ী জায়গা করে নেন পরিমল দে। বর্তমানে সবই ইতিহাস। চলে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের 1968 সালের অধিনায়ক। পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ম্যাচের নায়ক। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল 76। মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটার সময় ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রখ্যাত শিল্পী সনৎ কর প্রয়াত, শোকের ছায়া শান্তিনিকেতনে
দীর্ঘদিন রোগভোগে আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দী ছিলেন। রেখে গেলেন পুত্র ও পুত্রবধূকে। বেশ কিছু বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই একাকীত্বে ভুগতেন। তারপর থেকেই অসুস্থতা। পরিসংখ্যানবিদ কুশল চক্রবর্তী জানান, ইস্টবেঙ্গলের জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত পরিমল দে উয়াড়ি ক্লাব থেকে জ্যোতিষ গুহর হাত ধরে ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলেন। ক্ষিপ্র গতি, গোলের মত শট এবং ফ্রিকিক নিতে দক্ষ পরিমল দে সহজেই দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। 1964 সাল থেকে 70 সাল পর্যন্ত লাল-হলুদ জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে গিয়েছিলেন ৷ কর্তাদের ব্যবহারে অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন মোহনবাগানে।
সেখানে দু'বছর খেলে ফের 1973 সালে ইস্টবেঙ্গলে ফিরে আসেন এবং ওই বছরই অবসর নেন। বাংলার জার্সিতে একাধিক ট্রফি জয়ের নায়ক তিনি। কাজল মুখোপাধ্যায়, শান্ত মিত্র, প্রশান্ত সিনহা, স্বপন সেনগুপ্ত, থঙ্গরাজদের সমসাময়িক সময়ে পরিমল দে ছিলেন নায়ক। 1966 সালে শিল্ড ফাইনালে বিএনআর এর বিরুদ্ধে গোল করার পরে দর্শকরা ক্লাবে নিয়ে আসেন। অসুস্থ ছিলেন, স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ময়দানে নেমে আসে। লাল-হলুদ কর্মকর্তারা রাতেই তাঁর কসবার বাড়িতে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী
পরিমলদে'র মৃত্যুতে গভীর শোকাহত স্বপন সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, "বন্ধুকে হারালাম। কথা হত না ঠিক কথা। তবু জানতাম বন্ধু আছে। মাঠে ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল টেলিপ্যাথির মতো। পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষ ভাগে নামানো হয়েছিল। নেমেই বলত বল দিস বাকিটা দেখে নেব। ইরানের ক্লাবের রক্ষণ ভাঙা যাচ্ছিল না। একজনকে কাটিয়েই দেখলাম জংলা দৌড় শুরু করেছে। বুঝে গেলাম গন্ধ পেয়েছে গোলের। বল বাড়িয়ে দিতেই ভুল করেনি তা জালে পাঠাতে। আরও কত ম্যাচ রয়েছে। এখন সবই স্মৃতি। যেখানেই থাকুক ভালো থেকো বন্ধু"।