কলকাতা, 22 ডিসেম্বর: ইস্টবেঙ্গল বনাম ওড়িশা এফসির আইএসএলের গত তিন বছরের স্কোরকার্ড দেখলে মনে হতে পারে টেনিস ম্যাচের স্কোরবোর্ড । গোলের উৎসবের সাক্ষ্য বহন করে সেইসব ম্যাচের স্কোর কার্ড । চলতি আইএসএল-এ ছবিটা বদলে গেল । ম্যাচ শেষ গোলশূন্য অবস্থায় । হারের হ্যাটট্রিকের পরে শেষ পাঁচ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল অপরাজিত । শেষ চার ম্যাচে লাল-হলুদ রক্ষণ অক্ষত। ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছাড়লেন প্রোভসুখন গিল । 10 ম্যাচে 11 পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল রইল 7 নম্বরে । অন্যদিকে 10 ম্যাচে 18 পয়েন্ট নিয়ে ওড়িশা 5 নম্বরে।
প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের বার্তা নিয়েই শুরু হয়েছিল ম্যাচ । শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সের এটাই ছিল নির্যাস । ক্লেটন সিলভা এবং নন্দকুমার তৎপর হলে ছবিটা আরও উজ্জ্বল হতে পারত । সের্জিও লোবেরো ম্যাচের আগের দিন ইস্টবেঙ্গলের থেকে ব্যবধান 10 পয়েন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন । যা ছিল কলকাতার ফুটবল দলের প্রতি হুংকার ।
পালটা হিসেবে লাল-হলুদ সাজঘর থেকে গরম বিবৃতি আসেনি । বরং প্রতিপক্ষকে সমীহ করে লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া হয়েছিল । যেকোনও প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতার কথাও শুনিয়েছিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত । সেটা যে কেবলই কথা ছিল না তা প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সে প্রমাণিত । রয় কৃষ্ণ, মোর্তাদা ফল, আহমেদ জাহু, লেনি রডরিগেজ, জেরিরা চলতি মরশুমে কলকাতাকে হ্যাপি হান্টিং গ্রাউন্ড বানিয়ে ফেলেছে ।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে তাদের সাফল্যই বোধহয় লোবেরোকে সাহসী কড়েছে । অন্যদিকে বার্সেলোনার একদা সহকর্মীকে বহুদিন ধরে চেনেন কুয়াদ্রাত । সামর্থ অনুযায়ী দল সাজিয়েছিলেন । এভাবেই গত 4 ম্যাচে প্রতিপক্ষকে মেপে সাফল্যের অঙ্ক কষেছেন । কখন আক্রমণের বৈচিত্র্যে আবার কখনও রক্ষণভাগের পরিকল্পনামাফিক ফুটবলে পয়েন্ট কুড়িয়েছেন ।
শুক্রবার যুবভারতী একই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন । লোবেরো প্রতিআক্রমণে গোলের পথ খুলতে চেয়েছিলেন । কিন্তু মাঝমাঠে শৌভিক, রক্ষণে হিজাজি মাহের-লালচুংনুঙ্গার দৃঢ়তায় ওড়িশা গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ । ফলে প্রথমার্ধে দুই দলের আক্রমণ প্রতি আক্রমণে উপভোগ্য ম্যাচ হলেও গোল হয়নি । বিরতির পরে শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টির আবেদন নাকচ করেন রেফারি। বক্সের মধ্যে ওড়িশার ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি দেননি তিনি ৷ বদলে তিনি দেন কর্নার ।
প্রথমার্ধে দুই দলের তুল্যমুল্য লড়াই হলেও দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম থেকে নিয়ন্ত্রক ওড়িশা । একের পর এক আক্রমণে লাল-হলুদ রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা চালাতে থাকে তারা ৷ নেতৃত্বে ছিলেন রয় কৃষ্ণ। ফিজিয়ান স্ট্রাইকার প্রান্ত বদল করে ইস্টবেঙ্গলকে অস্বস্তিতে ফেলার যথেষ্ট চেষ্টা করেন । রক্ষণে লোক বাড়িয়ে অবস্থা সামাল দেয় কুয়াদ্রাতের ছেলেরা । ধীরে ধীরে ইস্টবেঙ্গলও প্রতিআক্রমণের হাত ধরে খেলায় ফিরতে থাকে । 82 মিনিটে ক্লেইটন সিলভার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। 85 মিনিটে পিভি বিষ্ণুও সুযোগের সদব্যবহার করতে ব্যর্থ হয় । ফলে দুই কোচের ফুটবল বুদ্ধির ট্যাকটিকাল লড়াই শেষ হল গোল শূন্য ড্র তে।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পরে এবার খারাপ রেফারিংয়ের শিকার ইস্টবেঙ্গল এফসি । নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করলেন রেফারি । কার্যত রেফারির বদান্যতায় ওড়িশা অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল । তবে রেফারির বঞ্চনা ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে চলতি আইএসএলে বেঙ্গালুরু ম্যাচেও হয়েছিল । সেবারও পেনাল্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল কুয়াদ্রাতের ছেলেদের।
আরও পড়ুন: