কলকাতা, 23 জুলাই : একবছর আগে বাংলা দলের মেয়েদের জাতীয় সেরা করেছেন । কিন্তু বর্তমানে কোরোনার কবলে পরে তাঁর গলায় জীবন যন্ত্রনার ছবি । ওয়াটার পোলোর বর্ষীয়ান কোচ অসিত বক্সি বলছেন," শেষ হয় গেলাম । সবকিছু শেষ হওয়ার যন্ত্রণা যে কী ভয়ঙ্কর তা এই উনষাট বছরে এসে বুঝতে পারছি ।"
শেখর সরকার, উত্তর 24পরগনার শ্যামনগরে বাড়ি । বাড়িতে দেড়বছরের দুধের শিশু । তাছাড়াও পরিবারে আরও চারজন সদস্য । স্ত্রী, পুত্র, ভাই, মা, বাবা নিয়ে অথৈ জলে বছর চল্লিশের শেখর । পানিহাটি স্পোর্টিং ক্লাবে সাঁতারের কোচ । বাংলা দলের দায়িত্ব সামলেছেন একাধিক বার । বাংলা দল নিয়েই পুরো দেশ ঘুরেছেন । শিক্ষার্থীদের পদকের আলোয় চওড়া হওয়া মুখের হাসি এখন অতীত । ছেলের দুরন্তপনা আনন্দ দেয় । তা দেখে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন । কিন্তু বাকিদের অসহায় করুণ মুখগুলো দেখে ছটপট করেন ।
উত্তর 24পরগনার অয়ন ব্যানার্জী বলছেন,"কে শুনবে আমাদের কথা ।" হুগলির তমাল দাস, বিজয় দাস এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের শান্তুনু ঘোষদের গলায় শুধুই হাহাকার । "জানেন অন্য জায়গায় কাজ চাইতে গেলে, বলছে, তোমাদের কী কাজ দেব । জীবনে তো সাঁতার ছাড়া অন্যকিছু শিখতে পারিনি । অন্য কাজ পারব না । তবু শিখে নিতাম । সুযোগটাই তো দিচ্ছে না," অসহায় শোনায় শেখরের গলা ।
লকডাউনের অন্ধকার কবে দূর হবে কেউ হলপ করে বলতে পারছে না । লকডাউন এবং আনলকের শাটলে অনিশ্চয়তা বাড়ছে । "ক্লাব আমাকে সাহায্য করেছে । রাজ্য সাঁতার সংস্থা আশ্বাস দিয়েছে । রাজ্য সরকার না এগিয়ে আসলে আমরা শেষ," বলছিলেন শেখর ।
জাতীয় পর্যায়ে পদক জয়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন । সন্তানসম শিক্ষার্থীদের আশ্বাস গুরু হিসেবে তৃপ্তি দিয়েছে শেখর সরকারকে । মানসিক তৃপ্তি মনকে সান্ত্বনা দেয় ৷ কলকাতার কলেজ স্কোয়ারের সুইমিংপুলে ঝুলছে তালা । জেলার সুইমিংপুলে জমছে আগাছা । সাঁতারুরা বাড়িতে শরীর চর্চা করে দিন কাটাচ্ছেন । জলে নামার অনুমতি নেই । সাঁতার শিখিয়ে জীবনের কড়ি যোগাড় করা সাঁতার শিক্ষকরা জীবনের পুলে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন ।