কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় দু’টি খেলা ক্রিকেট ও ফুটবল ৷ যার প্রশাসনের শীর্ষ পদে একাধিকবার সম্মানের সঙ্গে বসেছেন বাঙালিরা ৷ কথা হচ্ছে বিসিসিআই বা বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া এবং এআইএফএফ বা অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ৷ কাকতালিয়ভাবে এই দুই স্বশাসিত সংস্থার বর্তমান প্রধান অর্থাৎ, সভাপতি দুই বাঙালি ৷ একজন বাঙালির আইকন তথা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ৷ আর দ্বিতীয়জন প্রাক্তন ফুটবলার তথা রাজনীতিবিদ কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey) ৷
সৌরভ বা কল্যাণ, দু’জনের ভারতের জনপ্রিয় দুই খেলার প্রশাসনের শীর্ষ পদে বসার গল্পের প্রেক্ষাপটটাও অনেকটা এক সুতোয় বাঁধা ৷ ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন যখন সুপ্রিম কোর্টের শেন দৃষ্টি থেকে বেরিয়ে লোধা কমিটির সুপারিশে নতুন সংবিধান অনুযায়ী নিজেদের আবারও তুলে ধরছে, ঠিক সেই সময় 2019 সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব ভার কাঁধে নেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তাঁর আগে অবশ্য জগমোহন ডালমিয়া এবং অনুরাগ ঠাকুর 2015-2019 সাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ কিন্তু, নতুন সংবিধান বলবৎ হওয়ার পর, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সেভাবে সফল হতে পারেননি অনুরাগ ঠাকুর ৷ যে কাজটা 2019 সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাফল্যের সঙ্গে করছেন সৌরভ ৷
আর কল্যাণ চৌবের ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনের শীর্ষ পদে বসার পর, তা খুব একটা সুখের হবে না ৷ কারণ, ফিফার নির্বাসন ওঠার পর নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে এআইএফএফ এর সভাপতি হয়েছেন তিনি ৷ যেখানে বসে তাঁর প্রথম কাজই হবে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ভাবমূর্তি ফেরানো ৷ কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে এআইএফএফ এ প্রফুল্ল প্যাটেলের একছত্র আধিপত্য ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে ৷ সেখান থেকে স্বচ্ছতা ফেরানো এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার একটা বড় কাজ কল্যাণ চৌবেকে করতে হবে ৷ আর সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় ফুটবলের বিকাশ ৷ আর সভাপতি পদে বসেই কল্যাণ চৌবের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে চলা অনূর্ধ্ব-17 মহিলা বিশ্বকাপের আয়োজন ৷ ক্রীড়ামহলে যার ব্যাখ্যা, ফুলের সিংহাসনে বসার আগে কাঁটা বিছানো পথ পেরোতে হবে এই বাঙালি ফুটবল প্রশাসককে ৷ কল্যাণ চৌবের শ্বশুরও একজন নামী ক্রীড়া প্রশাসক ছিলেন ৷ তিনি প্রয়াত মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র ৷
আরও পড়ুন: বাইচুং ভুটিয়াকে হারিয়ে এআইএফএফ সভাপতি হলেন কল্যাণ চৌবে
ক্রিকেট ও ফুটবল প্রশাসনের শীর্ষে এর আগেও বাঙালিরা দায়িত্বের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন ৷ ক্রিকেট প্রশাসনে সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল জেসি মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ৷
- 1951-1954 সাল পর্যন্ত জেসি মুখোপাধ্যায় বিসিসিআই এর সভাপতি পদে দায়িত্ব সামলেছেন
- 1969-1972 সাল পর্যন্ত বিসিসিআই সভাপতি ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বা এএন ঘোষ
- 1988-1990 সাল পর্যন্ত বিশ্বনাথ দত্ত
- আর তার পর 2019 থেকে বর্তমানে রয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে, বাঙালি না হলেও বাংলার থেকে বিসিসিআই এর দাপুটে প্রশাসক হিসাবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া ৷ তিনি 2001-2004 পর্যন্ত পূর্ণ সময়ের বিসিসিআই সভাপতি ছিলেন ৷ এর ভারতীয় ক্রিকেটের কঠিন সময় 2013 সালে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হন ৷ আর নয়া পরিকাঠামোয় সাজানোয় বিসিসিআই এর প্রথম সভাপতিও ছিলেন জগমোহন ডালমিয়া (2015) ৷ যিনি বাঙালি না হয়েও, খুব বেশি করেই বাঙালির তথা ময়দানের ‘জগু দা’ ছিলেন ৷
আরও পড়ুন: গুরু গ্রেগকে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা সৌরভের, পছন্দের জন রাইট
আর অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনে বাঙালির আধিপত্য সেই স্বাধীনতার আগে থেকে ৷ বাংলার ফুটবলের দাপটও ছিল তেমনি ৷ ভারতীয় ফুটবলের প্রথম বাঙালি প্রশাসক ছিলেন পঙ্কজ গুপ্ত ৷
- 1945-1948 সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতার পরবর্তী দুই সময়ে এআইএফএফ এর সভাপতি ছিলেন পঙ্কজ গুপ্ত
- মণিন্দ্র (বেচু) দত্ত রায় 1951-1975 সাল সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে ফুটবল প্রশাসক ছিলেন এআইএফএফ এর
- 1988-2008 সাল টানা 20 বছর এআইএফএফ এর সভাপতি ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি
- 2022 সালের 2 সেপ্টেম্বর থেকে চতুর্থ বাঙালি হিসাবে এআইএফএফ এর সভাপতি হলেন কল্যাণ চৌবে
তবে, ক্রিকেট ও ফুটবল প্রশাসনের শীর্ষে দুই বাঙালি থেকেও বাংলার খেলার কতটা উন্নতি হচ্ছ, সেই প্রশ্নটাই তুলে দিলেন বিসিসিআই এর প্রাক্তন যুগ্ম সচিব গৌতম দাশগুপ্ত ৷ আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ‘‘সত্যি বলতে গেলে একজন ক্রীড়া প্রশাসক কী করবেন, যদি খেলোয়াড় না থাকেন ৷ আসল উদ্দেশ্য হল, খেলাটাকে প্রোমোট করা ৷ আমরা চাইব বাংলা থেকে আরও বেশি খেলোয়াড়, আম্পায়ার এবং রেফারি প্রোমোট হোক ৷ কিন্তু, সেই মানের লোকজন আমরা এই রাজ্য থেকে বের করতে পারছি না ৷’’
আরও পড়ুন: টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর শুধু ধোনির মেসেজ পেয়েছেন, বিস্ফোরক কোহলি
গৌতম দাশগুপ্তের আক্ষেপ ক্রীড়া প্রশাসনে বাঙালি থেকেও, বাংলার কোনও লাভ হচ্ছে না ৷ তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণ চৌবে কী করবেন ? সৌরভই বা কী করতে পারছে ? হ্যাঁ আমরা বাঙালি হিসাবে গর্ব করতে পারি ৷ কিন্তু, খেলাধূলার প্রশ্নে আমরা আশাব্যঞ্জক জায়গায় নেই ৷’’ আর এই প্রসঙ্গে, বাংলার ফুটবলের স্বর্ণযুগের কথা তুলে ধরেন গৌতম দাশগুপ্ত ৷ যখন ভারতীয় দল বাছাইয়ে কতজন অবাঙালি ফুটবলারকে রাখা হল সেই খোঁজ করা হত ৷