কলকাতা, 19 জুলাই: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অন্ধভক্ত ৷ পুলিশ এসি'র বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ কল্যাণীতে হ্যাটট্রিক করে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন ৷ আর মঙ্গলবার বিকেলের পর 'টক অফ দ্য টাউন' এরিয়ানের সৈকত সরকার ৷ এদিন অমল দত্তর নামাঙ্কিত দমদম স্টেডিয়ামে যে গোলটা করলেন সৈকত, তা দেখতে গোবি-সাহারার বুকে ক্রোশ কে ক্রোশ হাঁটা যায় ৷ ফ্রি-কিকে ভেসে আসা বলে পেনাল্টি বক্সের 35 গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর বাইসাইকেল কিক মঙ্গলবার কাস্টমসের জালে জড়াতেই ফিরল শ্যাম থাপা, বাইচুং ভুটিয়াদের বাইসাইকেল কিক কিংবা সাইডভলিতে করা সেইসব গোলের স্মৃতি, যা লাইফটাইমের জন্য গেঁথে রয়েছে অনুরাগীদের হৃদয়ে ৷ মঙ্গলবার সৈকতের গোল একঝলক দেখলে কারও প্রিমিয়র লিগ বলে ভ্রম হতে পারে ৷ কিন্তু এটাই সত্যি যে কলকাতা ফুটবল লিগেও এমন বিশ্বমানের গোল হয় ৷
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা কল্যাণীর সৈকতের চোখে যা কিছু স্বপ্ন সব ফুটবলকে আঁকড়েই। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে সেই স্বপ্ন আরও জোরালো হল বৈকি ৷ দীপেন্দু বিশ্বাস, অসীম বিশ্বাসদের পর বিশ্বস্ত কোনও বাঙালি স্ট্রাইকারের খোঁজ এখনও জারি ময়দানে ৷ যার জন্য বিদেশীহীন এবারের কলকাতা লিগ ৷ সেই পালে যেন খানিক দোলা দিলেন সৈকত ৷
গতকাল বিকেলের পর থেকে এরিয়ানের জার্সি নম্বর 28-এর খোঁজ নিচ্ছেন অনেকেই। কারণ, ব্যাকভলি কিংবা সাইডভলি নিয়ে বাঙালি চিরকালই নস্টালজিক। শ্যাম থাপা, বাইচুং ভুটিয়া তো বাইসাইকেল কিকের জন্যই প্রসিদ্ধ । কিন্তু বিস্ময় গোলের পর সৈকতকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে স্মিত হেসে তাঁর উত্তর, "কাদামাঠে বাঙালি তো ব্যাকভলি মারতে ভালোবাসে । আমি তাই কোনও চিন্তাভাবনা করে মারিনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলটিকে পায়ের সঙ্গে সংযোগ করতে চেয়েছিলাম মাত্র।" তবে গোলের জন্য প্রশংসা পেলেও দল হেরে যাওয়ায় মন ভালো নেই তাঁর ৷
প্রতিভা, খিদিরপুর, রেনবো এসি, কাস্টমস হয়ে চলতি মরশুমে এরিয়ানে সই করেছেন সৈকত । তবে ময়দানের চৌহদ্দি পেরিয়ে সৈকত ইতিমধ্যেই রিয়াল কাশ্মীরের হয়ে আই লিগে অংশ নিয়েছেন। এ মরশুমে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রস্তাব না-থাকলেও বিস্ময় গোলের পর সম্ভাবনা যে বাড়ল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: পাঠচক্রকে চার গোলে উড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক সাদা-কালোর
কোচ বিমান মণ্ডলের হাতে কল্যাণীর মাঠে প্রকৃত ফুটবল শিক্ষার শুরু সৈকতের। তারপর ধীরে ধীরে 2017 বালি প্রতিভার জার্সিতে কলকাতা ময়দানে আত্মপ্রকাশ। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে আদর্শ মানেন সুনীল ছেত্রীকে। নিয়মিত বিদেশি ফুটবল দেখে অনুসরণের চেষ্টা করেন। এই কাজে সৈকতের অভিভাবক কোচ দীপক চক্রবর্তী। বাবা-মা এবং এক দাদাকে নিয়ে সৈকতের পরিবার। মঙ্গলবার কাস্টমসের বিরুদ্ধে তাঁর গোলের প্রশংসা পৌঁছে গিয়েছে পরিবারের কানেও। বাবা স্বপন সরকার গোলের ভিডিয়ো দেখেন সৈকতের ফোনেই । সৈকত জানান, আমার খেলা থাকলে বাবা-দাদা অ্যাপের মাধ্যমে দেখে।
চাকরি পাননি, আপাতত ফুটবল খেলেই জীবন চলছে। কলকাতা লিগের পরে ফের আই লিগের কোনও ক্লাবে খেলতে চান। সবমিলিয়ে ফুটবলকে আঁকড়েই সামনে তাকাতে চান। একটা গোল করে সাময়িক প্রশংসা নয়, ধারাবাহিক ভালো খেলে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। সৈকত বলছিলেন, "আইএসএলের কোনও দল এবং জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা স্বপ্ন। বয়সভিত্তিক রাজ্য বা জাতীয় স্তরে খেলিনি। তবে নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চাই ৷"