কলকাতা , 29 সেপ্টেম্বর : সংগ্রহশালার আঙ্গিকে পুরোনো ব্যবহৃত জিনিস স্মারক হিসেবে একত্রিত করা নয় , পাহাড়কে জানার, নতুন ভাবনার বাস্তবায়ন যেন "বেসক্যাম্প" । হাওড়ায় মাটিতে হিমালয়কে নিয়ে, বিশেষ করে মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে অভিনব সংগ্রহশালা পর্বাতোরোহী মলয় মুখোপাধ্যায়ের "বেসক্যাম্প" ।
নিজে এভারেস্ট জয়ীদের তালিকায় রয়েছেন । শুধু তাই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন শৃঙ্গ জয়কে অভ্যাসে পরিণত করা মানুষটি এবার পর্বতারোহণ সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে চান । তাই হাওড়ার রামরাজাতলায় নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বেসক্যাম্প । পর্বতারোহনের প্রথম ধাপেই থাকে বেসক্যাম্প । যেখান থেকে মূল গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন অভিযাত্রীরা । বেসক্যাম্পে বসেই নির্ধারণ হয় অভিযানের কৌশল । সেই কথা মাথায় রেখেই তাঁর সংগ্রহশালার নামকরণ করেছেন মলয় মুখোপাধ্যায় ।
কলকাতা ও হাওড়া দুই শহরের অভিযাত্রীদের আগামী অভিযান পরিকল্পনার স্থান হতে পারে বেসক্যাম্প । বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে আসা শেরপার দল কিংবা অভিযান শেষে বাড়ি ফেরার পথে ক্লান্ত অভিযাত্রীদের সাময়িক আস্তানা হতে পারে মলয় মুখোপাধ্যায়ের বেসক্যাম্প ।
"যেকোনও পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পেছনে একটা স্বপ্ন থাকে । বেসক্যাম্প সেই স্বপ্নের রূপায়ণ বলা যেতে পারে । আমি যখন ছোটো ছিলাম, অভিযানের স্বপ্ন দেখতাম তখন শহরের মধ্যে এমন একটা আস্তানার অভাব অনুভব করেছি । তাই এবার এইরকম কিছু করার চেষ্টা করেছি । ইতিমধ্যে হাওড়া ও কলকাতা শহরের অভিযাত্রীরা নিয়মিত এখানে আসছেন । আড্ডা মারছেন । আর কি করা যায় তার পরামর্শ দিচ্ছেন ৷" বলেন মলয় মুখোপাধ্যায় ।
বেসক্যাম্পের দেওয়ালে রয়েছে এভারেস্ট অভিযানের বিভিন্ন স্মারক , গ্রাফিটির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে অভিযানের কথা । রয়েছে তেনজিং নোরগে থেকে রাধানাথ শিকদারের ছবি । এভারেস্ট অভিযানে ব্যবহৃত সরঞ্জামের সংগ্রহ রয়েছে । সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, দেবাশিস বিশ্বাসদের মতো এভারেস্ট জয়ীদের অভিযানে ব্যবহার্য সরঞ্জামও রয়েছে ।
"উদ্যোগ আমার। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সবাই । শুধু ভারত নয় প্রতিবেশী বাংলাদেশের অভিযাত্রীরাও বেসক্যাম্প নিয়ে আগ্রহী । অভিযানের আগে এবং পরে ওদের সাময়িক ঠিকানা হবে বেসক্যাম্প । বাংলাদেশের অভিযাত্রীরাও এখানে এসে থাকতে পারবেন। পুরুলিয়ার পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও এখানে স্বাগত," বলছেন মলয়।
ইতিমধ্যে তাঁকে দেখে তরুণ প্রজন্ম পর্বতারোহনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে । বেসক্যাম্পের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সামলাচ্ছেন মলয় মুখোপাধ্যায়ের ছাত্ররাই । তাঁরাই যাবতীয় গ্রাফিটির কাজ করেছেন । বেসক্যাম্প সেজে উঠেছে তাঁদের পরিশ্রমেই । টোকিও অলিম্পিকে ডেমোনেস্ট্রেশন গেম হিসেবে রাখা হয়েছে পর্বতারোহনকে । সেই কথা মাথায় রেখে বেসক্যাম্পের ছাদে অলিম্পিকের পঞ্চবলয় আঁকা হবে । এখানেই শেষ নয় বেসক্যাম্পে থাকছে রক ওয়ালও । সেখানে দু'জন একসঙ্গে পর্বতারোহন অনুশীলন করতে পারবেন।
বেসক্যাম্প কি শুধুমাত্র অভিযাত্রীদেরই ডেরা?
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই মলয় মুখোপাধ্যায়ের উত্তর, "শুধু অভিযাত্রীরা কেন, যাঁরা হিমালয়কে ভালোবাসেন তাঁদের সবাইকে বেসক্যাম্পে স্বাগত । সকাল দশটা থেকে খুলে যাবে বেসক্যাম্পের দরজা । এখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে । আগ্রহীরা পড়তে পারবেন। স্লাইড শো থাকবে । অনেক CD রয়েছে, তা দেখতে পারবেন । চায়ের ব্যবস্থা থাকবে । চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বেসক্যাম্পে সময় কাটাতে পারবেন তাঁরা ।"
লকডাউনের জেরে মলয় মুখোপাধ্যায় ছয়টি অভিযানের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি । অক্টোবরের শেষে তিনি রওনা হচ্ছেন অভিযানে । তার আগে দ্রুত বেসক্যাম্পের কাজ শেষ করতে চান । অবস্থা স্বাভাবিক না হলে উদ্বোধনের পরিকল্পনাও করতে পারছেন না । ইচ্ছে রয়েছে কোনও কিংবদন্তি পর্বতারোহীকে দিয়ে উদ্বোধন করানোর । বলাই যায় "নিউ নর্মালে"র চায়ের কাপ হাতে হিমালয়ের কোলের সান্নিধ্য উপহার দেবে বেসক্যাম্প ।