কলকাতা, 30 অক্টোবর: মারাদোনা আপনি । মৃত্যু আপনাকে কেড়ে নিলেও আপনি অমর । কলকাতা চর্মচক্ষুতে আপনার দেখা প্রথমবার পেয়েছিল 2008 সালে । সাদা এবং অফ হোয়াইট রঙের জামা পরে শহরময় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন । আর আপনার পিছনে ছুটে ছিলাম আমরা । এখানে পা দেওয়ার আগে আপনি জানতেন না ফুটবলকে নিয়ে বাঙালি কতটা আবেগতাড়িত ।
আপনি যেদিন সাদাকালো পর্দায় প্রথমবার টেলিভিশনে সামনে এলেন, সেটা 1982 । ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু বুঝিয়েছিলেন রাজত্ব কায়েম করতে খুব শীঘ্র আসছেন । অঘোষিত সেই বার্তা অচিরেই দেখল বিশ্ব । আমরাও সম্মোহিত হলাম । 1986 সালে মেক্সিকোর মাটিতে আপনার মহাকাব্যিক পারফরম্যান্স বাঙালিকে দ্বিখণ্ডিত করে দিল । যে কলকাতা তথা বাংলা ছিল ব্রাজিল ফুটবলের ভক্তভূমি, যাঁরা 'জায়ান্টস অব ব্রাজিল'-এর মূর্ছনায় বুঁদ হয়ে থাকতেন, তাঁরাই মারাদোনা নামক সাড়ে পাঁচ ফুট চেহারাকে দেবতার আসনে জায়গা দিলেন । তারপর থেকে শুধুই আপনার হাসি-কান্নায় আমরা আন্দোলিত হয়েছি ।
আরও পড়ুন: নিলামে উঠছে ঈশ্বরের হাতের 'ছোঁয়া' পাওয়া সেই বল, কত দামে বিকোতে পারে ?
সেই আপনি (Diego Armando Maradona) এলেন 2008 সালে । মাঝরাতে আপনাকে দেখতে জনসমুদ্র ৷ তা দেখে আপনি চমকে গিয়েছিলেন । স্থানীয় বাংলা ভাষায় 'দিয়েগোদাদা' ডাকে বুঝতে পেরেছিলেন আমরা আপনারই লোক । তারপর পরবর্তী 48 ঘণ্টা মহেশতলা থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন । ইন্দিরাভবন থেকে মোহনবাগান মাঠ, মাদার হাউজ, যেখানেই আপনি গিয়েছেন, মানুষ আপনাকে ধাওয়া করেছে । আপনি স্প্যানিশ ভাষা ছাড়া নাকি কিছু বুঝতে পারেন না । অথচ ভারতীয় সাংবাদিকদের ইংরেজিতে করা প্রশ্নের সারমর্ম দোভাষী ছাড়া সহজেই বুঝে নিচ্ছিলেন । একজন সাংবাদিকের বারবার প্রশ্ন করতে চাওয়ার আকুতি বুঝেছিলেন বলেই না সঞ্চালককে থামিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার দিয়েছিলেন ।
আমরা আপনার ফুটবল স্বপ্নে দেখি । খেলতে পারার সাহস করি না । ফুটবল আবেগের দিক থেকে আমরা বিশ্বের যে কোনও ভক্তকুলকে টেক্কা দিতে পারি । এই তো 24 ঘণ্টা হয়নি জয়শঙ্কর সাহা ডার্বি দেখতে গিয়ে মারা গেলেন । ফুটবল ছিল তাঁর প্রাণ । তাই তো আপনি বলেছিলেন, নাপোলি ছাড়া এমন আবেগের বিস্ফোরণ কখনও দেখেননি । এই শহরে আপনার একটি মূর্তি রয়েছে । যার উদ্বোধক আপনিই । জীবিত মানুষের মূর্তি উন্মোচন স্বয়ং সেই মানুষটি করছেন, এমন ঘটনা এর আগে হয়নি ৷ আপনি আবেগতাড়িত হয়েছিলেন । আমরাও আবেগে ভেসেছিলাম । ফুটবল স্কিলের মতো আপনার জীবন, প্রহেলিকার মতো ।
যুক্তির কর্কশ পর্দা সরিয়ে আপনি মানুষের কথা বলতে চেয়েছেন । সেখানে কোনও সীমারেখা মানেননি । ধর্মের বেড়াজাল ভেঙেছেন । ধর্মের সর্বাধিনায়ককেও বলতে ছাড়েননি । সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন । আপনি বোহেমেনিয়ান । বেদুইন আপনি । আপাতত ঈশ্বরের কোলে জায়গা নিয়েছেন । আজ আপনার জন্মদিন । সারা বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে । আমাদের কলকাতা পিছিয়ে নেই । দিয়েগোদা, আপনি যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন । হ্যাপি বার্থ ডে ।