ETV Bharat / sports

জ্যোতিষ গুহর জন্যে অলিম্পিক খেলা হয়নি, অভিমানী সনৎ শেঠ - Sanath Seth played for Mohun Bagan

এককালের দাপুটে গোলরক্ষক ছিলেন ৷ এখন একাকীই কাটে বেশিরভাগ সময় ৷ এই বয়সে তাঁর সঙ্গী বলতে রেডিয়োর গান ও রবীন্দ্র সংগীত ৷

সনৎ শেঠ
author img

By

Published : Aug 5, 2019, 2:28 AM IST

Updated : Aug 5, 2019, 7:52 AM IST

কলকাতা, 5 অগাস্ট : পানিহাটি বটতলায় আপাত শান্ত পাড়ায় যদি আপনি কোনও বৃদ্ধ গলায় রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পান বা রেডিয়োর আওয়াজ পান তাহলে জানবেন তা সনৎ শেঠের । 89 বছরের মানুষটি আজ একা ও ঘরবন্দী । লাল রঙের গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলে আগন্তুকের পরিচয় জানার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে সম্ভাষণ করেন ।

একলা ঘরে ছোটো চৌকিতে আবদ্ধ সনৎ শেঠ । আগন্তুকের কুশল বিনিময় ও অতীত স্মৃতির গল্প বলে সময় কাটানোর চেষ্টায় থাকেন । আদুল গায়ে অগোছালো ঘরোয়া পরিবেশে ফুটবলের কথা বলে চলেন । যে শক্তপোক্ত শরীরটা একটা সময় প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারের পা থেকে অসীম সাহস ও ক্ষিপ্রতায় বল কেড়ে নিত তা এখন কার্যত চলৎশক্তিহীন । ক্রাচে ভর দিয়ে এঘর থেকে ওঘর করেন ঠিকই, কিন্তু খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারেই আটকে পৃথিবী ।

এই বয়সে নিজেকে ফুটবলার বলার চেয়ে মাঠের মালি বলতে ভালোবাসেন । তবে সেটা অভিমানে না বয়সের খেয়ালে তা বোঝা দায় । সম্প্রতি স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে । সেই ক্ষত এখনও দগদগে । ছেলে,বউমা, দুই নাতনির সাহচর্যে দিন কাটে তাঁর । তবুও সনৎ শেঠ একা । অবিন্যস্ত কথায় নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের সোনালি বিকেল রয়েছে, রয়েছে না পাওয়ার অতৃপ্তি এবং কর্তাদের অবিচারের কথা । তাঁর বয়সি প্রাক্তনরা যখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে নিজেদের পারফরমেন্স তুলে ধরতে শ্লাঘা বোধ করেন তখন সনৎ শেঠের গলায় অন্য সুর । লাল-হলুদ জার্সিতে অবসর নিলেও তাঁর অধিক প্রেম রেলওয়ে FC ও এরিয়ানের প্রতি । "রেলওয়ে FC-তে আমার জন্ম । এরিয়ান মামার বাড়ি, ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান আমার মাসি-পিসির বাড়ি ।" বলেই চোখ টিপে মুচকি হাসেন প্রাক্তন তারকা গোলরক্ষক ।

Sanat Seth
পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণায় মুখে হাসি সনৎ শেঠের

সালটা 1949 । সনৎ শেঠের বয়স মাত্র 19 । উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগে তখন দাপিয়ে গোলকিপিং করছেন । হঠাৎ একদিন ডাক এল রেলওয়ে FC ফুটবল ক্লাব থেকে । কারণ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অথচ প্রথম গোলরক্ষক অসুস্থ । দ্বিতীয় গোলরক্ষকের চোট । পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাক পড়ে সনৎ শেঠের । পাড়ার পরিচিত ফুটবল কর্তা ফণী ভট্টাচার্যের মাধ্যমে তাঁকে ডেকে পাঠান স্বরাজ ঘোষ । সেই শুরু । তারপর ধীরে ধীরে ময়দানে থিতু হতে থাকলেন পানিহাটির সনৎ । বারের তলায় সনৎ শেঠ থাকা মানে দলের বাকি 10 জন নিশ্চিন্ত । অকুতোভয় সনৎ শেঠ যেন বলের গন্ধ পেতেন । স্ট্রাইকারদের পা বা মাথা থেকে বল দখলে নেওয়াকে সহজাত করে তুলেছিলেন ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

এই সংক্রান্ত আরও খবর : দেশভাগের নির্মমতা থেকে কালজয়ী অলিম্পিয়ান, আজ একাকী কেশব

এভাবেই রেলওয়ে FC-র হয়ে খেলে 1952 সালে এরিয়ানে সই করলেন । ইতিমধ্যে ভারতীয় দলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করা হয়ে গেছে । বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জয় অভ্যাসে পরিণত করেছেন । এরিয়ানে টানা তিন বছর দাপিয়ে খেলার পরে প্রস্তাব এল ইস্টবেঙ্গলের থেকে । সচিব জ্যোতিষ গুহ খেলার কথা বললেন । কিন্তু রাজি হলেও এরিয়ানকে কথা দেওয়ায় সই উইথড্র করে নেন । ইস্টবেঙ্গলে না খেলার মাশুল অন্য ভাবে দিতে হয়ে ছিল সনৎ শেঠকে । 1956 সালের হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পাননি । কোচ রহিম সাহেব সনৎ শেঠকে দলে নিতে চাইলেও নির্বাচক প্রধান জ্যোতিষ গুহ তাকে নূ্যনতম সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না ।

1957 সালে কিছুটা দায়ে পড়ে লাল-হলুদ জার্সি চাপান । পরের বছর মোহনবাগানে সই করেন । ছ'বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে দাপিয়ে খেললেও 1963 সালে ফের দলবদল । "ওরা থঙ্গরাজকে পেয়ে আমাকে গুরুত্ব দিতে রাজি হল না ।" অভিমান আজও 90 ছুঁই-ছুঁই মানুষটির গলায় । 1964 সালে ফের এরিয়ানে প্রত্যাবর্তন । 1967 সাল পর্যন্ত ওখানেই খেলেছিলেন । 1968 সালে ফের ইস্টবেঙ্গলে সই করেন ৷ সেখান থেকেই কলকাতা ময়দানকে বিদায় জানান ।

Sanat Seth
ঘরে সাজানো পুরোনো দিনের ছবি

ময়দান থেকে সরলেও উত্তর 24 পরগনার হয়ে জেলা লিগে খেলতেন । তারপর কোচিং করিয়েছেন ছোটোদের । খুদে প্রতিভাদের গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ পেয়েছেন । একসময় সেখান থেকেও সরে গেছেন । বছরকয়েক আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেতেন । সেখানেও বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করতেন । এখন সেইসব আমন্ত্রণ আর আসে না । জন্মদিনে ভালো লাগা বলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শুভেচ্ছা চিঠি । ছেলে, বউমা, নাতনিরা নিজের জগতে ব্যস্ত । স্ত্রী কয়েক মাস আগে প্রয়াত । শরীরে থাবা বসিয়েছে বয়স । ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারেন না । হাতের আঙুলের ব্যথা কোনও কিছু আঁকড়ে ধরার পথে অন্তরায় । একসময় বেহালা বাজাতেন । ইচ্ছে হলেও তা আর পারেন না এখন । তাই বেহালার বাক্সে জমেছে ধুলো । সঙ্গী বলতে রেডিয়োর গান ও রবীন্দ্র সংগীত ।

Sanat Seth
মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা চিঠি

কলকাতা, 5 অগাস্ট : পানিহাটি বটতলায় আপাত শান্ত পাড়ায় যদি আপনি কোনও বৃদ্ধ গলায় রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পান বা রেডিয়োর আওয়াজ পান তাহলে জানবেন তা সনৎ শেঠের । 89 বছরের মানুষটি আজ একা ও ঘরবন্দী । লাল রঙের গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলে আগন্তুকের পরিচয় জানার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে সম্ভাষণ করেন ।

একলা ঘরে ছোটো চৌকিতে আবদ্ধ সনৎ শেঠ । আগন্তুকের কুশল বিনিময় ও অতীত স্মৃতির গল্প বলে সময় কাটানোর চেষ্টায় থাকেন । আদুল গায়ে অগোছালো ঘরোয়া পরিবেশে ফুটবলের কথা বলে চলেন । যে শক্তপোক্ত শরীরটা একটা সময় প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারের পা থেকে অসীম সাহস ও ক্ষিপ্রতায় বল কেড়ে নিত তা এখন কার্যত চলৎশক্তিহীন । ক্রাচে ভর দিয়ে এঘর থেকে ওঘর করেন ঠিকই, কিন্তু খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারেই আটকে পৃথিবী ।

এই বয়সে নিজেকে ফুটবলার বলার চেয়ে মাঠের মালি বলতে ভালোবাসেন । তবে সেটা অভিমানে না বয়সের খেয়ালে তা বোঝা দায় । সম্প্রতি স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে । সেই ক্ষত এখনও দগদগে । ছেলে,বউমা, দুই নাতনির সাহচর্যে দিন কাটে তাঁর । তবুও সনৎ শেঠ একা । অবিন্যস্ত কথায় নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের সোনালি বিকেল রয়েছে, রয়েছে না পাওয়ার অতৃপ্তি এবং কর্তাদের অবিচারের কথা । তাঁর বয়সি প্রাক্তনরা যখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে নিজেদের পারফরমেন্স তুলে ধরতে শ্লাঘা বোধ করেন তখন সনৎ শেঠের গলায় অন্য সুর । লাল-হলুদ জার্সিতে অবসর নিলেও তাঁর অধিক প্রেম রেলওয়ে FC ও এরিয়ানের প্রতি । "রেলওয়ে FC-তে আমার জন্ম । এরিয়ান মামার বাড়ি, ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান আমার মাসি-পিসির বাড়ি ।" বলেই চোখ টিপে মুচকি হাসেন প্রাক্তন তারকা গোলরক্ষক ।

Sanat Seth
পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণায় মুখে হাসি সনৎ শেঠের

সালটা 1949 । সনৎ শেঠের বয়স মাত্র 19 । উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগে তখন দাপিয়ে গোলকিপিং করছেন । হঠাৎ একদিন ডাক এল রেলওয়ে FC ফুটবল ক্লাব থেকে । কারণ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অথচ প্রথম গোলরক্ষক অসুস্থ । দ্বিতীয় গোলরক্ষকের চোট । পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাক পড়ে সনৎ শেঠের । পাড়ার পরিচিত ফুটবল কর্তা ফণী ভট্টাচার্যের মাধ্যমে তাঁকে ডেকে পাঠান স্বরাজ ঘোষ । সেই শুরু । তারপর ধীরে ধীরে ময়দানে থিতু হতে থাকলেন পানিহাটির সনৎ । বারের তলায় সনৎ শেঠ থাকা মানে দলের বাকি 10 জন নিশ্চিন্ত । অকুতোভয় সনৎ শেঠ যেন বলের গন্ধ পেতেন । স্ট্রাইকারদের পা বা মাথা থেকে বল দখলে নেওয়াকে সহজাত করে তুলেছিলেন ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

এই সংক্রান্ত আরও খবর : দেশভাগের নির্মমতা থেকে কালজয়ী অলিম্পিয়ান, আজ একাকী কেশব

এভাবেই রেলওয়ে FC-র হয়ে খেলে 1952 সালে এরিয়ানে সই করলেন । ইতিমধ্যে ভারতীয় দলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করা হয়ে গেছে । বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জয় অভ্যাসে পরিণত করেছেন । এরিয়ানে টানা তিন বছর দাপিয়ে খেলার পরে প্রস্তাব এল ইস্টবেঙ্গলের থেকে । সচিব জ্যোতিষ গুহ খেলার কথা বললেন । কিন্তু রাজি হলেও এরিয়ানকে কথা দেওয়ায় সই উইথড্র করে নেন । ইস্টবেঙ্গলে না খেলার মাশুল অন্য ভাবে দিতে হয়ে ছিল সনৎ শেঠকে । 1956 সালের হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পাননি । কোচ রহিম সাহেব সনৎ শেঠকে দলে নিতে চাইলেও নির্বাচক প্রধান জ্যোতিষ গুহ তাকে নূ্যনতম সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না ।

1957 সালে কিছুটা দায়ে পড়ে লাল-হলুদ জার্সি চাপান । পরের বছর মোহনবাগানে সই করেন । ছ'বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে দাপিয়ে খেললেও 1963 সালে ফের দলবদল । "ওরা থঙ্গরাজকে পেয়ে আমাকে গুরুত্ব দিতে রাজি হল না ।" অভিমান আজও 90 ছুঁই-ছুঁই মানুষটির গলায় । 1964 সালে ফের এরিয়ানে প্রত্যাবর্তন । 1967 সাল পর্যন্ত ওখানেই খেলেছিলেন । 1968 সালে ফের ইস্টবেঙ্গলে সই করেন ৷ সেখান থেকেই কলকাতা ময়দানকে বিদায় জানান ।

Sanat Seth
ঘরে সাজানো পুরোনো দিনের ছবি

ময়দান থেকে সরলেও উত্তর 24 পরগনার হয়ে জেলা লিগে খেলতেন । তারপর কোচিং করিয়েছেন ছোটোদের । খুদে প্রতিভাদের গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ পেয়েছেন । একসময় সেখান থেকেও সরে গেছেন । বছরকয়েক আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেতেন । সেখানেও বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করতেন । এখন সেইসব আমন্ত্রণ আর আসে না । জন্মদিনে ভালো লাগা বলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শুভেচ্ছা চিঠি । ছেলে, বউমা, নাতনিরা নিজের জগতে ব্যস্ত । স্ত্রী কয়েক মাস আগে প্রয়াত । শরীরে থাবা বসিয়েছে বয়স । ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারেন না । হাতের আঙুলের ব্যথা কোনও কিছু আঁকড়ে ধরার পথে অন্তরায় । একসময় বেহালা বাজাতেন । ইচ্ছে হলেও তা আর পারেন না এখন । তাই বেহালার বাক্সে জমেছে ধুলো । সঙ্গী বলতে রেডিয়োর গান ও রবীন্দ্র সংগীত ।

Sanat Seth
মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা চিঠি
Intro:পানিহাটি বটতলায় আপাত শান্ত পাড়ায় যদি আপনি কোন বৃদ্ধ গলার রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে পান বা রেডিও বাজার আওয়াজ পান তাহলে জানবেন তা সনৎ শেঠের। 89বছরের মানুষ টি আজ একা এবং ঘরবন্দি। লালরংয়ের গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলে আগুন্তুকের পরিচয় জানার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে সম্ভাষন করেন।
একলা ঘরে ছোট চৌকিতে বন্দী সনৎ শেঠ। আগুন্তুকের কুশল বিনিময় এবং অতীত স্মৃতি র গল্প বলে সময় কাটানোর চেষ্টা। আদুল গায়ে অগোছালো ঘরোয়া পরিবেশে ফুটবলের কথা বলে চলেন। যে শক্তপোক্ত শরীরটা একটা সময় প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারের পা থেকে অসীম সাহস ক্ষিপ্রতায় বল কেড়ে নিত তা এখন কার্যত চলৎশক্তিহীন। ক্রাচে ভর দিয়ে এঘর থেকে ওঘর করেন ঠিকই,কিন্তু খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারেই আটকে পৃথিবী।
নিজেকে ফুটবলার বলার চেয়ে মাঠের মালি বলতে এই বয়সে ভালোবাসেন। তবে সেটা অভিমানে না বয়সের খেয়াল তা বোঝা দায়। সম্প্রতি স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। সেই ক্ষত এখনও দগদগে। ছেলে বৌমা দুই নাতনির সাহচর্যে দিন কাটে তার। তবুও একলা বাতায়নে সনৎ শেঠ একা।
অবিন্যস্ত কথায় নিজের ফুটবল কেরিয়ারের সোনালি বিকেল রয়েছে, রয়েছে না পাওয়ার অতৃপ্তি এবং কর্তাদের অবিচারের কথা।
তার বয়সী প্রাক্তনরা যখন ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানে নিজেদের পারফরম্যান্স তুলে ধরতে শ্লাঘা বোধ করেন তখন সনৎ শেঠের গলায় অন্য সুর। লাল ড়লুদ জার্সিতে অবসর নিলেও তার অধিক প্রেম রেলওয়েফসি এবং এরিয়ানের প্রতি।"রেলওয়েফসি আমার জন্মভূমি, এরিয়ান মামার বাড়ি,ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান আমার মাসিপিসির বাড়ি,"বলেই চোখটিপে মুচকি হাসেন প্রাক্তন তারকা গোলরক্ষক।
সালটা 1949। সনৎ শেঠের বয়স মাত্র উনিশ। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা লিগে তখন দাপিয়ে গোলকিপিং করেন। হঠাৎ একদিন ডাক এল রেলওয়েফসি ফুটবল ক্লাব থেকে। কারন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অথচ প্রথম গোলরক্ষক অসুস্থ। দ্বিতীয় গোলরক্ষকের চোট। এই অবস্থায় অবস্থা সামাল দিতে ডাক পড়ে সনৎ শেঠের। পাড়ার পরিচিত ফুটবল কর্তা ফনি ভট্টাচার্যের মাধ্যমে তাকে ডেকে পাঠান স্বরাজ ঘোষ। সেই শুরু। তারপর ধীরে ধীরে ময়দানে থিতু হতে থাকলেন পানিহাটির সনৎ। বারের তলায় সনৎ শেঠ থাকা মানে দলের বাকি দশজন নিশ্চিন্ত। অকুতোভয় সনৎ শেঠ যেন বলের গন্ধ পেতেন। স্ট্রাইকার দের পা এবং মাথা থেকে বল দখলে নেওয়াকে সহজাত করে তুলেছিলেন। এভাবেই রেলওয়েফসির হয়ে খেলে 1952সালে এরিয়ানে সই করলেন। ইতিমধ্যে ভারতীয় দলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব হয়ে গিয়েছে।বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জয় অভ্যাসে পরিনত করেছেন। এরিয়ানে টানা তিনবছর দাপিয়ে খেলার পরে প্রস্তাব এল ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে। সচিব জ্যোতিষ গুহ খেলার কথা বললেন। কিন্তু রাজি হলেও এরিয়ানকে কথা দেওয়ায় সই উইথড্র করে নেন। ইস্টবেঙ্গলে না খেলার মাশুল অন্য ভাবে দিতে হয়ে ছিল সনৎ শেঠকে। 56 সালের হেলিসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পাননি।কোচ রহিম সাহেব সনৎ শেঠকে দলে নিতে চাইলেও নির্বাচক প্রধান জ্যোতিষ গুহ তাকে নুন্যতম সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না। 57 সালে কিছুটা দায়ে পড়ে লাল হলুদ জার্সি চাপিয়েছিলেন। 58সালে মোহনবাগানে সই করে ছিলেন। ছয়বছর সবুজ মেরুন জার্সিতে দাপিয়ে খেললেও 63সালে ফের দলবদল।"ওরা থঙ্গরাজকে পেয়ে আমাকে গুরুত্ব দিতে রাজি হল না," অভিমান আজও নব্বই ছুইছুই মানুষটির গলায়।64সালে ফের এরিয়ানে প্রত্যাবর্তন। 67সাল অবধি ওখানেই খেলেছি লেন। 68সালে ইস্টবেঙ্গলে সই করে মাঠকে বিদায় জানান।
ময়দান থেকে সরলেও উত্তর 24পরগনার হয়ে জেলা লিগে খেলেছিলেন। তারপর কোচিং করিয়েছেন ছোটদের। ক্ষুদে প্রতিভাদের গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ পেয়েছেন। একসময় তা থেকে সরে এসেছেন।কয়েক বছর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রন পেতেন। সেখানেও বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করতেন। সইসব আমন্ত্রনআর আসে না। জন্মদিনে ভালো লাগা বলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শুভেচ্ছা চিঠি। ছেলে বউমা নাতনী রা নিজের জগতে ব্যস্ত। স্ত্রী কয়েক মাস আগে প্রয়াত। ফলে আরও একা। বয়স শরীরে থাবা বসিয়েছে। ফলে খেলোয়াড়ী জীবনে পাওয়া চোট সনৎ শেঠকে কাবু করেছে।ক্রাচ ছাড়া হাটতে পারেন না। হাতের আঙ্গুলের ব্যাথা কোন কিছু আকড়ে ধরার পথে অন্তরায়। একসময় বেহালা বাজাতেন। ইচ্ছে হলেও তা আর পারেন না। তাই বেহালা র বাক্সে ধুলো। সঙ্গী বলতে রেডিও র গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত।


Body:ইস্টবেঙ্গলের


Conclusion:
Last Updated : Aug 5, 2019, 7:52 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.