কল্যাণী, 2 ফেব্রুয়ারি : ইস্টবেঙ্গলের কি আই লিগ থেকে অবনমন হবে ? কল্যাণী স্টেডিয়াম ফেরত লাল হলুদ সমর্থকদের মুখে একটাই আশঙ্কা মাখানো প্রশ্ন । ফের পরাজয়ের অন্ধকারে ইস্টবেঙ্গল । গতকাল কল্যাণী স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ়ের কাছে 1-0 গোলে পরাজিত হয় লাল হলুদ ব্রিগেড । গোলদাতা অ্যারোজ় অধিনায়ক বিক্রম প্রতাপ সিং । ম্যাচের সেরা অ্যারোজ়ের গোলরক্ষক লালবিকুলা ।
আই লিগের নয় ম্যাচে চার হার । ঝুলিতে মাত্র 11পয়েন্ট । কোচেরা বলছেন ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব । কিন্তু তা বিশ্বাস করার লোক লাল হলুদ সমর্থকদের মধ্যে নেই । ইন্ডিয়ান অ্যারোজ় চলতি আই লিগের পয়েন্ট টেবিলে লাস্টবয় । তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ মানে প্রতিপক্ষের প্রিয় মৃগয়া । কিন্তু ইস্টবেঙ্গল এতটাই খারাপ ফর্মে যে ফেডারেশনের শিক্ষার্থী ফুটবলারদের বিরুদ্ধেও জিততে পারে না । শনিবার সকালে কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেস গার্সিয়ার ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলাতে এসেছেন মারিও রিবেরা । লাল হলুদ ডাগ আউটে কোচের চেয়ারেও বসেছিলেন । মাঝের কয়েক ঘণ্টায় দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কোচিং ইউনিটের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে খবর নিয়ে অবস্থা বুঝতে চেয়েছেন । ম্যাচের শেষে তিনি দলের অসুখ ধরতে পারলেন কি না তা সময় বলবে । তবে মারিও বুঝে গেলেন পরিস্থিতি মোটেই গোলাপ বিছানো নয় । চেন্নাই সিটি FC-র বিরুদ্ধে যে একাদশ শুরু করেছিল তাতে দু'টো পরিবর্তন । মেহতাব সিংয়ের বদলে মার্তি ক্রেসপি এবং কাশিম আইদারার বদলে নওরেম । উইনিং কম্বিনেশন বদলে উন্নতি তো হয়েইনি, বদলে সময় যত গড়িয়েছে ততই দিগভ্রান্ত দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে ।
ভেঙ্কটেশের প্রশিক্ষণে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ় মূলত প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে থাকে । গতকাল ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকে আক্রমণের চাপ বাড়ালেও অ্যারোজ় ডিফেন্ডারদের পায়ের জঙ্গলে তা বারবার পথ হারিয়েছে । 15 মিনিটে জুয়ান মেরা গঞ্জালেসের কর্নার থেকে পরপর দু'বার সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন মার্তি ক্রেসপি । স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের সুযোগ নষ্টের সংক্রমণ যেন লাল হলুদের বাকি দশজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল । ফলে সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে বলের সিংহভাগ দখল রেখেও ইস্টবেঙ্গল পরাজয়ের অন্ধকারে । 22 মিনিটে বিক্রমের ব্যাকহিল থেকে বল পেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নিখিলরাজ । 39 মিনিটে ফের গোলের সুযোগ নষ্ট ইন্ডিয়ান অ্যারোজ়ের । এবার অপরাধী গিবসন । পদত্যাগী কোচ আলেয়ান্দ্রো না কি বার্ষিক দু'কোটি ষাট লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ ছিলেন । তাঁর পছন্দের স্প্যানিশ ফুটবলারদের বার্ষিক বেতনও চোখ কপালে তোলার মত । কিন্তু মোটা অর্থ হাতে পাওয়ার প্রভাব পারফরম্যান্সে নেই । মার্তি ক্রেসপির ডিফেন্সিভ দক্ষতা দলের চিন্তা বাড়াচ্ছে ।
হাইমে স্যান্টোস কোলাডো চলতি আই লিগে নিজের স্কোরিং বুটটা হারিয়ে ফেলেছেন । মার্কোস এসপাদা দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও তিনি কখনও প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেননি । শনিবার অ্যারোজ় ডিফেন্ডারদের সামনে গোলের বল বের করতে ব্যর্থ । খেলার শেষ মিনিটে লাল কার্ড দেখলেন । দর্শকদের গো ব্যাক ধ্বনিতে মেজাজ হারিয়ে গন্ডগোলে জড়ালেন । নবাগত আনসুয়োমা ক্রোমা ব্র্যান্ডনের পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে চাপ তৈরি করতে ব্যর্থ হন । উলটে ক্রেসপির দূরপাল্লার শট অ্যারোজ় গোলরক্ষকের হাত থেকে বেরিয়ে এলে তা ফাঁকা গোলে পাঠানোর বদলে পোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন । বাকি রইলেন জুয়ান মেরা গঞ্জালেস । কিন্তু তাঁর অবস্থা অসৎ সঙ্গে পড়ে খারাপ হওয়ার মত । এই স্প্যানিশ উইঙ্গারের খেলায় একমাত্র খেলার চেষ্টা দেখা গিয়েছে । দলের ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সেই প্রত্যাশিত ঝাঁজটাই নেই ।
ব্র্যান্ডন, লালরিনডিকা রালতে, নওরেম, আসির আখতারের খেলায় পরিচিত লাল হলুদ দাপট কোনও এক অদৃশ্য কারণে অনুপস্থিত । ফলে প্রতিটি ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে আতঙ্কের হয়ে দাঁড়াচ্ছে । আই লিগ জয়ের আশা নয়, এখন অবনমনের শঙ্কা জাঁকিয়ে বসছে । 58 মিনিটে নিখিলরাজের বাড়ানো পাস থেকে বল পেয়ে গিবসন তা বাড়িয়ে দিলে গোল করতে ভুল করেননি বিক্রম । এর আগে ও পরে কখনও কোলাডো আবার কখনও মার্কোস সুবিধাজনক জায়গা থেকে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন । নিয়মিত অনুশীলন ভালো পারফরম্যান্সের জন্য জরুরি । একই সঙ্গে জরুরি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন । যা আলেয়ান্দ্রো পরবর্তী সময়ে তলানিতে গেছে । না হলে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের 24 ঘণ্টা আগে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা বিয়ে বাড়িতে যান কী ভাবে । ইস্টবেঙ্গলের এখন সাফল্যের মশাল নয় শুধুই অন্ধকার ।