কলকাতা, 25 নভেম্বর : ফুটবল বিশ্ব রাজপুত্র হারা । মাত্র ষাট বছর বয়সে ফুটবললোকে যাত্রা দিয়েগো মারাদোনার । আর্জেন্টিনার মত লাতিন অ্য়ামেরিকার দেশকে ফুটবল বিশ্বে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বাঁ পায়ের শিল্পী ফুটবলার। দেশের হয়ে 91টি ম্যাচে চৌত্রিশটি গোল ছাপিয়ে মারাদোনা হয়ে উঠেছিলেন সমগ্র ফুটবল বিশ্বের আইকন । খেলার মাঠের জাদুকরী তো আমাদের মুগ্ধ করেছিল 1982, 1986, 1990 সালের বিশ্বকাপে । কিন্তু, ফুটবলের বাইরে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদের মুখ । যার মৃত্যুর খবরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেট আইকন বলেন, "আমার হিরো আর নেই ।"
ফুটবল সম্রাট পেলের ফুটবল নৈপুণ্য যদি সাদাকালো ছবিতে রূপকথা হয় তাহলে মারাদোনা যেন রূপকথার রঙিন জলছবি । 1978 সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও মূল দলে জায়গা হয়নি । তা নিয়ে আক্ষেপ ছিল । 1982 সালে স্পেন বিশ্বকাপে অভিষেক লাল কার্ডের যন্ত্রণা মাখা হলেও বিশ্ব আভাস পেয়েছিল ফুটবল জোতিষ্কের আবাহনের । 1986 সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপ সাক্ষী থেকে ছিল ফুটবল সূর্যের পূর্ণ বিকিরণের । যার তেজে পুড়ে গিয়েছিল ফুটবল দুনিয়ার প্রথম বিশ্বের দেশগুলো । একার হাতে বিশ্বকাপ দেশকে উপহার দিয়েছিলেন । ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর জোড়া গোল বিশ্ববন্দিত এবং নিন্দিত একইসঙ্গে । হ্যান্ড অফ গড এবং গ্রেস অফ গডের পাশাপাশি অবস্থান এরপরে আর দেখা যায়নি । 1990 সালের ইতালি বিশ্বকাপে গ্রিসের বিরুদ্ধে গোল করে ম্যাচ জিতিয়েও মারাদোনার গায়ে ড্রাগের কলঙ্ক । বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত । প্রতিভার বিচ্ছুরণ যদি তাঁর পায়ে পায়ে হেঁটে থাকে তবে মাঠের বাইরে বোহেমেনিয়াম জীবন মারাদোনাকে বারবার সমস্যায় ফেলেছে । চিরকালই পিছিয়ে পড়া দলে তাঁর নেতৃত্ব সাফল্যের রং লাগিয়েছে । আর্জেন্টিনার জুনিয়ার্স, বোকা জুনিয়ার্স, বার্সেলোনা, নেপোলি, সেভিলার, নিউ ওল্ড বয়েজ় মারাদোনার হাত ধরে সাফল্য পেয়েছে ।
কলকাতায় তাঁর পা পড়েছে । চিরকালীন বাম চিন্তাধারার সমর্থক, ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি তাঁর সমর্থন, চে গুয়েভারা উল্কি আঁকা হাত যখন ভক্তদের উদ্দেশ্য করে আন্দোলিত হত তখন তা পিছিয়ে পড়া মানুষের সঞ্জীবনী হয়ে উঠত ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলছেন "শকিং নিউজ়"। মারাদোনার সঙ্গে একমঞ্চে কিছুক্ষণ কাটানো প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বলছেন, "এই বছরটা শোকের বছর হিসেবে মনে থাকবে । প্রতিটি ক্ষেত্রে কিংবদন্তিদের নিয়মিত প্রয়াণের খবর বিষময় করেছে বছরটাকে। অল্প সময় একমঞ্চে কিছুক্ষণ থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল । অচেনা মানুষকে সেদিন আপন করে নিয়েছিলেন।" বিদেশ বসু বলছেন, "মারাদোনার চলে যাওয়া শূন্যতার জন্ম। কলকাতায় এসেছিলেন। পরিচিত হয়েছিলেন। অল্প সময়ে ভাষার ব্যবধান সরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন।" অলোক মুখোপাধ্যায়ের মুখে মারাদোনার মৃত্যু আদতে ফুটবলের সৌন্দর্যের মৃত্যু । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মোহনবাগান মাঠে ঘুরে গিয়েছেন। তাই মারাদোনার প্রয়াণ ফুটবল বিশ্বকে একসুত্রে এক লহমায় বেঁধে দিল । রাজপুত্র হারা ফুটবল বিশ্ব।